শামুক: প্রাকৃতিক ঔষধ না বিপদের উৎস- যা জানতেই হবে।
শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার
জন্য। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে শামুক খাওয়া কি জায়েজ? সে সম্পর্কে বিস্তারিত
তথ্য তুলে ধরব।
শখের বসে আমরা অনেকেই গাছ লাগিয়ে থাকি এবং সেই বাগানের মধ্যে দেখি বিভিন্ন
আকৃতি এবং রং বেরঙের শামুক। শামুক কি খায়, শামুকের বৈশিষ্ট্য কি এছাড়াও
শামুকের অপকারিতা শামুক মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিনা এবং ত্বক ও চোখের যত্নে
শামুকের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব।
পোস্ট সূচীপত্রঃ শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা / শামুক খাওয়া কি জায়েজ
- শামুক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
- শামুকের উপকারিতা কি
- শামুক কি খায় শামুকের বৈশিষ্ট্য
- শামুক কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর
- ত্বক ও চোখের যত্নে শামুকের ব্যবহার
- শামুক এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
- শামুক খাওয়া কি জায়েজ
- শামুকের অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
- শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
- শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
শামুক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
শামুক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিন। শামুক হল একটি ছোট ধীর গতি সম্পন্ন,
অমেরুদন্ডী প্রাণী। যা মূলত মোলাস্কা পর্বের অন্তর্গত। এদের দেহের প্রধান
বৈশিষ্ট্য হল পেঁচানো খোলস বা শ্বাস যা এদের নরম দেহকে রক্ষা করে। ভোজ্যস্থল
শামুককে ইংরেজিতে এগকারগট বলা হয়। এটা মূলত ফরাসি শব্দ শামুক থেকে
এসেছে।
প্রাচীনকাল থেকেই শামুক খাদ্য হিসেবে মানুষ খেয়ে থাকে এবং এর অনুশীলনও রয়েছে।
আধুনিক যুগে এসে এখন শামুক চাষ করা হয় যা মূলত হেলিসিকালচার নামে পরিচিত।
বৃষ্টির পরে সাধারণত শামুক সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এবং এটাকে পরবর্তীতে
শুদ্ধিকরণ (উপবাস)করা হয়। প্রাচীনকালে এপ্রিল থেকে জুন মাস শামুক খাওয়ার ঋতু
হিসেবে প্রচলিত ছিল।
শামুকের সবচেয়ে বড় রন্ধন ঐতিহ্যের দেশ হিসেবে স্পেন ফ্রান্স এবং ইতালিকে ধরা
হয় এ সকল দেশে হেলেসিকালচার ঘটে। আমাদের মানব দেহের জন্য উপকার হিসেবে বেশ
কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে এই শামুকের। তাই বিভিন্ন অঞ্চলে এই শামুক চাষ প্রচলিত
আছে। সামুক সাধারণত ডিমের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেশের বিভিন্ন খাল
বিল সহ পুকুরের বিভিন্ন স্থানে ৪০০ থেকে ৪৫০ প্রজাতির শামুক পাওয়া যায়।
এরা খাল বিলে পুকুরে যে কোন জায়গাতেই ডিম পেড়ে থাকে বিশেষ করে বর্ষার
মৌসুমগুলোতে মাটি বেঁধে উপরে উঠে এবং উঁচু স্থান দেখে সেখানেও ডিম পাড়ে। এই
ডিমগুলো থেকে শামুকের বাচ্চা ফুটে। বাচ্চা ফুটতে প্রায় এক মাসের মত সময় লাগে।
শামুকের ডিম দেখতে সাদা হয় একসাথে তারা অনেকগুলো ডিম দিতে পারে। আর এই সকল ডিম
একসাথে সমষ্টি ভাবে থাকে।
তাই আপনি যদি কখনো এই শামুকের ডিম দেখতে পান এই অবস্থায় তাহলে তা ভাঙ্গা থেকে
বিরত থাকুন কেননা শামুক একটি প্রাকৃতিক সম্পদ তাই এদের বিলুপ্তির কারণ হওয়া
আমাদের উচিত নয়। শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানব তার আগে চলুন শামুক নিয়ে কিছু মজার তথ্য জানা যাক-
- কিছু শামুক টানা তিন বছর পর্যন্ত ঘুমাতে পারে। তারা যখন প্রতিকূল পরিবেশে পরে যেমন অতিরিক্ত গরম বা শুষ্ক আবহাওয়া তখন তারা হাইবারনেসনে চলে যায়।
- শামুকের মুখে শত শত ক্ষুদ্র দাঁত থাকে যেগুলোরা radula নামে পরিচিত কিছু প্রজাতির শামুকের দাঁত লোহার চেয়েও শক্ত হতে পারে।
