ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম-নবীজির (সা.) দেখানো পদ্ধতিতে জানুন
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? ঈদের সকাল শুরু হোক তাকবীরের
গর্জনে। এই নামাজ শুধুই ইবাদত নয় বরং ভালোবাসার প্রকাশ্য। ঈদের নামাজ মানেই
খুশির মিলন মেলা ৬টি তাকবীর, ২ রাকাত আর একতা এবং ঈমানের মহা উৎসব। তাই বিস্তারিত
জানুন ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে, ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত যা আমাদের ত্যাগ
ও আনুগত্যের চেতনা কে জীবন্ত করে তুলবে।
ঈদের নামাজ ইসলামের অনন্য সৌন্দর্যের প্রকাশ তাই জেনে নিন ঈদুল আযহার সম্ভাব্য
তারিখ। ঈদের মাঠে দাঁড়িয়ে বলা প্রতিটি আল্লাহু আকবার আমাদের ঐকের প্রতীক। কত
সুন্দর এক নিয়মে সজ্জিত এই বিশেষ নামাজ আর এই নামাজকে আরো বরকতময় করে তোলার
জন্য বিস্তারিত জেনে নিন ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম/ ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ
ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত
ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। ঈদুল আযহার নামাজ একেবারেই আলাদা
একেবারেই স্পেশাল। কেননা এতে না আছে আজান, আর না ইকামত। শুধু আছে তাকবির আর খুশির
আবহ। ঈদুল আযহার নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ঈদ আসে মুসলিমদের দ্বারে
দ্বারে মহা আনন্দের বার্তা নিয়ে।
কল্যাণ ও শান্তির
সাথে বিগত দিন সমূহের সকল ব্যথা-বেদনাকে ভুলিয়ে দিতে। যা মুসলিম উম্মাহোর জন্য
অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ। যারা এটি পালন করে না তারা অবশ্যই গুনাগার হবে। মুসলমানদের
দুইটি উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। এটি বছরে শুধুমাত্র একবারই পালন করা হয় সেই
দিনটি হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখে। ঈদ অর্থ আনন্দ। আর এই আনন্দের দিনটি প্রতিবছর
বারবার ফিরে আসে বলেই এর নাম রাখা হয়েছে ঈদ। ঈদুল আযহাকে কুরবানী ঈদও বলা হয়ে
থাকে।
যারা ঈদের দিনে সময় মত ঈদগাহ ময়দানে যায় এবং মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্য ইবাদত করে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করে নেন। ঈদুল আযহা
নামাজের নিয়ম এবং ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে আলোচনা করব তার আগে চলুন ঈদুল
আযহা নামাজের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
- সুন্নতে মুয়াক্কাদাহঃ ঈদুল আযহার নামাজ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতভাবে আদায় করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বসহ করে পালন করতে বলেছেন। এই নামাজ ফরজ না হলেও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অর্থাৎ এটি একটি জোরালো সুন্নত যা কোন ওজর ছাড়া পরিত্যাগ করা অনুচিত।
- তাকবীর ও আল্লাহর প্রশংসাঃ ঈদুল আযহা এই নামাজের মধ্যে অতিরিক্ত তাকবীর রয়েছে। ঈদুল আযহার নামাজে ইমাম ও মুসল্লীরা ছয়টি অতিরিক্ত তাকবীর দিয়ে নামাজ শুরু করেন যা আল্লাহর মহিমা ও গৌরব প্রকাশের প্রতীক।
- ভ্রাতৃত্ববোধ মিলনের প্রতীকঃ ঈদের নামাজ মুসলমানরা অনেক বড় জায়গায় জামাতে আদায় করে। সকলে একসাথে সেই দিন একত্রিত হয় ফলে মুসলিম সমাজের ঐক্য ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার বন্ধনকে দিঢ় হয়ে ওঠে।
- কুরবানীর প্রস্তুতি ও তাওহীদের প্রকাশঃ ঈদুল আযহার নামাজের পর মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করেন। এই ইবাদত নবী ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের ও অনুগত্তের প্রতীক। এবং নামাজের মাধ্যমে তার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
