সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার আগে জেনে নিন এগুলো
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক। চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা
ভাল, সুস্থ জীবনের সহজ উপায় জানুন। বর্তমান সময়ে মানুষ খাবার ও খাবারের
পুষ্টিগুণ নিয়ে বড়ই সচেতন। তাই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় এখন বেশ
জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সুপার ফুড চিয়া সিড। তাই আপনিও আপনার খাদ্য তালিকায়
চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত করুন এবং দেখুন ম্যাজিক।
আপনি কি ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম, ট্রিটমেন্ট এবং ওষুধ গ্রহণ করছেন
কিন্তু কোন রকম ফল পাচ্ছেন না? তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানোর জন্য
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময়
জেনে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা/ চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
- চিয়া সিড কি অজানা কিছু তথ্য জানুন
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
- চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময় কখন
- ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
- রূপচর্চা ও চুলের যত্নে চিয়া সিড এর ব্যবহার
- চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
- চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
- সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড কি? সিংহভাগ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের সকালটাই শুরু হয় চিয়া সিড এর
পানি খেয়ে। কিন্তু কি এই চিয়া সিড? চিয়া সিড হল একটি পুষ্টিকর খাদ্যশস্য। এটি
মূলত মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে জন্মনেয়া সালভিয়া নামক এক
ধরনের উদ্ভিদের বীজ। মধ্য আমেরিকার অনেক অঞ্চলে এই চিয়া সিড অধিক পরিমাণে পাওয়া
যায়।
আপনি হয়তো স্বাভাবিকভাবে এটিকে শস্য বলে মনে করতে পারেন তবে এটি ভেষজ জাতীয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রাচীনকালে অ্যাজটেক এবং মায়া সভ্যতার লোকেরা চিয়া সিডকে
প্রধান খাবার হিসেবে গ্রহণ করত। বর্তমানে বাংলাদেশে চিয়া সিড ব্যাপক পরিচিতি লাভ
করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই চিয়া সিড উৎপন্ন করা হয় না বলে বাহিরের দেশ থেকে
তা আমদানি করে আনতে হয়।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই চিয়া সিড
খেলে কি হয় আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আলোচনা করার
চেষ্টা করেছি। চিয়া সিড চিয়া বীজ নামেও পরিচিত। আমরা অনেকেই চিয়া সিডকে তোকমা
দানা ভেবে ভুল করে বসি। কিন্তু দুটোই সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। তোকমা দানা এবং
চিয়া সিড আপনি যদি দুটো এক জায়গায় রেখে দেখেন তাহলে এর পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
পৃথিবীর অন্যতম পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় চিয়া বীজ বেশ প্রসিদ্ধ।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বর্তমানে খাবার এবং খাবারের
পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে চিয়া সিডকে মানুষ অনেক
বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এই খাবারটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এখন বেশ জনপ্রিয়
হয়ে উঠেছে। পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন চিয়ার পুষ্টিগুণ পাওয়ার জন্য সকালের
নাস্তাই এবং দুপুরের খাবারের কিংবা দইয়ের সাথে, রাত্রে খাবারের শেষে,
মিষ্টিমুখ করতে ও পুডিং এর মধ্যেও খান অনেকেই।
আপনারা অনেকে ভাবেন যে চিয়া সিড শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য খাওয়া হয়। এটি
একদমই ভুল ধারণা। শুধুমাত্র যে ওজন কমানোর জন্যই চিয়া সিড খাওয়া হয়ে থাকে তা
নয় বরং এটি খাওয়ার ফলে আপনি যে স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো পাবেন তা জানলে আপনিও
অবাক হয়ে যাবেন। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
উপকারী হতে পারে। কারণ এই সময় শরীর রাতে বিশ্রামের পর নতুনভাবে সক্রিয় হয় এবং
তখন শরীরের পুষ্টিগুণ গ্রহণের ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
