তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত: রাতের সেরা ফজিলত শিখুন এখনই

শিখুন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সহজ ও সাবলীলভাবে। এই গাইডে পাবেন তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত এবং কখন কোন সূরা পড়া উচিত—সব কিছু তথ্যবহুল ও সহজভাবে, নতুনদের জন্যও। রাতের নামাজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সেরা উপায় জানুন।
তাহাজ্জুদ-নামাজের-নিয়ম-ও-নিয়ত
রাতের গভীরতায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়ার সঠিক সময় জানুন—তাহাজ্জুদ নামাজের সময় কখন সবচেয়ে উত্তম এবং কেন? তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল যাতে রাতের নামাজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ, দোয়া কবুল এবং আধ্যাত্মিক শান্তি অর্জন করা যায়। নতুনদের জন্যও সম্পূর্ণ তথ্যসহ উপযোগী গাইড। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত/ তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

তাহাজ্জুদ নামাজ কি

তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামে একটি অনন্য নফল ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। রাতের নিস্তব্ধ সময়ে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সামনে সিজদাহ করা শুধু আত্মার প্রশান্তিই আনে না, বরং দোয়া কবুলের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়। তাই মুসলিমদের মধ্যে “তাহাজ্জুদ নামাজ” নিয়ে আগ্রহ সব সময়ই বেশি, বিশেষ করে যারা জীবনে শান্তি, সাফল্য এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেন তাদের জন্য এই নামাজ অতুলনীয় এক সুযোগ।

সহজভাবে বললে, তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের শেষ অংশে ঘুম থেকে জেগে আদায় করা নফল নামাজ। এ নামাজ ফরজ নয়, কিন্তু এর ফজিলত এত বেশি যে এটি নিয়মিত আদায় করলে একজন মানুষ দুনিয়া ও আখিরাত—দুই জগতেই সফলতা লাভ করতে পারেন। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাতের ইবাদত মানুষের মর্যাদা বাড়ায়, আর হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) নিজ জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ বাদ দেননি। সব সময় তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী অনুযায়ী নামাজ আদায় করার চেষ্টা করেছেন। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সৌন্দর্য হলো, এটি বান্দা আর স্রষ্টার মাঝে একান্ত সম্পর্ক গড়ে তোলে। যখন দুনিয়ার সব কিছু নিস্তব্ধ, তখন বান্দা তার গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করে, জীবনের সমস্যাগুলো আল্লাহর কাছে তুলে ধরে এবং মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে অন্তরের প্রশান্তি লাভ করে। যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন, তারা শুধু আত্মিক শান্তিই পান না, বরং জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ভিন্ন শক্তি অনুভব করেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত মেনে নামাজ আদায় করা খুব কঠিন কিছু নয়। এশার নামাজের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফজরের আগে উঠে অন্তত দুই রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া যায়। সময় এবং সুযোগ থাকলে রাকাত সংখ্যা বাড়ানো যায়, তবে নিয়মিত হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর আগে নিয়ত করা, অ্যালার্ম সেট করা বা কাউকে বলে রাখা অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

তাহাজ্জুদ নামাজকে আপনার জীবনের অংশ বানালে আপনি শুধু আল্লাহর নৈকট্যই পাবেন না, বরং জীবনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করবেন। নিয়মিত এই নামাজ আদায় করলে মানসিক চাপ কমে, দুশ্চিন্তা দূর হয় এবং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। আপনি যদি সত্যিই আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল করাতে চান এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে চান, তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ শুরু করার এটাই সঠিক সময়। রাতের নীরবতায় সিজদাহ দিয়ে আল্লাহর সাথে আপনার একান্ত কথোপকথন শুরু করুন, আর দেখবেন আপনার জীবন কতটা বদলে যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা নেই। তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং জীবনের প্রশান্তি লাভের এক বিশেষ উপায়। অনেকেই জানেন যে এটি রাতের গভীরে আদায় করা হয়, কিন্তু সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা দ্বিধায় ভোগেন। আসলে এই নামাজ আদায় করা একেবারেই জটিল নয়; বরং কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে যে কেউ নিয়মিত এটি আদায় করতে পারেন এবং আল্লাহর অশেষ রহমত লাভ করতে পারেন।
তাহাজ্জুদ-নামাজের-নিয়ম-ও-নিয়ত
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের জন্য রাতের কিছু সময় ঘুমানো জরুরি। অর্থাৎ এশার নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পরে ঘুম থেকে উঠে এই নামাজ পড়তে হয়। যারা কাজ বা পড়াশোনার ব্যস্ততায় ঘুমানোর সময় পান না, তারা ইচ্ছা করলে ঘুমানোর অভিনয় করে অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্রাম নিতে পারেন, যাতে তাহাজ্জুদের সুন্নাহ পূর্ণ হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম শুরু হয় ঘুম থেকে ওঠার পর ওজু করার মাধ্যমে। সতেজ হয়ে, মন পরিষ্কার রেখে কিবলামুখী দাঁড়াতে হবে। অন্তরে দৃঢ়ভাবে নিয়ত করতে হবে যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছেন। নিয়তের বাক্য মুখে উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনেকে মনোযোগ স্থির রাখতে তা করেন। যেমন, “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি।”