- গুণাহ মাফের সুযোগঃ ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত অন্যতম একটি হলো গুনাহ মাপের সুযোগ তৈরি হওয়া। কেননা ঈদের নামাজ এবং তার পরবর্তী ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেন। হাদিসে এসেছে যখন ঈদের দিন হয় ফেরেশতা গণ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে যান এবং বলেন, 'হে মুসলিম সমাজ চলো তোমাদের রবের দিকে, যিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাদের অনেক কিছু দান করেছেন।' (তাবারানী )
- সাওয়াব ও পুরস্কারঃ ঈদের নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি বিপুল সোয়াবের অধিকারী হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তিদের নামাজে শরিক হয় এবং খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনে সে দুটি ঈদের জন্য পুরস্কৃত হয়।"
- গরিব মিসকিনের খুশিতে শরিক হওয়ার উপলক্ষঃ ঈদের নামাজ আদায়ের আগে সাদাকাতুল ফিতর বা ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আযহার উপলক্ষে পশু কোরবানি করে গরিবদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হয়। এটি মুসলিম সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করে। ঈদুল আযহার এই দিনে সবথেকে ফজিলতপূর্ণ আমল হচ্ছে কোরবানি করা।
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কোরবানির দিনে কোন আদম সন্তানের কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা থেকে আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় কোন আমল নেই।" ঈদুল আযহার নামাজ শুধু একটি ইবাদত নয়। এটি একটি সম্মিলিত আত্মশুদ্ধির মাধ্যম। ত্যাগের শিক্ষা, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং সামাজিক ঐকের এক অনন্য নিদর্শন।
এ নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার ঈমান, তাকওয়া ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর দরবারে
প্রকাশ করেন। ঈদের নামাজ শেষ করে মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্যে
বলতে থাকেন, হে আমার প্রিয় বান্দা-বান্দীরা আমি আজকের এই দিনটিকে তোমাদের সব
পাপসমূহকে পূণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিলাম। সুতরাং তোমরা নিষ্পাপ হয়ে বাসায়
ফিরে যাও।
আশা করছি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত কতটুকু ঈদুল আযহা
নামাজের গুরুত্ব এবং তাৎপর্যের বিস্তরতা। এছাড়াও আলোচনা করব ঈদুল আযহার সুন্নত
সমূহ এবং ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে তাই বিস্তারিত জানতে সাথেই
থাকুন।
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম। ত্যাগ ও উৎসর্গপূর্ণ ঈদুল আযহার নামাজ মুসলিমদের জন্য
একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইবাদত, যার নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও রীতি
রয়েছে। ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে জানার আগে নিচে ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম ধাপে ধাপে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা
হলো-
ঈদের নামাজ আদায় করা প্রত্যেকটা মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
হল ঈদের নামাজ একাকি না পড়ে খোলা জায়গায় সকলে একত্রিত হয়ে আদায় করা সুন্নত।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ
আদায় করেছেন এবং অন্যদেরও তা আদেশ করেছেন।
তবে একান্তই যদি কোন খোলা জায়গা না থাকে সেক্ষেত্রে ঈদের নামাজ মসজিদেও পড়া
যাবে। ঈদের নামাজ জামাতের সাথে পড়া সর্বোত্তম। জামাত ছাড়া কোনভাবেই ঈদের নামাজ
আদায় হবে না। জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য যেমন অনেকগুলো শর্ত থাকে একইভাবে ঈদের
নামাজ আদায় করতেও শর্ত প্রযোজ্য। এই নামাজ আদায় করার জন্য কোন আজান এবং ইকামত
প্রয়োজন নেই।
কিন্তু জুম্মার নামাজের মত করে উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলোয়াত করে এই ঈদের নামাজ
আদায় করা হয়। তবে এক্ষেত্রে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিতে
হয়। ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম একেবারে সহজ ভাষায় ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো যেন