যত কিছুই আমরা শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য করি না কেন, যদি গোড়ায় সমস্যা থাকে তবে অপরিভাগে কাজ করে কোন ফলাফল পাওয়া যাবে না। শরীরকে রোগমুক্ত ও সুস্থ রাখার প্রথম প্রক্রিয়া শুরু হয় সকাল থেকে। আর এজন্য শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত চিয়া সিড নিয়মিত প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ খেলে আপনার শরীরকে রোগ মুক্ত রাখার সর্বোচ্চ সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন গ্রহণ করুন এক চা চামচ চিয়া সিড। নিচে এর বিস্তারিত উপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধির করেঃ এন্টি এজিং ফুড হিসেবে চিয়া সিড বেশ জনপ্রিয়। ধূমপান করলে, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার ফলে, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি, দূষিত পরিবেশ, অনিদ্রা, অ্যালকোহল সেবন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এর ফলে শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়। আর এই ফ্রী রেডিকেল আমাদের শরীরে থাকা জীবিত ডিএনএ কোষকে ধ্বংস করে ফেলে। যার ফলে আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। চিয়া সিডে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা এই ফ্রী রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এসকল কারণে আমাদের শরীরে প্রদাহজনিত রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে এমনকি হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এছাড়াও বিভিন্ন রোগ এসে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার চিয়া সিড যা আপনি মাত্র ৭ দিন খাওয়ার ফলেই আপনার ত্বকে এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করতে পারবেন।
- রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবেঃ আপনার যদি সকালে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে রক্তে চিনির মাত্রা হুট করেই বেড়ে যেতে পারে সাথে বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। চিয়া সিড এই প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে দেয় এবং কার্বোহাইড্রেটকে রক্তের সাথে মিশতে দেয় না। ফলে যাদের টাইপ টু টাইপ ডায়াবেটিস রয়েছে চিয়া সিড ভিশন উপকারী হতে পারে তাদের জন্য।
- শক্তি ও উদ্যোম দেয়ঃ চিয়া সিডে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ সকালের শুরুতেই শরীরে শক্তি যোগায়। ফলে সারাদিন কর্মক্ষমতা বাড়ে ও ক্লান্তি কমে।
- ওজন কমবেঃ আপনি কি অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আপনার অতিরিক্ত ওজনের দুশ্চিন্তা দূর করতে পারে এই সুপার ফুড চিয়া সিড। এটি যেদিন খাওয়া শুরু করবেন তার আগে আপনার ওজন মেপে দেখুন। এক সপ্তাহ নিয়মিত চিয়া সিড খান অতঃপর আবার ওজন মাপুন। চিয়া সিড জল শোষণ করে জেলির মত ফুলে ওঠে। ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাতে সাহায্য করে। এতে ক্ষুধা কমে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণত হ্রাস পায়। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ঠিক মত চিয়া সিড খান তাহলে ওজন কমবেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে আপনি চাইলে নিচে ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম অংশটুকু দেখতে পারেন।
- হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ চিয়া সিড হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে। এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাবে। আর শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যত বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকবে আমাদের হৃদপিণ্ড তত বেশি সুস্থ ও সবল থাকবে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক ও স্টক হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। তাই দিনের শুরুটা করুন চিয়া সিড দিয়ে এবং চিয়া সিডের সকল উপকারিতা উপভোগ করুন।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ডায়াবেটিস এক ধরনের আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে এসে। রক্তের সুগারের মাত্রা যদি অনেক বেশি বেড়ে যায় তাহলে চিয়া সিড তা কমিয়ে ফেলতে পারে। এটি রক্তের ভিতরে ইনসুলিনের সম্প্রসারণ বাড়াবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ যারা রক্তস্বল্পতাই ভোগেন তাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার এই চিয়া সিড। কেননা এর মধ্যে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধের মূল উপাদান আইরন রয়েছে। যা শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করে আপনার সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে চমৎকার ভূমিকা রাখবে।
- রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ চিয়া সিড রক্তে গ্লুকোজ আসতে আসতে শোষণ করতে সাহায্য করে ।ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ ওঠা নামা হয় না। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী।