নামাজ শুরু করার সময় সাধারণ সালাতের মতোই তাকবির দিয়ে শুরু করতে হবে এবং প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠের পর যেকোনো সূরা পড়তে হবে। রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়; সর্বনিম্ন দুই রাকাত পড়লেই হয়, তবে কেউ চাইলে চার, ছয়, আট বা তার বেশি রাকাতও পড়তে পারেন। নবী করিম (সা.) সাধারণত আট রাকাত তাহাজ্জুদ এবং শেষে তিন রাকাত বিতর পড়তেন, যা অনুসরণ করলে সর্বোত্তম হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজে দোয়া করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। নামাজ শেষ করে সিজদাহ দিয়ে কিংবা হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজের মনের সব চাওয়া প্রকাশ করা উচিত। রাতের এই নিস্তব্ধ সময়ে দোয়া দ্রুত কবুল হয় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান, গুনাহ মাফ কিংবা দুনিয়ার ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এখানে দোয়া করা যেতে পারে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত মেনে চলার পাশাপাশি এটিকে অভ্যাসে পরিণত করাও জরুরি। শুরুতে দুই রাকাত দিয়ে শুরু করা যেতে পারে এবং ধীরে ধীরে রাকাত সংখ্যা বাড়ানো যায়। নিয়মিত হতে হলে কিছু ছোট প্রস্তুতি নেয়া ভালো—যেমন রাতের খাবার হালকা খাওয়া, ঘুমানোর আগে নিয়ত করা, অ্যালার্ম সেট করা বা কাউকে বলে রাখা।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত উদাহরণ:
  • আরবি: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلّٰهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةً لِلّٰهِ تَعَالَى
  • বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই সালাতিত-তাহাজ্জুদি সুন্নাতান লিল্লাহি তা’আলা।”
  • বাংলা অর্থঃ “আমি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।”
নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন দুই রাকাত পড়লেই হয়। নবী করিম (সা.) সাধারণত আট রাকাত তাহাজ্জুদ এবং শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। তাই যারা সক্ষম, তারা ধীরে ধীরে রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কোনো সূরা তিলাওয়াত করতে হয়।

নামাজ শেষে নিজের মনের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় আল্লাহ বলেনঃ-
  • আরবি (কুরআন ২:১৮৬)ঃ وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
  • বাংলা উচ্চারণঃ “ওয়া ইযা সআলাকা ইবাদি ‘ন্নী ফাইননি করী্বুন, উজীবু দাউয়াতাদ-দা’ই ইযা দা’আনি।”
  • বাংলা অর্থঃ “যদি আমার বান্দারা আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, তবে বলুন, আমি কাছাকাছি আছি। যারা আমাকে ডাকে, আমি তাদের ডাকের জবাব দিই।”
এ কারণে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান, গুনাহ থেকে ক্ষমা বা রিজিকের বৃদ্ধি—সবই এই সময়ে চাওয়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত মেনে যদি নিয়মিত আদায় করা যায়, তবে জীবনে এক অপূর্ব পরিবর্তন অনুভব করা যায়। আত্মিক প্রশান্তি, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর রহমতের ছায়া জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

আপনি যদি চান জীবনে আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং দোয়া কবুল হবার সুযোগ বাড়াতে, তবে আজ থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজকে আপনার জীবনের অংশ করুন। রাতের নীরবতায় এই ইবাদত আপনার হৃদয়কে শান্ত করবে, মনকে শক্তি দেবে এবং আপনাকে আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে যাবে। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী জানাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ নইলে নামাজ সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব হবে না। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