- শামুককে পৃথিবীর সবচেয়ে ধীর গতির প্রাণীদের একজন হিসেবে ধরা হয়। এদের গতিপ্রায় ০.০৩ মাইল প্রতি ঘন্টা।
- শামুক তাদের পেটের নিচের পেশিগুলোর সাহায্যে চলাচল করে এবং তারা এই পেটের ভরের উপরে বসে আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে যা তাদের স্লাইড করতে সাহায্য করে।
- কিছু স্থলজ শামুক 10 থেকে 15 বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। যদিও বন্য পরিবেশে এদের গড় আয়ু অনেক কম হয়।
- শামুকের চোখ তাদের গুড়ের উপরের দিকে থাকে এবং তারা প্রধানের মাধ্যমে পরিবেশ বুঝে চলাফেরা করে।
- কিছু শামুক তাদের খোলস হারালেও বেঁচে থাকতে পারে তারা স্লাগ নামে পরিচিত।
- আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
শামুকের উপকারিতা
শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা কি জানেন কি? শামুককে অনেক সময় আমরা শুধু ফসলের শত্রু মনে
করি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শামুক পরিবেশ কৃষি এবং মানব সমাজে বেশ কিছু
গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রাখে। নিচে শামুকের উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- প্রাকৃতিক আবর্জনা পরিষ্কারকঃ শামুক মৃত গাছপালা, পচা ফলমূল, শৈবাল ও অন্যান্য জৈব বর্জ্য খেয়ে জৈব আবর্জনা পরিষ্কার করে। এর ফলে মাটিতে পচন প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং জৈব সার তৈরি হয়।
- মাটির উর্বরতা বাড়ায়ঃ শামুকের বর্জ্য বা বিষ্ঠা মাটিতে জৈব উপাদান যোগ করে। যা উদ্ভিদের জন্য পুষ্টিকর। এরা মাটি ঘুরে ও চলাফেরা করে মাটিকে নরম করে যাতে পানি ও বাতাস সহজে প্রবেশ করে।
- ঔষধি গুনাগুনঃ শামুকের স্লাইম ত্বকের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও এন্টি মাইক্রোবাল উপাদান ত্বক মসৃণ করে, ক্ষত সারাই ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। প্রাচীন গ্রিক ও আফ্রিকান প্রথাগত চিকিৎসায় শামুক ব্যবহৃত হতো।
- প্রাকৃতিক খাদ্য চেইনে ভূমিকাঃ বিভিন্ন পাখি, ব্যাংক, সাপ, পোকা ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর খাদ্য হিসেবে কাজ করে এই শামুক। এর ফলে জৈবিক বৈচিত্র বজায় থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। জলজ শামুক শৈবাল খেয়ে জলাশয় পরিষ্কার রাখে এরা মৃত মাছ ও উদ্ভিদ খেয়ে জলের দূষণ কমায়।
- চোখের জন্যঃ শামুকের মিউকাস দিয়ে তৈরি নির্যাস ব্যবহার করে বিভিন্ন ড্রপ এখন শুষ্ক চোখের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
- আলসার প্রতিরোধঃ আবার মানুষের দেহের ভেতরে আলসার ও সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ক্ষত সারাতে শামুকের মিউকাস আঠা হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ বাড়ছে বলেছেন নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির একজন জৈব রসায়নবিদ। তবে বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত শামুকের মিউকাসে থাকা সব ধরনের উপাদানের সন্ধান পাননি।
আমাদের পুরো দেহে যেমন রক্তের প্রয়োজন হয় তেমনি ভাবে হৃদপিণ্ডেরও
রক্তের প্রয়োজন। ৩ টি রক্তবাহী নালীকে মাধ্যম করে সাধারণত রক্ত হার্ট এ
পৌঁছায়। সেই নালীতেই যদি কোন ধরনের ব্লক হয় তাহলে রক্ত চলাচল
স্বাভাবিকভাবে ব্যাহত হয়। এ সমস্যাটাকে মূলত আমরা হার্ট অ্যাটাক নামে
চিনে থাকি। এই হার্ট অ্যাটাক থেকেই বাঁচাবে শামুক।
শুনতে হয়তো অবাক লাগছে কিন্তু এমনই দাবি করেছেন ভারতের জলপাইগুড়ি
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
মিনিরাই বলেছেন নদীর তলদেশে ছোট ছোট যে শামুক পাওয়া যায় তার মধ্যে
ম্যাঙ্গানিজ ফসফরাস ওমেগা থ্রি এর মত অত্যন্ত মূল্যবান প্রোটিন
রয়েছে যা হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা
রাখবে।
প্রাকৃতিক এবং দেশীয় যে মাছ রয়েছে যেমন কই, সিং, মাগুর, টেংরা শোল মাছ