- ডিটক্সিফিকেশন ( শরীর পরিষ্কার )ঃ চিয়া সিড অন্ত্রে জমে থাকা টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। খালি পেটে খেলে শরীর সহজে বিষাক্ত পদার্থ বাইরে বের করে দিতে পারে। ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে। এবং রোগ জীবাণু সংক্রামক কম হয় শরীর সুস্থ রাখা যায়।
- কিডনি রোগ প্রতিরোধেঃ চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল তা কি জানেন? যদি না জেনে থাকেন নিচে বিস্তারিত ভাবে চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল সে সম্পর্কে দেখে নিন। কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চিয়া সিড থাকা উপাদান গুলো বেশ কার্যকরী।
- ত্বক ও পেশির জন্যঃ শরীরে পেশি শক্তিশালী এবং পুনর্গঠন করার জন্য চিয়া সিডের মধ্যে থাকা প্রোটিন দারুন কার্যকরী। চিয়া সিড শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে ত্বকের বলিরেখা দূর করার পাশাপাশি ত্বককে প্রাণবন্ত এবং আকর্ষণীয় করার জন্য চিয়া সিডের বিকল্প নেই।
- হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করেঃ যদি শরীরের হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হয়। যারা ভালোভাবে খেতে পারেন না এবং রাত্রে ঠিকমতো ঘুম হয় না এবং পুষ্টিহীনতাই ভুগছেন তাদের জন্য এই চিয়া সীড খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হতে পারে। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। খালি পেটে এটি খেলে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। হজমের সমস্যা দূর হবে এবং মুখের রুচি বাড়বে।
- বাচ্চাদের বিকাশেঃ শুধু বড়দের জন্যই নয় বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড প্রচুর উপকারী। বাচ্চাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ অবদান রাখে এই চিয়া সিড। তাই ছোট বাচ্চাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তাদেরকে নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ান।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়? বিজ জাতীয় যেকোনো খাবারে
অনেক বেশি পুষ্টিগুণ থাকে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চিয়া সিড। পুষ্টিগুণে
সমৃদ্ধ শস্য ও ভেষজ জাতীয় একটি খাবার চিয়া সিড। এতে রয়েছে নানান ধরনের
ঔষধি গুণাবলী। চিয়া সিড শরীরে শক্তি যোগায়। এতে যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে তাতে
কোন সন্দেহ নেই।
চিয়া সিড ভেজানো পানি প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। চিয়া সিডে অনেক স্বাস্থ্যকর
উপাদান রয়েছে। সুপার ফুড চিয়া সিড আপনার ওজন কমানো থেকে শুরু করে ক্যান্সার
প্রতিরোধ এর মত নানান কাজের জন্য বেশ কার্যকরী। নিচে চিয়া সিডের পুষ্টিগুণীর
তালিকা (প্রতি 28 গ্রাম বা দুই টেবিল চামচের ভিত্তিতে) দেওয়া হল-
- ক্যালোরিঃ ১৩৭ ক্যালরি
- প্রোটিনঃ ৪.৪ গ্রাম
- ফাইবারঃ ১০.৬ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেটঃ ১২ গ্রাম
- ক্যালসিয়ামঃ ১৭৭ মিলিগ্রাম
- ফসফরাসঃ ২৫৬ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়ামঃ ৯৫ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়ামঃ ৪৪ মিলিগ্রাম
- জিংকঃ ১ মিলিগ্রাম
- আইরনঃ ২.২ মিলিগ্রাম
- এন্টিঅক্সিডেন্টঃ উচ্চমাত্রায়
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা। আপনি কি জানেন সকালে খালি পেটে চিয়া সিড
খাওয়া আদৌ স্বাস্থ্যকর কিনা? বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন আপনি যেভাবেই চিয়া সিড খান
না কেন তা আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তবে
আপনি যদি সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা পেতে খালি পেটে এটি খাবার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে দারুণ উপকারী হবে।
মাত্র এক সপ্তাহ চিয়া সিড খেয়ে দেখুন আপনি শরীরের যে পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করবেন
তা অবিশ্বাস্য। চিয়া সিড সকালে খালি পেটে খাওয়া শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী
এবং এটি বেশ প্রচলিত একটি নিয়ম। কিন্তু আপনি হয়তো রাত্রে ভেজাতে ভুলে যাওয়ার
কারণে সকালে আর চিয়া সিড খানি না তাই না? এটা একদমই ঠিক নয় কেননা চিয়া সিড
অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর যা মাত্র ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই
যথেষ্ট।
তাই চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি যথাযথভাবে
খাওয়া না হলে হজমে সমস্যা হতে পারে। নিচে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও পদ্ধতি
বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলো
খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াঃ চিয়া সিড অনেক রকম খাবারের সঙ্গে সহজেই মেশানো