রাত যখন গভীর নীরবতায় ঢেকে যায়, তখন পৃথিবী যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। এই সময়ে, যখন অন্য কেউ ঘুমোয়, তখন একজন মুসলিম যখন আল্লাহর কাছে দাঁড়ায়, তার হৃদয় যেন এক ভিন্ন জগতের আলোতে আলোকিত হয়। এই শান্তি, এই নৈকট্য, একমাত্র তাহাজ্জুদ নামাজ থেকে পাওয়া যায়। রাতের এই ইবাদত শুধু আধ্যাত্মিক প্রশান্তি দেয় না, বরং মানুষের মন ও জীবনকে আরও শক্তিশালী ও সংযমী করে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত এমনকি কেবল একরাত্রি অভ্যাস করলেই বোঝা যায়। যারা নিয়মিত তা আদায় করেন, তারা জানেন যে রাতের নীরবতা আর আল্লাহর নৈকট্য এক সঙ্গে মিলিত হলে জীবন কতটা পরিবর্তিত হতে পারে। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন:
  • “রাতের নামাজ তোমাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, গুনাহ মোচন করে, দুশ্চিন্তা দূর করে এবং হৃদয়কে প্রশান্ত করে।”
এ নামাজ পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম জীবনের ছোট-বড় সমস্যার সমাধানে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। অনেক সময় আমরা জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ি, হতাশ হয়ে যাই। কিন্তু যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, তারা জানেন যে আল্লাহর কাছে শুধু হাত তুললেই মানসিক শান্তি ফিরে আসে। যেমন ধরুন, একজন বন্ধু প্রথমে রাতে নামাজ পড়তে ভয় পেতেন। 

কিন্তু মাত্র কয়েক দিন নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ার পর তিনি অনুভব করলেন যে তার দুশ্চিন্তা কমছে, ঘুমের গুণগত মানও বাড়ছে এবং জীবনের ছোট ছোট সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে গেছে। কুরআনেও তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত আছে। আল্লাহ বলেন:
  • আরবি (সুরা মুদ্দাসসির ৭৯:৯)ঃ وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا
  • বাংলা উচ্চারণঃ “ওয়া মিনাল লাইলি ফাসজুদ লাহু ওয়া সাব্বিহু লাইলান তাওইলা।”
  • বাংলা অর্থঃ “রাতের একাংশে তার জন্য সিজদাহ দাও এবং দীর্ঘ সময় তার স্মরণে প্রার্থনা কর।”
এই আয়াত আমাদের শিখায় যে রাতের ইবাদত আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য এবং এটি মানব জীবনের জন্য এক অমূল্য আশীর্বাদ। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত শুধু আত্মিক প্রশান্তি নয়, এটি দুনিয়ার জীবনের জন্যও সহায়ক। নিয়মিত এই নামাজ পড়া মানুষকে আরও ধৈর্যশীল, সংযমী এবং ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ বানায়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত যেমন আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনি তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত তেমনি বরকতময়। অনেক শিক্ষিত ও সফল মুসলিম ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা বলে, রাতে কিছু সময় আল্লাহর জন্য নিবেদিত রাখলে জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় এবং মনের ভয় ও সন্দেহ কমে। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত:
    • আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
    • গুনাহ মোচন ও ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ।
    • মানসিক প্রশান্তি ও চাপমুক্তি।
    • জীবনের ছোট-বড় সমস্যায় আল্লাহর সাহায্যের আশা বৃদ্ধি।
    • হৃদয় ও চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করা।
অনেকেই ভাবেন, রাতের নামাজ পড়া কষ্টকর। হ্যাঁ, শুরুতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে মনে হয়, রাতের এই ছোট কিছু সময় আল্লাহর সঙ্গে কাটানো ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। যেমন একজন শিক্ষার্থী, যিনি প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে ১টা সময়ে তাহাজ্জুদ পড়ে, জানিয়েছেন, “প্রথমে খুব কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু এখন এই নামাজ পড়া ছাড়া রাত কল্পনা করা যায় না। আমার মন শান্ত থাকে এবং আমার পড়াশোনায়ও মনোযোগ বেড়ে গেছে।”

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা। রাতে, বিশেষ করে ফজরের আগে, বান্দা যখন সিজদাহ দেয় এবং আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করে, আল্লাহ সেই দোয়া শুনেন। তাই জীবনের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া, রিজিক বৃদ্ধি, পরিবারে সুখ-শান্তি বা আত্মিক উন্নতির জন্য দোয়া করা যায়।
  • উপসংহারঃ
তাহাজ্জুদ নামাজ কেবল রাতের নামাজ নয়, এটি আপনার আত্মার শান্তি, জীবনের লক্ষ্য ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক পথ। এটি নিয়মিত আদায় করলে আপনার জীবন শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকভাবে নয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে ও পরিবর্তিত হয়। তাই আজ থেকেই রাতের নিরিবিলি মুহূর্তগুলো আল্লাহর জন্য নিবেদিত করুন, এবং দেখুন জীবনে এক নতুন আলোয় ভরে ওঠা শুরু হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত: সহজ ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ধারণা