এদের পোনার খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম গুলো। এদের মাংস খেতে পছন্দ করে
এই মাছগুলো। তাই শামুক যদি কমে যায় তাহলে পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে
যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং পানির রং পরিবর্তন হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী
হয়ে উঠবে।
ফলে পানিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর আক্রমণ ও বাড়বে। এই খাবার না
পাওয়াই মারা পর্যন্ত যেতে পারে। এছাড়াও শামুকের ভিতরে যে নরম মাংস
পাওয়া যায় তা চিংড়ি মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার
করা হয়। তাই দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ অনেক বেশি শামুক কিনে থাকে। এছাড়াও
মাইক্রোফেলিয়া এবং মেচচফেলিয়া নামক দুই ধরনের কীটপতঙ্গ পাওয়া যায় যা
শামুক থেকে খাবার সংগ্রহ করেই বেঁচে থাকে।
এছাড়াও ধান গাছে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে পরোক্ষভাবে হোক
এবং প্রত্যক্ষভাবে হোক কৃষি ক্ষেতের ব্যাপক উপকার করে শামুক। কিন্তু এই
শামুককে মানুষ প্রকৃতির বন্ধু হিসেবে কতটা চিনে থাকে এবং এই শামুক কমে
যাওয়ার পেছনের কারণটা কি সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হচ্ছে যা শীর্ষক এক
গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয় প্রকৃতির ফিল্টার শামুক যদি কমে যায় তাহলে
পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। শামুক কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ
রয়েছে এর মধ্যে প্রজনন মৌসুমে শামুক ধরা, শামুককে মাছের খাদ্য হিসেবে
ব্যবহার করা, চুন তৈরি করতে ব্যবহার করা, শামুক ধরে বিক্রি করা, শামুকের
আশ্রয়স্থল কমে যাওয়া, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, লবণাক্ততা বৃদ্ধি
পাওয়া, ডিমওয়ালা শামুক নিধন ইত্যাদি কারণকে দায় করা হয়।
তাই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আবার সম্প্রতি
আরেক গবেষণাতে বলা হয়েছে শামুক প্রকৃতির বন্ধু হলেও সাতক্ষীরার প্রায় ৮ ভাগ
মানুষ মনে করে থাকে শামুক কমে গেলেও কোন ক্ষতি হবে না। এবং এর মধ্যে প্রায় তিন
ভাগ মানুষ এর ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা নেই। বাকি ৮৯ ভাগ মানুষ মনে করে শামুক কমে
গেলে প্রকৃতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
যেমন হাঁস ও মাছের খাদ্য কমে যাবে, মাটির স্বাস্থ্য বিনষ্ট হবে, পানিতে বিভিন্ন
রকম রোগ জীবাণু বৃদ্ধি পাবে, ইদুরের উৎপাত অত্যন্ত বেশি বেড়ে যাবে, দেশীয় মাছ
কমে যাওয়াসহ সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে বলে উল্লেখ করেন। এই
জন্য শামুক রক্ষা করতে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য শামুক
চাষে উৎসাহিত করা অতীব প্রয়োজনীয়।
এছাড়াও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে, প্রজনন মৌসুমে শামুক ধরা নিষিদ্ধ করতে
হবে, এছাড়াও বিভিন্ন কৃষি বা মৎস্য বিভাগের সাইনবোর্ড গুলোতে শামুকের উপকারিতা
সহ বিভিন্ন দিক লিপিবদ্ধ করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
শামুক কি খায় শামুকের বৈশিষ্ট্য
শামুক কি খায় শামুকের বৈশিষ্ট্য কি? বর্ষার সময় পাওয়া এই জলজ প্রাণীটি যার
পুষ্টিগুণের তালিকা অনেকটা নদ- নদীর মতোই সুদূরপ্রসারী। স্থানীয় ভাষায়
শামুককে অনেক নামে ডাকা হয়ে থাকে। শামুক একটি স্থলচর ও তৃণভোজী প্রাণী। এরা
বিভিন্ন জিনিস খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফল, শাকসবজি,
গাছের নরম বাকল ইত্যাদি।
এছাড়াও শামুকের খাদ্যাভাস নির্ভর করে তার প্রজাতি ও বাসস্থান অনুযায়ী।
শামুকের মুখে থাকে রেডুলা নামে ক্ষুদ্র দাতযুক্ত একটি অঙ্গ। এটি এক ধরনের