যায়। যেমন-
বিভিন্ন ড্রিংকস বা জুসের সাথেঃ এই প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীর অনেক বেশি ক্লান্ত
হয়ে যায়। আর এই ক্লান্তির মাঝে ঠান্ডা শরবত বা জুস খেতে কার না ভালো লাগে। তাই
নানান ধরনের ড্রিঙ্কসের সাথে বা ফলের জুসের সঙ্গে চিয়া সিড মিশিয়ে খেলে শরীর
অনেক বেশি আরামদায়ক অনুভব হবে।
উপকরণঃ
- ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড
- এক গ্লাস পানি
- এক চা চামচ লেবুর রস
- ইচ্ছে হলে সামান্য মধু
প্রস্তুত প্রণালীঃ চিয়া সিড পানিতে দিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। যখন জেলির মত
হয়ে আসবে তখন তাতে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে দিন। ভালোভাবে নেড়ে খালি পেটে
সকালে পান করুন।
চিয়া সিড স্মুদি হিসেবে খাওয়ার নিয়ম-
উপকরণঃ
- এক কাপ দুধ/দই
- একটি কলা/ পাকা পেঁপে/ বেরি ফল
- এক চা চামচ চিয়া সীড (ভেজানো)
- সামান্য মধু বা খেজুর
প্রস্তুত প্রণালীঃ সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে স্মোদি
বানিয়ে নিতে হবে। অতঃপর উপরে সামান্য চিয়া সেট জিটিএ পরিবেশন করুন।
সালাদে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম-
উপকরণঃ
- আপনার পছন্দের সবজির সালাদ
- এক চা চামচ ভেজানো চিয়া সিড
- অলিভ অয়েল, লেবুর রস, লবণ
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমে সালাদ ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন। এরপর ওপর থেকে ভেজানো
চিয়া সিড ছিটিয়ে দিন। অতঃপর ভালোভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
চিয়া সিড পুডিং হিসেবে খাবার নিয়ম-
উপকরণ-ঃ
- ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড
- এক কাপ দুধ ( দুধ বাদামের দুধ বা নারিকেল দুধ)
- সামান্য মধু বা ম্যাপেল সিরাপ
- ফল ও বাদাম (টপিং হিসেবে)
প্রস্তুত প্রণালীঃ একসঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে ফ্রিজে রাখুন ৪-৬ ঘন্টা বা রাত্রেও
ভিজিয়ে রাখতে পারেন এরপর এটি পুডিং এর মত ঘন হয়ে যাবে। এর সাথে ফল ও বাদাম
দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ভিজিয়ে খাওয়া(সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি)ঃ সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি
সকালে খালি পেটে পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখা চিয়া সিড খান। রাত্রে না ভিজিয়ে
রাখতে পারলেও খাওয়ার এক ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। আপনার যদি পানির
সঙ্গে গুলিয়ে এমনি খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ না করেন তাহলে ফলের রস ইসমুদি ওটস বা
সালাদের সঙ্গেও চিয়া সিড মিশিয়ে চাইলে খেতে পারেন।
- এক চা চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে দিন।
- ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখুন (রাত ভরো রাখা যায়)।
- ফুলে গেলে পানির সঙ্গে বা অন্য খাবারে মিশিয়ে খান।
আমাদের মধ্যে প্রায়ই অনেকে আছেন যারা চিয়া সিড সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে
অনেক বেশি দেরিতে খেয়ে থাকেন। এর ফলে চিয়া সিড বীজ বেশি পানি শোষণ করার পরে
অনেক আঠালো, থকথকে এবং পিচ্ছিল হয়ে যায়। চিয়া সিডের পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়ার
জন্য এতক্ষণ ধরে ভিজিয়ে রাখার কোনই প্রয়োজন নেই। তবে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ হতে
পারে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে দেরিতে খাওয়া। বিশেষ করে আপনারা যারা ঘন চিয়া
পুডিং এর মত খাবার তৈরি করতে পছন্দ করেন।
কিন্তু এতে পুষ্টিগুণ বাড়বে না। চিয়া সিডডে রয়েছে ব্যাপক পুষ্টি উপাদান যা
অল্পক্ষণ ভেজালেও পাওয়া যায়। তাই চিয়া সিড অধিক সময় ধরে ভিজিয়ে রাখার কোন
দরকার নেই। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন প্রতিদিন ১০০ গ্রাম চিয়া সিড খাওয়া শরীরের
পক্ষে ভালো। তবে আপনি চাইলে ১০ গ্রাম অর্থাৎ দুই চামচ ও খেতে পারেন। তাহলেই
পাবেন উপরের সকল আশ্চর্য উপকারিতা।
চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময়
চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময় কখন? আমরা কম বেশি সকলেই জানি যে সকালে খালি পেটে
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক কিন্তু অনেকেই জানিনা চিয়া সিড খাওয়ার
সঠিক সময় কখন এবং কি পরিমান খেতে হয়। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল যেহেতু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তাই
আপনি যদি এর সঠিক উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক
সময় এবং নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।
কেননা চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময় জানলে এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সর্বোচ্চভাবে
পাওয়া যায়। এটি একটি বহুমুখী খাবার তাই বিভিন্ন সময়ে খাওয়া যেতে পারে তবে
সময় অনুযায়ী এর উপকারিতাও ভিন্ন। ভারভার্ট হেলথ এর একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে,
চিয়া বীজ প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে এবং পেট পরিপূর্ণ করে তোলে। তাই সকালের
নাস্তাই চিয়া সিড খাওয়ার ফলে পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকবে।
এতে একটু পর পরে খাবার ইচ্ছের প্রবণতা কমে যাবে এবং ক্যালোরিও কম খাওয়া হবে যার
ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সকালে খালি পেটে এবং
রাত্রে খাবারের পর অর্থাৎ ঘুমোনোর আগে চিয়া সিড খাওয়ার উপযুক্ত সময় ধরা হয়।
রাত্রে ঘুমানোর আগে চিয়া সিড খেলে মেটাবলিজম সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং ভালো
ঘুমের সহায়তা করবে। এছাড়াও ব্যায়ামের আগে বা পরে চিয়া সিড খেলে শরীরে এনার্জি
বুস্ট করে, প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি শরীরকে প্রস্তুত করে। এবং পেশির ক্ষয় পূরণের
সাহায্য করে থাকে।
- পরামর্শঃ
চিয়া সিড যেকোন রেসিপিতে মেশানোর আগে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে নেওয়া ভালো।
এটি পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে তাই হজম সহজ হয়।
প্রতিদিন এক থেকে দুই টেবিল চামচ চিয়া সিডই যথেষ্ট।
প্রথমবার খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে শুরু করুন।
এলার্জির সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকুন।
ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
আপনি কি ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য আগ্রহী? আমাদের দৈনন্দিন
জীবনের প্রত্যেকটা জিনিসের খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং উপকারিতা জানা দরকার। ওজন
কমানোর জন্য এবং সুস্থ থাকার জন্য চিয়া সিড শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী এবং
কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্যই নয় হার্টের জন্যও এই বীজ
নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উপকারী।
এটি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভব হয়, হজম ভালো হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি
গ্রহণ কমে যায়। চিয়া সিড রান্না করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না কেননা এটি স্বাদ
গন্ধবিহীন এক ধরনের দানাদার খাদ্য। চিয়া সিডে ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়াকে
ধির করে দেয় এবং ক্ষুধা কমায় ও দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। সামান্য
পরিমাণ চিয়া সিডে অনেক বেশি পুষ্টি থাকে এবং ক্যালোরি কম থাকে যা ওজন কমাতে
সাহায্য করে কোন অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি ছাড়াই। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা তো দেখেন এখন ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড খাওয়ার
নিয়ম দেখে নিন-
উপকরণঃ
- এক চা চামচ চিয়া সিড
- এক গ্লাস উষ্ণ পানি
- এক চা চামচ লেবুর রস
- ইচ্ছে হলে এক চা চামচ মধু
পদ্ধতিঃ চিয়া সিড পানিতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এরপর এর সঙ্গে লেবু ও
মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন। এছাড়াও আপনি এ সকল ঝামেলা ছাড়াও
শুধুমাত্র এক চা চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। সারাদিনে
সময় না পেলে রাত্রে খাবারের বদলে হালকা চিয়া পুডিং খেতে পারেন। রাতের খাবার
হালকা করতে এটি খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হয় না বরং উপকারী ফ্যাট ও
ফাইবার পাওয়া যায়।
দৈনিক ডোজ (পরিমাণ)ঃ
- প্রতিদিন ১.৫-২ টেবিল চামচ যথেষ্ট।
- অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা বা হজম সমস্যা হতে পারে।
সতর্কতা ও পরামর্শঃ
- পানির সঙ্গে খাওয়াটা জরুরী কারণ এটি বেশি পানি শোষণ করে।
- ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হন প্রথমে অল্প করে শুরু করুন।
- ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি সুষম ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করছি ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তর ধারণা
পেয়েছেন।
রূপচর্চা ও চুলের যত্নে চিয়া সিড এর ব্যবহার
রূপচর্চা ও চুলের যত্নে চিয়া সিড এর ব্যবহার। চিয়া সিড পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি
আদর্শ খাবার। চিয়া সিড যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তা নয় বরং এটি
রূপচর্চাতেও বহু কাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিয়া সিড বর্তমানে স্বাস্থ্য ও
সৌন্দর্য চর্চায় খুবই জনপ্রিয় একটি উপাদান। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,
এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ যা রূপচর্চা ও
চুলের যত্নে দারুন উপকারি।
চিয়া সিডের মাস্ক ব্যবহার আমাদের ত্বক থেকে ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ভেতর থেকে
করে তুলবে অনেক বেশি পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল। চিয়া সিড ত্বকের পাশাপাশি চুলের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও অত্যন্ত কার্যকরী। স্বাস্থ্যজ্জল চুল মানুষের সৌন্দর্যকে
বহু গুনে বাড়িয়ে তোলে। তাই চুলের যত্নে সর্বদাই সচেতন থাকা প্রত্যেকটা মানুষের
চিয়া সিড ব্যবহার করা দরকার। চিয়া সিডের তৈরি হেয়ারপ্যাক ব্যবহারের ফলে চুল
ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে সিল্কি এবং ঝলমলে হয়ে উঠবে।
রূপচর্চায় চিয়া সিডের ব্যবহার-
- ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতেঃ চিয়া সিড জল শোষণ করে জেলি জাতীয় এক ধরনের টেক্সচার তৈরি করে যা ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে। ১ চা চামচ চিয়া সিড, তিনচা চামচ পানিতে ভিজিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগালে 15 মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
- স্ক্রাব হিসেবেঃ চিয়া সিডে থাকা সূক্ষ্ম দানা ত্বকের মৃত কোষ তুলে ফেলে এবং ত্বক মসৃণ করে। এই জন্য এক চা চামচ চিয়া সিড ১চা চামচ মোদির সঙ্গে মিশিয়ে সাথে চাইলে এক চা চামচ নারকেল তেল যুক্ত করতে পারেন। সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পাঁচ মিনিট মেসেজ করুন এবং 10 মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- আন্টি এজিং মাস্ক হিসেবেঃ চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে বার্ধক্যের ছাপ থেকে রক্ষা করে। এইজন্য এক চা চামচ চিয়া সিড, এক চা চামচ দই এবং ১ চা চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন 15 থেকে 20 মিনিট তারপর ধুয়ে ফেলুন।
চুলের যত্নে চিয়া সিডের ব্যবহারঃ
চুলে পুষ্টি জোগাতেঃ চিয়া সি্ডে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড চুলের গোড়া শক্ত
করে এবং চুল পড়া কমিয়ে চুলকে মজবুত করে। চিয়া সিড ভিজিয়ে একটি মাস্ক বানান
তারপর তাতে ১চা চামচ চিয়া সিড 2 চা চামচ এলোভেরা জেল এবং এক চা চামচ নারকেল তেল
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চিয়া সিডে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে যা স্কেলপের প্রদাহ ও খুশকি কমাতেও
বেশ কার্যকর। চিয়া সিডের নিয়মিত ব্যবহার চুল প্রাকৃতিকভাবে ঝলমলে হয়ে ওঠে।
চিয়া সিড ব্যবহারে ত্বক ও চুলের যত্নে প্রাকৃতিকভাবে সুফল পাওয়া যায়। তবে কারো
ত্বক অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হলে প্রথমে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়াই ভালো।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল জানেন কি? কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি অঙ্গ তাই কিডনির ব্যাপারে সকল মানুষকেই অনেক বেশি সচেতন থাকা জরুরী। কিডনি
রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয় তাই কিডনির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় আমাদের মধ্যে সচেতনতা
তৈরি করতে হবে। চিয়া সিড কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারিতা তবে এর কিছু প্রতিক্রিয়া
রয়েছে যা এখন জানাবো।
চিয়া সিড পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য এটি কতটা উপকারী বা
ক্ষতিকর তা নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা ও সেবনের পরিমাণের ওপর।
নিম্নে চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক নিয়ে
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
- ফাইবার সমৃদ্ধঃ চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রায় ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। যা হজমে সাহায্য করে ও শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়ক। এটা পরোক্ষভাবে কিডনিকে সহায়তা করে কারণ হজম ঠিক থাকলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ ও নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডঃ চিয়া সিডে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কিডনি রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য হতে পারে। কারণ কিডনি রোগীদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদানঃ চিয়া সিড এন্টি অক্সিডেন্টের উৎস। যা কিডনি কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে পারে।
চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ক্ষতিকরঃ
- পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রাঃ চিয়া সিডে কিছু পরিমাণে পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। কিডনি যদি দুর্বল হয় বা কারো ক্রনিক কিডনি ডিজিজ থাকে তবে এসব উপাদানের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। অতিরিক্ত পটাশিয়াম বা ফসফরাস কিডনির কার্যকারিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- অতিরিক্ত ফাইবার ও জল ধারণ ক্ষমতাঃ চিয়া সিড পানি শোষণ করে ফুলে যায়। পর্যাপ্ত পানি ছাড়া এটি খেলে পেট ফাঁপা, গ্যা্স ষ্ঠকাঠিন্য এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। এমনকি কিডনি রোগীদের মাঝে পানি সীমিত রাখার পরামর্শ দেয়া হয় সেখানে বেশি পানি ধরে রাখা খাবার বিপদ থেকে আনতে পারে।
- অক্সিলেট কন্টেন্টঃ চিয়া সিডে মাঝারি পরিমানে অক্সালেট থাকতে পারে। যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন বিশেষ করে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন তাদের জন্য চিয়া সেট সীমিতভাবে খাওয়া উচিত।
আপনার যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত চিয়া
সিড গ্রহণ করা উচিত নয়। চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হলেও যেকোনো খাদ্য সঠিক
পরিমাণে ও ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় খাওয়াই নিরাপদ। তবে আপনি যদি
পরিমিত মাত্রায় চিয়া সিড খান তাহলে কিডনি রোগীসহ প্রত্যেকটা মানুষের জন্য
অত্যন্ত উপকারী হবে। আসুন আমরা নিজে সচেতনা হই সকলকে সচেতন করি এবং কিডনি রোগ
প্রতিরোধ করি।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা। সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা অর্থাৎ চিয়া সিড আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি ধরনের
ভূমিকা পালন করবে আশা করছি তা নিশ্চয়ই আর অজানা নয়। চিয়া সিড এর গুনের শেষ নেই
কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। চিয়া সিড অনেক পুষ্টিগুন
সম্পূর্ণ সুপার ফুড বলে অতিরিক্ত বা ভুল ভাবে খাওয়া হলে এটি শরীরের জন্য বেশ
কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এতক্ষণ আমরা চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা
ভাল তা দেখেছি। নিচে চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা দিকগুলো তুলে ধরা হলো-
- হজমে সমস্যাঃ চিয়া সিড উচ্চমাত্রার ফাইবার যুক্ত যা বেশি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট ব্যথার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা চিয়া সিড পানি শোষণ করে ফুলে যাই। যদি যথেষ্ট পানি না খাওয়া হয় তবে এটি অন্তরে আটকে গিয়ে হজম ব্যাহত করে।
- রক্ত পাতলা হওয়ার ঝুঁকিঃ চিয়া সিড ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে যা রক্তকে পাতলা করতে পারে। কেউ যদি রক্ত পাতলা করার ঔষধ খান তবে চিয়া সিড অতিরিক্ত খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
- এলার্জির সম্ভাবনাঃ এলার্জি সম্ভাবনা যদিও বিরল তবুও কিছু মানুষের মধ্যে এলার্জি দেখা দিতে পারে চিয়া সিড খাবার ফলে। যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি, বমি বমি ভাব শ্বাসকষ্ট ও বুকে চাপ অনুভব হতে পারে। যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা যায় সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিয়া সিড শুকনো অবস্থায় খাওয়া বিপদজনক হতে পারে বিশেষ করে যদি যথেষ্ট পরিমাণ
পানি পান না করা হয়। কেননা চিয়া সিডের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলো এটি পানি শোষণ
করে আকারে ফুলে ওঠে প্রায় ১০ থেকে ১২ গুণ। শুকনো অবস্থায় চিয়া সিড খেলে গলায়
আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে শ্বাসকষ্ট ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও শুকনো অবস্থায় চিয়া সিড খেলে এটি পেটের ভেতরে ফুলে গিয়ে অস্বস্তি,
গ্যাস, ফোলা ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকেই ডায়রিয়া বা পেট ব্যথার মত সমস্যা অনুভব করেন। এছাড়াও এটি প্রচুর
পরিমাণে পানি শোষণ করে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে শরীরের পানির ঘাটতে
দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা শিশু ও বয়স্ক তাদের ঝুঁকির মাত্রা বেশি থাকে।
তাই সরাসরি শুকনো ভাবে খাওয়া উচিত নয়। নাহলে এটি আপনার জন্য ভালো না হয়ে উল্টো
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ চিয়া সিড কি ফ্যাটি লিভারের জন্য ক্ষতিকর?