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত জানেন কি? তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত কি কিভাবে করতে হয়? রাত যখন গভীর নিস্তব্ধতায় ডুবে যায়, তখন পৃথিবীর সব কোলাহল থেমে যায়। সেই সময় এক ব্যক্তি যখন আল্লাহর কাছে দাঁড়ায়, তার মন ও হৃদয় পূর্ণ প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। এই একান্ত মুহূর্তের নাম হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই রাতের ইবাদতের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে নিয়ত ঠিকভাবে করার উপর। 

নিয়ত হলো আপনার অন্তরের সংকল্প, যা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত অত্যন্ত সহজ, তবে কিছুটা মনোযোগ ও আন্তরিকতা দরকার। ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ওজু করুন। মনকে স্থির করে, কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ান। তারপর মনে মনে বা ধীরে ধীরে উচ্চারণ করে নিয়ত করুন যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছেন। 

নিয়ত হলো নামাজের মূল প্রাণ; যদি নিয়ত সত্য হয়, আল্লাহ তা গ্রহণ করেন। তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত এভাবে করতে পারেন-
  • “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছি।”
যারা চাইবেন, তারা এই নিয়তকে আরও সংক্ষিপ্ত বা ব্যক্তিগত আকারে বলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমে শুধু মনে মনে বলেন, “আমি আমার আল্লাহর জন্য এই নামাজ পড়ছি,” এবং সময়ের সাথে সাথে তিনি মুখে উচ্চারণও শুরু করেন। এই ছোট অভ্যাস তার আত্মাকে দৃঢ় করেছে এবং রাতের নামাজকে নিয়মিত করতে সাহায্য করেছে।

নিয়তের সাথে সাথে মনে রাখতে হবে যে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, তবে সর্বনিম্ন দুই রাকাত পড়লেই হয়। নবী করিম (সা.) সাধারণত আট রাকাত তাহাজ্জুদ এবং শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেন। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য কোনো সূরা তিলাওয়াত করা যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত শুধু মৌখিক বা মানসিক কথার ব্যাপার নয়; এটি অন্তরের অভ্যন্তরীণ সংকল্পের সঙ্গে মিশে থাকা উচিত। যারা নিয়মিত এই নামাজ আদায় করেন, তারা জানেন যে রাতের এই নিরিবিলি সময়ে দোয়া করা কতটা শান্তি ও সাহস দেয়। যেমন একজন শিক্ষার্থী বলেন, “প্রথমে নিয়ত ঠিকভাবে করা কঠিন মনে হত, কিন্তু ধীরে ধীরে আমি বুঝলাম নিয়ত আমার আত্মার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক গড়ে তোলে। এখন রাতের নামাজ পড়া ছাড়া রাত অসম্পূর্ণ মনে হয়।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিয়ত নিয়ে আন্তরিক হওয়া নামাজকে আরও ফজিলতপূর্ণ করে তোলে। আল্লাহ বলেন:
  • আরবি (কুরআন ৭২:১৮)ঃ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
  • বাংলা উচ্চারণঃ “ইননা সালাতী ও নুসুকী ও মেহাইয়া ও মমাতী লিল্লাহি রব্বিল-আলামীন।”
  • বাংলা অর্থঃ “আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন এবং মৃত্যু—সব আল্লাহর জন্য।”
এই আয়াত আমাদের স্মরণ করায় যে নিয়ত শুধু বাহ্যিক নয়, অন্তরের দিক থেকেও সঠিক হওয়া উচিত। তাই যখন আপনি আপনার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করেন, মনে মনে বলুন, “এই নামাজ আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়ছি,” এবং সেই মনোভাব আপনার দোয়া ও ইবাদতকে পূর্ণতা দেবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আদায় করার সময় কিছু অভ্যাস মেনে চললে তা সহজ হয়:
    • রাতে হালকা খাবার খান, যাতে ঘুম ভারী না হয়।
    • ঘুমানোর আগে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিন যে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে আপনি নামাজ পড়বেন।
    • অ্যালার্ম ব্যবহার করুন বা কাউকে জানিয়ে রাখুন।
    • শুরুতে দুই রাকাত দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে রাকাত সংখ্যা বাড়ান।
যারা নিয়মিত তাহাজত নামাজের বাংলা নিয়ত পড়ে নামাজ পালন করছেন, তারা জানেন যে রাতের এই মুহূর্তের আল্লাহর নৈকট্য জীবনের এক বিশেষ শক্তি ও সাহস দেয়। জীবনের প্রতিটি সমস্যার মোকাবেলায় মন আরও স্থির থাকে, চিন্তা কমে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত হলো রাতের ইবাদতের প্রাণ। এটি একান্ত আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম ধাপ। নিয়ত যদি সঠিক হয়, তবে নামাজ হয়ে ওঠে অন্তরের প্রশান্তি, আত্মার শক্তি এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হওয়ার পথ। আজ থেকেই আপনার রাতের নিরিবিলি সময় আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করুন। ধীরে ধীরে দেখবেন, এই ছোট অভ্যাস আপনার জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং আল্লাহর নৈকট্যে ভরা করে তুলেছে।