আশযুক্ত জীভ যা খাবার চেছে খেতে সাহায্য করে।শামুক কি খায়? সাধারণভাবে শামুক ২ ধরনের
খাদ্যাভাস অনুসরণ করে-
শাকাশি শামুক এরা প্রধানত উদ্ভিদভোজি। যা যা খাই-
- শৈবাল
- ছোট গাছপালা বা পাতার অংশ
- পচে যাওয়া উদ্ভিদ পদার্থ
- ফলমূল ও শাক-সবজি
- কিছু ছত্রাক
মাংসাশী ও সর্বভোজি শামুক
- কিছু প্রজাতি ছোট ছোট পোকামাকর কিট ইত্যাদি খায়
- জলোজ শামুক জলোজ কিট বা মৃত প্রাণীয় খেতে পারে।
- সর্বভোজী প্রজাতি উদ্ভিদ ও প্রাণী উভই খায়।
এছাড়াও জলজ শামুক গুলোর খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্ল্যাঙ্কটন, এলজি এবং
অন্যান্য জলোজ আণুবীক্ষণিক জৈব বস্তু যেগুলো তারা খায়। শামুক জলজ প্রাণী হওয়া
সত্ত্বেও এদের জলে এবং স্থলে দুই জায়গাতেই বিচরণ রয়েছে। শামুকের অনেক জাত
রয়েছে। শামুকের শরীরে থাকে প্রাকৃতিকভাবে জলশোধনের ব্যবস্থা।
এরা ময়লাযুক্ত পানি পান করে এবং সেই পানি থেকে বিশুদ্ধ পানি বের করে। তাই
ধারণা করা হয় যে খেতে শামুক রয়েছে সেই ক্ষেতের উর্বরতা শক্তি বহু গুণে বাড়ে
এবং বেশি ফসল উৎপাদন করতে সাহায্য করে এরা কৃষকের অগোচরে সাধারণত বন্ধুর ভূমিকা
পালন করে থাকে। যে খেতে শামুক থাকে সেক্ষেত্রের ফসল কম নষ্ট হতে দেখা যায়।
শামুকের বৈশিষ্ট্য
- পেঁচানো আকৃতির শক্ত খোলোস থাকে শামুকের দেহে। যা ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি। এটি তাদের দেহকে শত্রু বা প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
- শরীরের নিচের অংশ মাংস মাংসপিণ্ড যুক্ত এবং এটি দিয়ে চলাচল করে এটি ধীরে চলার জন্য উপযোগী।
- মাথার দিকে দুই বা চারটি গুড় থাকে। উপরের দুটি গুড়ের ডগায় চোখ থাকে নিচের দুটি গুড় স্পর্শ ও গন্ধ সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- শামুক ধীরে চলাচল করে এবং তারা এক ধরনের আঠালো তরল নিঃসরণ করে যা তাদের চলার পথ মসৃণ করে এবং ঘর্ষণ কমায়।
- স্থলজ শামুক ফুসফুসের মত একটি অঙ্গ দিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং জলজ শামুক শ্বাসরন্দ্র ব্যবহার করে।
- অধিকাংশ শামুক উভলিঙ্গ অর্থাৎ পুরুষ ও নারী উভয় অঙ্গই থাকে। তবুও অধিকাংশ শামুক জড়াই মিলিত হয় এবং ডিম পারে। ডিমগুলো সাধারণত মাটির নিচে বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় রাখা হয়।
- শামুক মূলত রাত্রিচার প্রাণী। রাতে বেশি সক্রিয় হয় দিনের বেলায় তারা আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে লুকিয়ে থাকে।
- বন্য পরিবেশে শামুক সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বাঁচে। আদর্শ পরিবেশে বিশেষ করে পোষা অবস্থায় তারা 10 থেকে 15 বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
শামুক কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর
শামুক কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা আমাদের অনেকের প্রশ্ন। শামুক কি খায় ইতিমধ্যে দেখেছি। যেহেতু শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করছি তাই শামুক মানুষের জন্য আদৌ ক্ষতি করে কিনা তা আমাদের জানা দরকার। শামুক অনেক ভাবে
আমাদের পরিবেশ ও কৃষিতে উপকার করে শামুকের উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি। তবে
কিছু ক্ষেত্রে শামুক মানুষের জন্য ক্ষতিকারও হতে পারে। যেমন-
- কিছু শামুক পরজীবী বহন করে যা মানুষের শরীরের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মানুষের লিভার, কিডনি অন্তর ইত্যাদিতে সংক্রমণ ঘটায়।
- শিশুরা শামুক স্পর্শ করার পর হাত না ধুয়ে খেলে রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
- কিছু শামুক প্রজাতি অত্যন্ত দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং পরিবেশে ইকো সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট করে। তারা স্থানীয় উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