একজন সাধারন মানুষ যিনি আগে নামাজ পড়েনি বা ঈদের নামাজ পড়তে পারেন না তিনিও
বুঝতে পারবেন কিভাবে ঈদুল আযহার নামাজ পড়তে হয়-
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম
- সময় ঃ
ঈদের নামাজের সময় ফজরের পর থেকে শুরু হয়ে যায় সূর্য এক বর্ষা উচু হলে অর্থাৎ
যখন সূর্য উঠতে একটু সময় হয়ে যায় ( প্রায় 15 থেকে 20 মিনিট পর) তখন ঈদের
নামাজ শুরু হয়। এই নামাজ যোহরের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। এই নামাজ পড়া হয়
সকলে একত্রিত হয়ে জামাতে সহকারে ঈদগাহ ময়দানে বা মসজিদে ইমামের পিছনে।
- নামাজের কাঠামোঃ
ঈদুল আযহার নামাজ বছরে ১ বার জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পড়া হয়। ঈদের নামাজ দুই
রাকাত। তবে সাধারণ নামাজ থেকে এটা কিছুটা ভিন্ন। কারণ এতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর
রয়েছে।
নামাজের ধাপসমূহ নিম্নরূপ-
প্রথম রাকাত
প্রথম রাকাত
- নিয়ত করুনঃ নিয়ত মনে মনে বলতে হবে। আমি ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ৬ তাকবীর সহ একমাত্র আল্লাহর জন্য ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে আদায় করছি।
- ইমাম আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বলবেন মুসল্লিরাও বলবেন এবং হাত বাঁধবেন বুকের উপরে।
- অতঃপর ইমাম অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিবেন প্রতিবার আল্লাহ একবার বলে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন। আবার আল্লাহু আকবার বলে একইভাবে করুন। তৃতীয় আবারও আল্লাহু আকবার বলুন এবং একইভাবে করুন। চতুর্থ তাকবীরে কিরাত শুরু হবে।
- আপনি চুপ থাকবেন নামাজে মনোযোগ দিবেন। এরপর ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়ে রুকু সিজদা সম্পন্ন করে দ্বিতীয় রাকাতে উঠবেন।
দ্বিতীয় রাকাত-
- দ্বিতীয় রাকাতে উঠে ইমাম প্রথমে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা মিলিয়ে আবার অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিবেন ঠিক আগের মত হাত উঠিয়ে ছেড়ে দিবেন।
- এরপর চতুর্থ তাকবীরে আল্লাহু আকবার বলার সময় ইমাম রুকুতে যাবেন আপনিও রুকুতে যাবেন এই তাকবীরে হাত উঠানো হবে না।
- রুকু সিজদা শেষ করে তাশাহুদ ও সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।
খুতবা
- ঈদের নামাজের পরে একটি খুতবা প্রদান করা হয়। ইমাম দাঁড়িয়ে খুতবা দেবেন। এটা শোনা ওয়াজিব নয় বরং সুন্নত। তবে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। ঈদুল আযহার খুতবার মূল বিষয়বস্তু হয় কোরবানির গুরুত্ব তাওহীদ তাকওয়া এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ব।
ঈদুল আযহার তাকবীরঃ ঈদ উল আযহার একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিক হল তাকবীর বলা। এটি ৯
জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ আসরের পর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পরে বলা
ওয়াজিব।
- উচ্চারণঃ
"আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু
আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।"
- অর্থঃ
আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই আল্লাহ মহান আল্লাহ মহান সব
প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য।
সংক্ষেপে মনে রাখুনঃ
- দুই রাকাত নামাজ
- 6 টি অতিরিক্ত তাকবীর
- খুতবা নামাজের পরে
- ঈদের নামাজে কোন আজান বা ইকামত নেই
- ইমামের পিছনে জামাতে পড়তে হয়।
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে কিভাবে করতে হয় তা নিচে সঠিকভাবে উচ্চারণসহ
দেয়া হল যাতে আপনি সরাসরি আরবিতে পড়তে ও বুঝতে পারেন- আর কদিন পরেই মুসলিমদের
সব থেকে বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পালিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। আর এই দিনের