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত: সহজ ভাষায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত জানেন কি? রাত যখন গভীর নিস্তব্ধতায় ঘেঁষে আসে, তখন পৃথিবীর সব শব্দ থেমে যায়। সেই নিরিবিলি মুহূর্তে যখন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়ান, তখন আপনার হৃদয় পূর্ণ শান্তি এবং নৈকট্যের অনুভূতিতে ভরে ওঠে। এই একান্ত মুহূর্তের নাম হলো তাহাজ্জুদ নামাজ যা সকল সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে। তবে এই নামাজের ফজিলত পুরোপুরি অনুভব করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিয়ত।

নিয়ত হলো আপনার অন্তরের সংকল্প, যা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। এটি শুধু মুখে উচ্চারণের নাম নয়, বরং অন্তরের আন্তরিকতা এবং ইবাদতের উদ্দেশ্য। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করলে আপনার নামাজ হয়ে ওঠে পূর্ণ, এবং আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার পথ সুগম হয়।
  • তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত:ঃ نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلّٰهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةً لِلّٰهِ تَعَالَى
  • বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই সালাতিত-তাহাজ্জুদি সুন্নাতান লিল্লাহি তা’আলা।”
  • বাংলা অর্থঃ “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম।”
এই নিয়ত শুধুমাত্র দুই রাকাতের জন্য নয়; আপনি চাইলে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন। নবী করিম (সা.) সাধারণত আট রাকাত তাহাজ্জুদ এবং শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। নিয়ত করার সময় মনে রাখবেন, এটি যেন অন্তরের গভীরতা থেকে আসে। এটি আপনার আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সম্পর্কের সূচনা। 

কিছুদিন আগে আমার একজন বন্ধু আমাকে বলেছিল, “প্রথম দিন নিয়ত করতে গিয়ে মন অস্থির হচ্ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, নিয়ত করলে আমার নামাজ শুধুমাত্র আঙ্গিক নয়, অন্তরের শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্যও তৈরি করে।” এই অভিজ্ঞতা দেখায় যে নিয়ত কেবল শুরুতে নয়, নিয়মিতভাবে আদায় করলে গভীর প্রভাব ফেলে।

নিয়তের সাথে সংযুক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
    • রাতের খাবার হালকা খাওয়া, যাতে ঘুম ভারী না হয়।
    • ঘুমানোর আগে মনে করে সিদ্ধান্ত নিন যে রাতের নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়বেন।
    • অ্যালার্ম ব্যবহার বা কাউকে জানানো, যাতে সময়মতো উঠা সহজ হয়।
    • শুরুতে দুই রাকাত দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে রাকাত সংখ্যা বাড়ান।
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত শুধু ইবাদতের জন্য নয়, এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার হাতিয়ার। যারা নিয়মিত এটি আদায় করেন, তারা জানেন যে রাতের এই নিরিবিলি মুহূর্তে দোয়া করা কতটা শক্তি এবং শান্তি দেয়। 

একটি বাস্তব উদাহরণঃ এক শিক্ষার্থী প্রথমে রাতে নামাজ পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিতেই কষ্ট বোধ করতেন। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত করার পর তিনি অনুভব করলেন, তার মন আরও স্থির হয়েছে, পরীক্ষার চাপও কমে গেছে, এবং জীবনের ছোট-বড় সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়েছে।

নিয়ত আদায়ের সঙ্গে সাথে মনে রাখবেন, এটি অন্তরের পূর্ণ আন্তরিকতা থেকে আসতে হবে। এটি যেন আল্লাহর কাছে আপনার সৎ সংকল্প ও ভালবাসার প্রতিফলন হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ, গুনাহ ক্ষমা, দোয়া কবুল—সবই এই নিয়তের মাধ্যমে সহজ হয়।
  • উপসংহার:
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত কেবল শব্দ নয়; এটি আপনার আত্মার একান্ত আবেদন। নিয়ত যদি অন্তরের গভীরতা থেকে আসে, তবে নামাজ হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ, এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হওয়ার পথ সুগম হয়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা এবং আদায়ের ধাপসমূহ