- শামুক চলার সময় যে স্লাইম নিঃসরণকরে তা আঠালো ও পিচ্ছিল। বাগানে তারা আঠালো দাগ রেখে যায় যা দেখতে বাজে এবং পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিরোধে করণীয়ঃ
- শামুকের সংখ্যা বেশি হলে লবণ বা ছাই ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- ছাই চুন বালি বা ডিমের খোসা শামুকের চলার পথে এগুলো ছিটিয়ে দিলে তারা চলতে পারে না। এছাড়াও লেবুর খোসা বা রসুনের নির্যাস শামুক এগুলোর গন্ধ অপছন্দ করে।
- রাতে বাগানে স্নেইল ট্র্যাপ বসানো যেতে পারে।
- বিয়ার ট্র্যাপ এক ধরনের জনপ্রিয় ফাঁদ। পাত্রে বিয়ার রেখে মাটিতে বসিয়ে দিলে শামুক গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে আসে এবং ডুবে যায়।
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও শামুক আর্দ্র পরিবেশ পছন্দ করে তাই অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে তা দূর করতে হবে।
- স্নেইল কিলার বা স্লগ পিলেটস বাজারে থাকার রাসায়নিক পদার্থ যা শামুক নিধনে কার্যকর। তবে শিশু বা পোষা প্রাণীর থেকে দূরে রাখতে হবে। এছাড়াও ফেরিক ফসফেট যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলা নিউজ ২৪ এর এক নিউজে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে শামুকের ক্ষতিকর একটি প্রজাতি ছড়িয়েছে। বড় অকৃতির এই শামুকটি
বিভিন্ন ফুল গাছ সহ গাছের পাতা ও কচি ডাল পালাও খেয়ে ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
সবগুলো নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে রাখা কাগজও এই শামুক খেয়ে ফেলছিল। বিশেষজ্ঞরা
ধারণা করেছিলেন, এই প্রজাতির শামুক গুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে
পড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে।
সাধারণত নদী, মরুভূমি, বদ্ধ জলাশয় এবং সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন স্থানে এদেরকে
দেখতে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবে মানুষের তেমন ক্ষতি করে না । পরিবেশের জন্য
শামুককে বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা শামুক মারা যাবার পরে তার মাংস
ও পচা খোলস প্রাকৃতিকভাবে জমির ফসফরাস ক্যালসিয়াম ও পটাশ বিভিন্ন সার তৈরি
করতে ও ব্যবহার করা হয়।
যা ফসলের জমির জন্য অত্যন্ত উপকারী। জমির উর্বরতা বাড়ে, ধান গাছ সহ বিভিন্ন
গাছের শিকড় মজবুত করে ও অধিক ফসল উৎপাদন করতেও সাহায্য করে। কিন্তু বাংলাদেশ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রাণীটি অনেক ক্ষতিকর হয়ে উঠেছিল। নতুন প্রজাতির এ
ধরনের শামুক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালযয়ে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের
বাগান পরিচর্যাকারি জানিয়েছিল, শীতকে ঘিরে প্রত্যেকটা বছর হলের সৌন্দর্য
বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ লাগিয়ে থাকে তারা।
কিন্তু সেই বছর বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছের কচি পাতা খেয়ে ফেলেছে এই আকৃতির
শামুক। আর একবার যদি কোন গাছ আক্রমণের শিকার হয়ে যায় তাহলে সে গাছকে বাঁচানো
যাচ্ছিল না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিল এরা ফসলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বাগানকে
নষ্ট করে দিতে পারে। এরা মূলত সন্ধ্যা হলেই ঝাকে ঝাকে বেরিয়ে আসে এবং দিনের
বেলা অধিক সূর্যের আলোর কারণে লুকিয়ে থাকে।
অতিমাত্রায় বৃষ্টির সময় এরা দালানের দেয়াল বেয়ে বেয়ে উপরে উঠে আশ্রয়
নেয়। এদের মাংস খুবই শক্ত হয় তাই পশু পাখিরাও এদের মাংস খায় না। কিন্তু
আমাদের দেশীয় যে শামুক আছে সেগুলো উপকারী। এরা স্থলে বা ভূমিতে উঠে আসে না
পানিতেই তাদের বসবাস করে। কিন্তু এই প্রজাতির শামুক কিভাবে এসেছিল
বাংলাদেশে?