প্রধান কাজই হলো নামাজ আদায় করা। তাই সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন ফজরের
নামাজ পড়ুন অতঃপর ঈদগাহ ময়দানে নামাজের উদ্দেশ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যাত্রা শুরু করুন-
আর এই জন্য আমাদের ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত জানাও জরুরী। তবে অনেকেই হয়তো জানেন
না ঈদ-উল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে। আবার এই নিয়ত কি শুধু আরবিতে করতে হয়
নাকি বাংলাতে করলেও হয় কিভাবে করতে হবে। ইতিমধ্যে ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম
দেখেছেন তাই চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত-
- উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন আন উসুলিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকাতাইনি সালাতাল ঈদ সুন্নাহতান
মুস্তাকবিলাল কিবলাহ মামুমান/ইমামান আল্লাহু আকবার।
- অর্থ ( বোঝার সুবিধার জন্য) ঃ
আমি নিয়ত করছি ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়ার জন্য ছয় তাকবীরসহ কাবার দিকে
মুখ করে এই ইমামের অনুসরণে আল্লাহর উদ্দেশ্যে।
- নিয়তের সময় করণীয়ঃ
নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট মুখে পড়া জরুরি নয়, তবে মুখে পড়লে ভালো। নামাজ
শুরু করার সময় তাকবীরে তাহরিমার আগে নিয়ত করুন।
নিয়ত ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নিয়ত আরবিতেই করতে হবে
এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে নিয়ত হল মনস্থির করা বা
ইচ্ছা করা। এটি মনে মনে করলেই যথেষ্ট মুখে উচ্চারণ করা সুন্নত নয়। কিন্তু কেউ
করলে দোষ নেই। অর্থাৎ আপনি যদি মনে মনে বলেন বা ভাবেন আমি ঈদের নামাজ পড়ছি
আল্লাহর উদ্দেশ্যে এটাই যথেষ্ট। মুখে আরবিতে বা বাংলায় বললেও সমস্যা নেই। মুখে
না বললেও নামাজ শুদ্ধ হবে।
ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ
ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ জানেন কি? ঈদুল আযহা মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ
ধর্মীয় উৎসব। যা কোরবানির মাধ্যমে ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ত্যাগ ও
আনুগত্যের স্মরণে উদযাপন করা হয়। এই দিন উম্মতের বৈশিষ্ট্য এবং দিনের প্রতি এক
উজ্জ্বল নিদর্শন। তাই আমাদের উচিত এটি দায়িত্ব এবং গুরুত্ব সহকারে সম্মানসহ
গ্রহণ করা। এই দিনে কিছু সুন্নত আমল করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয় রয়েছে যা পালন
করলে এই মহান দিনটি আরও বরকতময় হয়ে ওঠে।
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম এবং ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে ইতিমধ্যে আলোচনা
করেছি। এছাড়াও জানাবো ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ কবে জানাবো। চলুন তার আগে জেনে
নেয়া যাক ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ-
- গোসল করাঃ ঈদের দিন সকালে নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত। পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য ইসলামের একটি গুণ।
- উত্তম পোশাক পরা ও আতর ব্যবহার করাঃ সবচেয়ে ভালো পোশাক ( যদি নতুন হয় তাহলে উত্তম) পড়া সাথে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা পুরুষদের জন্য সুন্নত।
- কুরবানীর পশু যাবেহ করার আগে কিছু না খাওয়াঃ ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু খেয়ে ঈদগাহ ময়দানে যাওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদুল আযহার দিনে খাওয়ার আগে কুরবানী করা উত্তম। ইমাম তিরমিজি ও ইবনে মাজাহে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজের আগে কিছু খেতেন না।
- ঈদগাহে গমনঃ ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ অন্যতম একটি হলো ঈদগাহে গমন করা। সম্ভব হলে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে গিয়ে জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময় ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতেন।
- এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসাঃ ঈদের নামাজে যাওয়ার সময় একটি রাস্তা ব্যবহার করা এবং ফিরে আসার সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা সুন্নত ( সহীহ বুখারী ) ।
- তাকবির বলাঃ ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ অন্যতম আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতপূর্ণ সুন্নত হচ্ছে তাকবীর বলা। ঈদুল আযহার সময় বিশেষ করে 9 জিলহজ ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসরের পর পর্যন্ত তাকবীরে তাসরিক বলা ওয়াজিব।
- ঈদের নামাজ আদায় করাঃ ঈদের নামাজ দুই রাকাত অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর সহ। ঈদের নামাজের পরে ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা সুন্নত।
- কুরবানী করাঃ সামর্থ্যবানদের জন্য ঈদুল আযহার অন্যতম সুন্নত কাজ হলো কোরবানি। কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ নিজের আত্মীয়-স্বজন এবং এক ভাগ গরিব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা মুস্তাহাব।
- খাবার খাওয়াঃ কোরবানির মাংস দিয়ে দিনের প্রথম খাদ্য শুরু করা সুন্নত।
- শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ পারস্পরিক ঈদের শুভেচ্ছা জানানো। সাহাবায়ে কেরাম তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম বলে সকলের মাঝে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।
ঈদ আল্লাহর দেয়া অন্যতম একটি নিয়ামত। আর নিয়ামতের চাহিদা বেশি বেশি শুকরিয়া
আদায় করা আল্লাহর আনুগত্য পালন করা। আর এই সকল দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা
প্রত্যেকটা মুসলিম উম্মাহর জন্য কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা বিশ্বের সকল মুসলিম
উম্মাহকে এই সকল সুন্নত মুস্তাহাব গুলা সঠিকভাবে পালন করার এবং রাব্বুল আলামিনের
শুকরিয়া আদায় করার তৌফিক দান করুক। এই সুন্নত সমূহ পালন করলে ঈদুল আযহার দিনটি
হবে বরকতময়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের অনুসরণে পূর্ণ।
ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ ২০২৫ জানুন
ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ ২০২৫ জানেন কি? ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে
প্রতিবছর মুসলিম বিশ্বগুলোর মাঝে অন্যরকম এক আগ্রহ উদ্দীপনা এবং পূর্ব প্রস্তুতি
বিরাজমান থাকে। ইতিমধ্যে আমরা ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ত
আরবিতে সহকারে ঈদুল আযহা নামাজের সুন্নত সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু কবে এই ঈদুল
আযহার সম্ভাব্য তারিখ ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলী নিচে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা
হলো-
বর্তমানে তো নিত্য নতুন আধুনিক প্রযুক্তর আবিষ্কার এবং জাতিরবিদ্যার
অগ্রগতির ফলে চাঁদ দেখার পূর্বাভাস আগের চেয়ে অনেক নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব
হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল আযহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা দিয়েছেন আরব আমিরাত। আগামী মাসের
৬ই জুন এই তারিখে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেই দেশের
জাতিরবিদ্যা সোসাইটি।
সাধারণভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলিতে যেই দিনে চাঁদ দৃশ্যমান দেখা যায় তারপরের
দিন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোতে চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা থাকে।
সেই হিসেবে অনুযায়ী দেখা যায়, যদি 6 জুন মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদ উদযাপিত
হয়। তাহলে বাংলাদেশ তারপরের দিনে অর্থাৎ ৭ জুন ঈদ উদযাপন করার সম্ভাবনা
রয়েছে।
ঈদ-উল-আযহার সম্ভাব্য তারিখ ২০২৫ ঃ ইসলামিক হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঈদুল আযহা