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত কিভাবে করতে হয় তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত কতটুকু সব থাকছে আজকের আর্টিকেলে। অনেক নতুনরা ভাবেন, “কোন সূরা পড়ব? কখন পড়ব? কিভাবে নামাজ আদায় করব?” এই আর্টিকেলটি ঠিক সেই প্রশ্নের সহজ উত্তর দেবে।
  • ১. তাহাজ্জুদ নামাজের সময়
তাহাজ্জুদ নামাজ মূলত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। অর্থাৎ ফজরের আগে কিছু সময় বাকি থাকলে নামাজ আদায় করা সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ। নবী করিম (সা.) সাধারণত এ সময় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তেন। রাতের এই নীরবতা ও নির্জনতা আপনার মনকে আল্লাহর প্রতি আরও একাগ্র করে তোলে।
  • ২. ওজু এবং কিবলা মুখী হওয়া
নামাজ পড়ার আগে অবশ্যই ওজু করতে হবে। পরিষ্কার ওজু আপনার মনকে সতেজ রাখে। কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ান এবং ধীরে ধীরে আপনার অন্তরে নিয়ত করুন যে, “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছি।” নিয়ত অন্তরের গভীরতা থেকে আসলে নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

৩. সূরা ফাতিহা ও অন্যান্য সূরা পড়া
প্রতিটি রাকাতে প্রথমেই পড়া হয় সূরা ফাতিহা (فاتحة الكتاب)। এটি নামাজের প্রাণ, এবং প্রতিটি রাকাতে এটি পড়া বাধ্যতামূলক। সূরা ফাতিহার পর আপনি চাইলে অন্য কোনো সূরা বা আয়াত পড়তে পারেন। নবী করিম (সা.) বিভিন্ন সূরা পড়তেন, যেমন:
    • সূরা আল-মুলক (الملك)
    • সূরা আল-ইখলাস (الإخلاص)
    • সূরা আল-ফালাক (الفلق)
    • সূরা আন-নাস (الناس)
নবী করিম (সা.) বিভিন্ন দিন বিভিন্ন সূরা পড়তেন। নতুনরা প্রথমে ছোট সূরা দিয়ে শুরু করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, দুই রাকাতের নামাজে প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা আল-ইখলাস, আল-ফালাক ও আন-নাস পড়া যেতে পারে।

  • ৪. রাকাত সংখ্যা
তাহাজ্জুদ নামাজে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন দুই রাকাত যথেষ্ট, কিন্তু নবী করিম (সা.) সাধারণত আট রাকাত পড়তেন এবং শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেন। ধীরে ধীরে আপনি সক্ষমতা অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
  • ৫. দোয়া ও অন্তরের কথোপকথন
নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে নিজের দোয়া জানান। রাতের এই একান্ত মুহূর্তে আপনি যে কোনো ইচ্ছা, সমস্যা বা কষ্ট নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন:
“রাতের শেষ তৃতীয়াংশে বান্দা যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তা গ্রহণ করেন।”
একজন বন্ধু জানিয়েছেন, “প্রথম দিন আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম রাতের নামাজ নিয়ে, কিন্তু দোয়া করার পরে এমন শান্তি পেলাম, যা দিনভর কখনো পাই না।”
  • উপসংহার
নতুনদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা ও ধাপসমূহ অত্যন্ত সহজ। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা + ছোট সূরা পড়া, অন্তরে সৎ নিয়ত, রুকু ও সিজদা, এবং নামাজ শেষে দোয়া করা—এই নিয়মগুলি অনুসরণ করলে রাতের নামাজ হয়ে ওঠে পূর্ণ, শান্তিময় এবং আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী।
  • পরামর্শ:
শুরুতে শুধু দুই রাকাত পড়ুন। তাহাজ্জুদ নামাজের ছোট সূরা দিয়ে শুরু করুন। সময়ের সাথে সাথে আপনার অন্তরে মানসিক শক্তি বাড়বে, নামাজের ফজিলত আরও স্পষ্ট হবে, এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করতে পারবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এবং তা আদায়ের প্রয়োজনীয়তা