ধারণা করা হয় বিদেশি ও বাংলাদেশী নাগরিকদের সাথে এ প্রজাতি শামুক আসতে পারে যা
উল্লেখ করেন ড. সালাম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বাইরের দেশ থেকে অনেক রকমের
গাছপালা বাংলাদেশ আনা হয় সেখানকার মাটিতেও কিংবা গাছের পাতার মধ্যে লুকিয়ে
থাকতে পারে এই প্রজাতিটি। এভাবেই আমাদের দেশে এসেছে।
তখন ড. সালাম জানিয়েছিলেন যে ক্ষতিকর প্রজাতির এই শামুকটি নির্মূলের জন্য
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং
যেভাবেই হোক না কেন এর প্রজনন এবং বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দিতে হবে
অন্যথায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যা গোটা দেশের কৃষির ব্যবস্থার জন্য
মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
ত্বক ও চোখের যত্নে শামুকের ব্যবহার
ত্বক ও চোখের যত্নে শামুকের ব্যবহার সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে? সাধারণতা আমরা
শখের বসে অনেক গাছ লাগিয়ে থাকি এবং সে বাগানে দেখা মিলে বিভিন্ন রং বা আকৃতির
শামুক। বর্তমানে এই শামুকের মিউকাসকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের যত্নের জন্য বিভিন্ন
পণ্য প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে। ত্বকের জন্য উপকারী শামুক অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা
রাখায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পূর্ণ প্রসাধনী তৈরি করা হচ্ছে শামুকের মিউকাস
দিয়ে।
এটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই
নয় এখন বিভিন্ন দেশেও বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সুস্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বল ত্বকের
জন্য শামুকের মিউকাস প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হতো। সেই প্রাচীন সময়ে গ্রিকরা
শামুকের মিউকাসকে যেকোন ধরনের ক্ষত সারানোর চিকিৎসায় ব্যবহার করত।
চিলির শামুক চাষিরা ১৯৮০ এর সময়ে ক্ষতের চিকিৎসা থেকে শুরু করে হাতের ত্বক নরম
রাখার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে শামুকের এই মিউকাস ব্যবহার করেছে। বলা হয়ে থাকে
তখন থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই শামুক। এক গবেষণায় উঠে
এসেছে শামুকের মিউকাসে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ওয়েন্টিফাঙ্গাল
বৈশিষ্ট্য।
তাই মানুষের শরীরে যেকোনো ধরনের ক্ষত সারাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বন্ধ করতে
বেশ কার্যকরী শামুকের মিউকাস। ধারণা করা হয় শামুকের মিউকাসে ক্যান্সার
প্রতিরোধ করার মত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বর্তমানে এক গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে
কিছু মানুষের উপর। সাধারণত যাদের ক্যান্সার রয়েছে। সেখানে দেখা যায় শামুকের
মিউকাস মানুষের ত্বকের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে বেশ সফল
হয়েছে।
ত্বকের বিভিন্ন যত্নের জন্য নানান পণ্য প্রসাধনী তৈরির সুযোগ বাড়ছে জানা্ন
যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই নামক হাসপাতালের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জোশুয়া
জেইচনার। এ ধরনের প্রজাতি থেকে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, নতুন কোলাজেনকে
উদ্দীপ্ত করতে সক্ষম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পণ্য স্লাইম তৈরি করা হচ্ছে। এই
উপাদানগুলো বার্ধক্যের গতি কমিয়ে আনতে পারে।
এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের জেল্লা ফেরানোর পাশাপাশি আদ্রতা ধরে রাখতে
শামুকের মিউকাস যুক্ত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। শামুকের মিউকাসে
প্রাকৃতিক ভিটামিন A, E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা যেকোনো ধরনের প্রদাহ
কমিয়ে আনতে বেশ কার্যকরী। শামুকের মিউকাস ত্বকের কোলাজের উৎপাদন ক্ষমতাকে
বাড়াতেও সক্ষম।
শামুক শুধুই পরিবেশ বা কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বর্তমানে ত্বক ও চোখের যত্নে
শামুকের স্লাইম বা নিঃসরণ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশেষ করে স্কিন কেয়ার ও
কসমেটিক জগতে। শামুকের চলাচলের সময় যে আঠালো পদার্থ অনুসরণ হয় তাকে বলা হয়।
এটি শামুকের ত্বক রক্ষা ক্ষত সারানো ও আদ্রতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত
হয়।