পালিত হয় দশ জিলহজ তারিখে। ২০২৫ সালের ১০ জিলহজ সম্ভাব্যভাবে শুক্রবার ৬জুন 2025
তারিখ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এই তারিখ
একদিন আগে বা পরে হতে পারে। তাই ধর্ম-মন্ত্রনালয়ের চূড়ান্তে যে সিদ্ধান্ত হবে
সেটাই শেষ কথা।
বাংলাদেশে ঈদুল আযহার সরকারি ছুটি ( ২০২৫)ঃ বাংলাদেশ সরকার ঈদুল আযহা উপলক্ষে
সাধারণত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করে থাকে। 2025 সালে সম্ভাব্য ছুটির দিনগুলো
হল-
- ৫ই জুন 2025 বৃহস্পতিবার - ঈদুল আযহার পূর্ব দিন
- ৬ জন 2025 শুক্রবার - ঈদুল আযহার দিন
- ৭ জন 2025 শনিবার - ঈদের পরের দিন
- ৮ জন 2025 রবিবার- বিকল্প ছুটি হতে পারে।
এছাড়া ৮ জুন 2025 রবিবার তারিখেও ছুটি থাকতে পারে। যা চাঁদ দেখার উপর নির্ভর
করবে। তবে ঈদের চূড়ান্ত তারিখ হবে বাংলাদেশ বা যে দেশে আপনি আছেন সেখানকার চাঁদ
দেখার উপর নির্ভর করে। ফলে এই তারিখ একদিন আগেও অথবা পরে হতে পারে।
- চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্যঃ
ঈদের চূড়ান্ত তারিখ জানা যাবে- জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার মাধ্যমে।
স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর তথ্যসূত্র অনুযায়ী।
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ ঈদুল আযহার নামাজে কয়টি তাকবীর দিতে হয়?
উত্তরঃ ঈদুল আযহার নামাজের মোট ছয়টি অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হয়- প্রথম রাকাতে
সানা পড়ার পর তিনটি অতিরিক্ত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পরে তিনটি
অতিরিক্ত তাকবীর দিতে হয়। এগুলো আল্লাহু আকবার বলে আদায় করতে হয়।
প্রশ্নঃ ঈদুল আযহার তাকবির কি?
উত্তরঃ ঈদুল আযহার তাকবির হলো 'আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।' এটি ওয়াজিব এবং পুরুষ
মহিলা সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ ঈদের নামাজে কোন সুরা পড়া সুন্নত?
উত্তরঃ ঈদের নামাজের সূরা ফাতিহার পর যেকোন সূরা পড়া যায়। তবে প্রথম রাকাতে
সূরা আলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশীয়াহ পড়া সুন্নত। তবে অন্য সুরাও পড়া
জায়েজ কিন্তু উপরোক্ত দুটি সুরা পড়া নবীজির থেকে প্রমাণিত সুন্নত।
প্রশ্নঃ ঈদের দিন দোয়া কবুল হয় কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ ঈদের দিন দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। ঈদের দিন হল ইবাদত,
শুকরিয়া ও দোয়ার দিন। হাদিসে এসেছে ঈদের দিনগুলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত
দিনগুলোর মধ্যে একটি বরং এই দিনে আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করেন। বিশেষ করে ঈদের
নামাজের আগে ও পরে এবং কুরবানীর সময় দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
প্রশ্নঃ ঈদের নামাজে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় কি?
উত্তরঃ ঈদের নামাজে রাকাত ছুটে গেলে করণীয় হল যদি কেউ ইমামের সঙ্গে ঈদের নামাজের
এক বা দুই রাকাত মিস করে তাহলে ইমাম সালাম ফেরানোর পর উঠে ছুটে যাওয়ার রাকাত বা
তাকবীর পূরণ করবে। ছুটে যাওয়া অতিরিক্ত তাকবীর গুলো আদায় করবে ঠিক ঈদের নামাজের
নিয়ম অনুযায়ী।
ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে ঈদুল আযহা নামাজের ফজিলত থেকে শুরু করে ঈদুল আযহা নামাজের নিয়ম,
ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ত আরবিতে, ঈদুল আযহার সুন্নত সমূহ, ঈদুল আযহার সম্ভাব্য
তারিখ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবার চেষ্টা করেছি।
ঈদুল আযহার নামাজ একটি আনন্দের ত্যাগের ও ইবাদতের দিন শুরু করার মহান পন্থা। এটি
একটি সম্মিলিত ইবাদত যা মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। মূলত নামাজের পর খুতবা ও
কুরবানীর মাধ্যমে এই দিনের তাৎপর্য পূর্ণতা লাভ করে।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url