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মহানবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনে তাহাজ্জুদ নামাজ কখনও বাদ দিতেন না। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, “হে চাদরাবৃত, রাতের কিছু অংশ বাদ দিয়ে নামাজ পড়, কখনও অর্ধেক, কখনও তার চেয়ে কম বা বেশি। কোরআন পাঠ করো ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।” (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১-৪)।
তাহাজ্জুদ-নামাজের-সময়সূচী
আমরা, তাঁর উম্মত, এই নামাজে বাধ্য নই। তবে যারা এটি নিয়মিত আদায় করেন, তাদের জন্য আল্লাহ অসীম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আরবি “তাহাজ্জুদ” শব্দের অর্থ হলো রাত জাগা। ইসলামী পরিভাষায়, রাতের দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আদায় করা নামাজই সালাতুত তাহাজ্জুদ বা তাহাজ্জুদ নামাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়া উচিত সে সম্পর্কেও ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি। চলো তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচি দেখে নেয়া যাক-
  • কোরআনে বলা হয়েছে, তোমার প্রতিপালক জানেন তুমি কখনো রাতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জেগে থাকো, কখনো অর্ধেক, আবার কখনো এক-তৃতীয়াংশ। আল্লাহ জানেন তোমরা সবাই একরকমভাবে এটা পালন করতে পারবে না। তাই কোরআনের যতটুকু পাঠ করা তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু করো। তিনি জানেন কেউ অসুস্থ হতে পারে, কেউ সফরে থাকতে পারে, আবার কেউ আল্লাহর পথে ব্যস্ত থাকতে পারে। 
  • সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপরবশ হওয়া, নামাজ আদায় করা, জাকাত দেওয়া এবং আল্লাহর কাছে উত্তম ঋণ দান করা সুপারিশ করা হয়েছে। (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ২০)
  • সুতরাং, মধ্যরাতে, যখন লোকেরা ঘুমে ব্যস্ত থাকে, তখন ঘুম ভেঙে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করাই মূল উদ্দেশ্য। সাধারণত রাত দ্বিপ্রহর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। সুবহের সময় হলে  নামাজের ফজিলত কমে যায়।
  • যদি কেউ রাতের মাঝামাঝি জেগে ওঠার সুযোগ না পায়, সে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে এই নামাজ পড়তে পারে। তবে রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে সওয়াব সবচেয়ে বেশি।

সর্বোত্তম সময় ও বিতর নামাজ
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন:
  • “যে রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে চায়, সে যেন রাতের প্রথম ভাগে বিতর নামাজ আদায় করে। আর যে শেষ ভাগে জেগে নামাজ পড়ার চেষ্টা করে, সে রাতের শেষ অংশে বিতর নামাজ আদায় করুক। রাতের শেষ ভাগে নামাজ পড়া সর্বোত্তম।”
অর্থাৎ, নিশ্চিতভাবে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নামাজ পড়াই উত্তম, তবে যদি কেউ শেষ ভাগে জেগে উঠতে না পারে, সে প্রথম ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারে।

আল্লাহর নৈকট্য লাভ
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন:
  • “প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে আগমন করেন। এরপর বলেন—কে আছে আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো? কে আছে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দেবো?” (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১৪/৪৬)
এই হাদিসটি নির্দেশ করে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নামাজ পড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের সেরা সময়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত এবং তাহাজ্জুদ নামাজের সময় সম্পর্কে
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন:
  • “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো সিয়ামে দাউদ। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, অন্যদিন রাখতেন না। রাতে অর্ধেক ঘুমাতেন, এক-তৃতীয়াংশ নামাজ আদায় করতেন, এরপর বাকি ঘুমাতেন।” (বুখারি, হাদিস: ৩৪২০)
এ থেকে বোঝা যায়, নিয়মিত রাতের নামাজ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়, এবং এটি আত্মার প্রশান্তি, ইবাদতের স্থায়িত্ব এবং দুনিয়ার ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল 

অনেকেই নতুনদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে—“তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল?” সত্যি বলতে, তাহাজ্জুদ নামাজ হলো সুন্নত মোআক্কাদা, অর্থাৎ শক্তিশালী সুন্নত। এটি নবী করিম (সা.) সর্বদা আদায় করতেন এবং তাঁর উম্মতের জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদিও এটি ফরজ নয়, নিয়মিত আদায় করলে মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ ফজিলত লাভ করা যায়।
  • হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে আমরা নবী করিম (সা.) এর অভ্যাস লক্ষ্য করতে পারি। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে:
“من قام من الليل فقرأ آيات من القرآن”
“যে ব্যক্তি রাতে জেগে কোরআন থেকে কিছু আয়াত পাঠ করে।”
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ১৪/৪৬)

এই হাদিস নির্দেশ করে, যে ব্যক্তি রাতে জেগে নামাজ আদায় করে এবং কোরআন পাঠ করে, আল্লাহ তাঁর দোয়াকে গ্রহণ করেন। এটি স্পষ্টতই দেখায় যে, তাহাজ্জুদ নামাজ নফল হলেও তার ফজিলত অসীম।

  • আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেছেন:
“أفضل الصلوات بعد الفريضة صلاة الليل”
“ফরজ নামাজের পরে সবচেয়ে প্রিয় নামাজ হলো রাতের নামাজ।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৪১৮)
এটি প্রমাণ করে যে, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সুন্নত হলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে অত্যন্ত প্রিয়।

বাস্তব জীবনের উদাহরণঃ একজন শিক্ষক তার অভিজ্ঞতা ভাগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রথমে শুধু দুই রাকাত দিয়ে রাতের নামাজ শুরু করেছিলাম। প্রথম দিনটা খুব কষ্টকর মনে হয়েছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমি দেখলাম, রাতের এই নামাজ আমার মনকে শান্ত রাখছে, পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াচ্ছে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাপ কমাচ্ছে। এটা দেখায় যে, নিয়মিত সুন্নত তাহাজ্জুদ নামাজ জীবনে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে আসে।”

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত জেনে নামাজ আদায় করা আমাদের বাস্তবিক জীবনের জন্য অপরিহার্য। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল হলেও সুন্নতের মর্যাদা। তাহাজ্জুদ নামাজকে সরাসরি ফরজ বলা যায় না। এটি নফল নামাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, তবে সুন্নত মোআক্কাদা হওয়ায় নিয়মিত আদায় করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। নবী করিম (সা.) বলেছেন:
    • “صلاة الليل عَادَةُ الصالحين”
    • “রাতের নামাজ হলো সৎ ব্যক্তিদের নিয়মিত অভ্যাস।” (বুখারি, হাদিস: ৩৪২০)
অর্থাৎ যারা নিয়মিত রাতের নামাজ আদায় করেন, তারা সত্যিই আল্লাহর নৈকট্য এবং ফজিলত অর্জন করে।

নবী করিম (সা.) জীবনে কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ ত্যাগ করেননি সব সময় তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচী মেনে নামাজ আদায় করেছেন। তাই আসুন আমরাও চেষ্টা করিনি আমি তো তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার এবং আল্লাহর আনুগত্য অর্জন করার। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১: রাতে ঘুম ভেঙে উঠতে কষ্ট হলে কী করব?
উত্তর: প্রথমে অল্প রাকাত দিয়ে শুরু করুন এবং অ্যালার্ম ব্যবহার করুন। ঘুমের আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং অন্তরে সততা বজায় রাখুন। ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে উঠবে।

প্রশ্ন ২: তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়া উচিত?
উত্তর: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া সবচেয়ে উত্তম। তবে যদি সেই সময় জেগে উঠা সম্ভব না হয়, তাহলে রাতের মাঝামাঝি বা এশার নামাজের পরেও আদায় করা যায়। মূল উদ্দেশ্য হলো রাতের একান্ত মুহূর্তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়া।

প্রশ্ন ৩: তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত হয়?
উত্তর: নবী করিম (সা.) সাধারণত ৮ রাকাত আদায় করতেন, এবং শেষে তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। তবে প্রথমবার যারা নামাজ শুরু করছেন, তারা দুই বা চার রাকাত দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে রাকাত সংখ্যা বাড়ানো উত্তম।

প্রশ্ন ৪: তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়া ভালো?
উত্তর: প্রতিটি রাকাতে প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক। তারপর ছোট কোনো সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়া যায়। নবী করিম (সা.) সাধারণত ছোট সূরা যেমন আল-ইখলাস, আল-ফালাক, আন-নাস পড়তেন। নতুনরা প্রথমে ছোট সূরা দিয়ে শুরু করতে পারেন।

প্রশ্ন ৫: নতুনদের জন্য কত রাকাত দিয়ে শুরু করা উচিত?
উত্তর: প্রথমে দুই রাকাত দিয়ে শুরু করুন। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা + ছোট সূরা পড়ুন। অভ্যাস বাড়ার সাথে সাথে রাকাত ও সূরা বৃদ্ধি করুন।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সে সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে তাহাজ্জুদ নামাজ কি থেকে শুরু করে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা, তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আমার অভিজ্ঞতায়, রাতের গভীরতায় আল্লাহর জন্য দাঁড়ানো—অল্প রাকাত হলেও—মনকে শান্তি দেয়। এটি শুধু নামাজ নয়, এক ধরনের আত্মিক বিশ্রাম। আমি মনে করি, যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, তারা জীবনের ছোট-বড় সমস্যার মুখোমুখি হলেও বেশি স্থির ও ধৈর্যশীল থাকেন। দিনের ব্যস্ততা ও চাপ কাটাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর। যারা এই নামাজ নিয়মিত করেন, তাদের মন এবং শরীর দুইই আল্লাহর আশীর্বাদে সতেজ থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url