উত্তরঃ চিয়া সিড সাধারণত ফ্যাটি লিভারের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে
উপকারী হতে পারে। এতে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা লিভারের ফ্যাট জমা কমাতে
সাহায্য করতে পারে এবং এতে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের প্রদাহ
কমায়। পরিমাণ মত খেলে চিয়া সিড ফ্যাটি লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে, ক্ষতিকর
নয়।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড খেলে কি পেটের চর্বি কমে?
উত্তরঃ হ্যাঁ চিয়া সিড পেটের চর্বি কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে এটি কোন ম্যাজিক
ফুড নয়। সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের সঙ্গে যদি আপনি চিয়া সিড খান তবে উপকারিতা
পাবেন কিন্তু শুধুমাত্র চিয়া সিড খাওয়ার ফলে চর্বি কমবে না। চিয়া সিড পেটের
চর্বি কমাতে সাহায্য করে তবে সঠিক জীবন যাপন ছাড়া এটা কার্যকর নয়।
প্রশ্নঃ ১ কেজি চিয়া সিড এর দাম কত?
উত্তরঃ বাংলাদেশে এক কেজি চিয়া সিড এর দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মান অনুসারে
পরিবর্তিত হয়। দামের তারতম্য ব্র্যান্ড, গুণগত মান, প্যাকেজিং এবং উৎসের উপর
নির্ভর করে। তবে ১ কেজি চিয়া সিড এর দাম ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০৫০ টাকার
মধ্যে হতে পারে। আপনি চাইলে আপনার স্থানীয় বাজারে দেখে শুনে ভালোভাবে যাচাই
বাছাই করে চিয়া সিড কিনতে পারেন।
প্রশ্নঃ প্রতিদিন কি পরিমান চিয়া সিড খাওয়া দরকার?
উত্তরঃ প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ অর্থাৎ প্রায় 15 থেকে 20 গ্রাম চিয়া সিড
খাওয়া প্রয়োজন। এটি স্বাস্থ্যকর তবে অতিরিক্ত খাওয়া এরা উচিত।
প্রশ্নঃ চিয়া সিড কি প্রতিদিন খাওয়া যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ চিয়া সিড প্রতিদিন খাওয়া যায়। তবে মাঝারি পরিমানে খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন ১ থেকে ২ চা চামচ চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী বলে মনে করা হয়
তবে পরিমাণে সচেতন থাকা উচিত। চিয়া সিড খাওয়ার পর পানি পান করতে ভুলবেন না।
সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে চিয়া সিড কি থেকে শুরু করে সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার
উপকারিতা, চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, চিয়া
সিড খাওয়ার সঠিক সময়, ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, রূপচর্চা ও চুলের
যত্নে চিয়া সিড এর ব্যবহার, চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভাল এবং চিয়া সিড
খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবার চেষ্টা করেছি।
আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি
নিয়মিত যুক্ত করুন চিয়া সিড এবং উপভোগ করুন এর সকল উপকারিতা। বিভিন্ন অনলাইন
শপে এখন ভালো মানের চিয়া সিড বিক্রয় করে। আপনার যদি বাজারে গিয়ে কেনার সময় না
থাকে তাহলে বিভিন্ন অনলাইন শপ থেকে যাচাই-বাছাই করে ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু এর
বাজার মূল্যের কারণে সবার পক্ষে ক্রয় করা এবং নিয়মিত খাওয়া সম্ভব হয় না। তবে
সামর্থ্য অনুযায়ী যদি নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া যায় তবে তা আপনার সুস্বাস্থ্য
বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url