এতে থাকা কোলাজেন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সের ছাপ যেমন বলিলেখা দূর
করে, ব্রণের দাগ রোদে পোড়া কালচে দাগ বা ত্বকের রং-এর পার্থক্য সমান করতে
সাহায্য করে। ত্বকের ক্ষত ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষ দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। এটি
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত দেখায়। শুধু ত্বকের জন্য নয় বরং
চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই শামুক এবং আমাদের মানব দেহের কোষ বৃদ্ধি করতেও
বিশাল অবদান রাখে।
চোখের নিচের ফোলা ভাব কালি ও বলিরেখা কমাতে শামুক স্লাইম ভিত্তিক আইস ক্রিম
ব্যবহার করা হয়। এটি চোখের চারপাশের সংবেদনশীল ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করে লাগানো
হয় যা ত্বকে মসৃণ ও সতেজ করে তোলে। শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা তোর হয়েছে তবে ত্বক ও চোখের যত্নে শামুকের ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ
- সারজামিক বা ফোম ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নাও।
- টোনার প্রয়োগ কর।
- নাইল সিরাম বা এসেন্স ব্যবহার কর
- চোখের নিচে আই ক্রিম লাগাও
- ময়েশ্চারাইজার দিয়ে সবকিছু সিল করে দাও
পণ্যগুলোর ধরন
- Snail Serum
- snail Cream
- snail Essence
- Snail Eye Cream
- Snail Sheet Mask
বিশ্ব বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ড যেমন COSRX (Korea) Mizon, Missha ইত্যাদি শামুক
নির্যাস দিয়ে তৈরি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট তৈরি করে। ইতিমধ্যে আপনারা শামুক কি খায় সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। শামুক খাওয়া কি জায়েজ নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন।
শামুক এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব
শামুক এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব। শামুক দেখতে সাধারণ হলেও এর রয়েছে বহুমাত্রিক
অর্থনৈতিক গুরুত্ব। বিশ্বের অনেক দেশের শামুক একটি লাভজনক খামারজাত পণ্য হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ওষধ প্রসাধনী ও কৃষি খাতে। শামুকের
অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- খাদ্য শিল্পে শামুকঃ ইউরোপ এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে শামুক একটি উচ্চমূল্য সম্পন্ন খাদ্য। ফ্রান্সে Escargot নামে শামুক একটি বিলাসবহুল খাবার হিসেবে পরিচিত। শামুকের মাংস প্রোটিন সমৃদ্ধ চর্বিবিহীন, আইরন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন B12 সমৃদ্ধ। অনেক উন্নয়নশীল দেশে শামুক চাষ করে স্থানীয় চাহিদা পূরণ ও রপ্তানি করে আয় করা হচ্ছে।
- রপ্তানি আয়ঃ উন্নত দেশগুলোতে শামুক ও তার স্লাইম এর ব্যাপক চাহিদা থাকাই উন্নয়নশীল দেশগুলো শামুক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। কিছু আফ্রিকান দেশ যেমন ঘানা, নাইজেরিয়া উগান্ডা ইত্যাদি শামুক রপ্তানি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হচ্ছে।
- শামুক চাষে কর্মসংস্থানঃ শামুক চাষ অত্যন্ত সহজ এবং কম খরচে শুরু করা যায়। অনেক গ্রামীণ ও বেকার যুবক-যুবতী সম্মুখ খামারের মাধ্যমে স্বনির্ভর হচ্ছে। এটি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি লাভবান ও নিরাপদ কৃষি উদ্বেগ।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শামুক চাষ করতে দেখা যাচ্ছে এবং কৃষকরা
সহজেই এই শামুক চাষ করার মাধ্যমে দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। এই শামুক চাষের
ফলে দেশে এবং বিদেশে শামুকের চাহিদা বাড়ছে। সেই সাথে শামুকের অর্থনৈতিক
গুরুত্ব ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক শামুক বিক্রেতা জানিয়েছেন, বর্ষার পর নদীর
পানি যখন কিছুটা কমে যাওয়া যায় তখন নদীর পাশে পানির নিচের জঙ্গলে হাত দিয়ে
তিনি এই শামুক খুঁজে বের করেন। ক্রেতাদের মধ্যে অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে
এই শামুকের।
২০১৬ সালে সরকারি ভাবে অনেক জায়গাতেই শামুক চাষ করা হয়। সাধারণত সাতক্ষীরা,
চাঁদপুর এসব অঞ্চলগুলোতে শামুক চাষের পরিমাণ বেশি। এছাড়াও বাংলাদেশের
বিভিন্ন জেলায় শামুক চাষ বাড়ছে। মিঠা এবং লোনা পানিতে শামুক চাষ করা যায়। এই
শামুক বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বেশ মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা
সম্ভব। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই শামুক রপ্তানি করে এবং মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা
উপার্জন করে। বর্তমানে আমাদের দেশের শামুক খাওয়ার চাহিদা কম থাকলেও বিদেশে এর
প্রচুর চাহিদা রয়েছে। শামুক চাষ করা সহজ হওয়ার কারণে চাষিরা দিন দিন এই শামুক
চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে।
শামুক খাওয়া কি জায়েজ
শামুক খাওয়া কি জায়েজ এই প্রশ্নটি ইসলামী শরীয়তের
দৃষ্টিকোণ থেকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।এটা আমাদের সকলের জানা অতীব প্রয়োজনীয় একটি
বিষয়। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে। যেহেতু আজকের আলোচনার বিষয় শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে শামুক খাওয়া কি জায়েজ নিচে বিষয়টি
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
শামুক প্রধানত দুই ধরনের
- জলজ শামুক
- স্থলজ শামুক
জলজ শামুক ( যারা পানিতে বসবাস করে)
- এই ধরনের শামুককে অনেক আলেম মৎস্যজাত প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেন।
- অনেক ফিকহ বিশেষজ্ঞ বলেন সব ধরনের জলজ প্রাণী হালাল। যদি তারা পবিত্র ও ক্ষতিকর না হয়।
- দলিল (প্রমাণ) হাদীসঃ তোমাদের জন্য সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত ( জলজ প্রাণী) হালাল - সুনান আবু দাউদঃ ৮৩
হানাফি মাযহাব অনুযায়ীঃ শুধু মাছ জাতীয় প্রাণী হালাল তাই তারা জলজ শামুক
খাওয়ার ব্যাপারে অনউৎসাহী করেছে । শাফেয়ি মালিকি ও হানবালি মাযহাব
অনুযায়ী, জলজ শামুক জায়েজ ( যদি ক্ষতিকর না হয়)।
স্থলজ শামুক( যারা স্থলে চলাচল করে)-
- এই ধরনের শামুকের শরীর আঠালো কদর্য এবং সাধারণত ঘৃণিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
- এগুলো জাবিহা (শরীয়ত অনুযায়ী জবেহ) না করলে খাওয়া নাজায়েজ বলে বিবেচিত হয়।
- দক্ষিণপূর্ব এশিয়া আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপের মত কিছু কিছু অঞ্চলে মানুষ শামুক খেয়ে থাকে। তবে অন্যান্য অনেক সংস্কৃতিতে শামুককে নিষিদ্ধ খাবার ধরা হয়।
ফ্রান্সে খাদ্য হিসেবে শামুকের বেশ কদর রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে গ্রাম বাংলার
খাদ্য হিসেবেও শামুকের বেশ প্রচলন। ফ্রান্সে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে শামুক
পালন করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত করা হয়। সেখানকার রাধুনীরা বিভিন্ন পদ
রান্না করে পরিবেশন করেন।
ফরাসিদের খাদ্য তালিকায় শামুক অন্যতম আকর্ষণীয় একটি খাবার। বিশেষজ্ঞরা বলেন
ফ্রান্সের মানুষ প্রতিবছর প্রায় বিশ হাজার টন শামুক খেয়ে থাকে। শামুক খাওয়া
অনেকের কাছেই একটি অরুচিকর বিষয় তবুও এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী
হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
শামুকের অপকারিতা
শামুকের অপকারিতা কি? শামুক যেমন পরিবেশ ও অর্থনীতিতে নানা উপকারে আসে তেমনি
কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে বিশেষ করে যদি এদের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত
হয়ে যায়। শামুক স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের অংশ হলেও অতিরিক্ত বংশবিস্তার ও
অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে তারা মানুষের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
তাই সময় মত নিয়ন্ত্রণ না করলে তা স্বাস্থ্য, কৃষি ও অর্থনীতিতে মারাত্মক
প্রভাব ফেলতে পারে। শামুক খাওয়া কি জায়েজ সে সম্পর্কে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন। তবে শামুক খাওয়া অনেক দেশে জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর হলেও যদি
সঠিকভাবে প্রস্তুত না করা হয় তাহলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক হতে
পারে। শামুকের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি তাই অবশ্যই আমাদের
শামুকের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে-
- অর্ধ সিদ্ধ বা কাঁচা শামুক খেলে পরজীবীরা শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটাতে পারে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়।
- শামুক বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস বহন করে এসব জীবাণু খাবার বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে ফলে পেট ব্যথা ডায়রিয়া, বমি, জ্বর ইত্যাদি হতে পারে।
- অনেক মানুষের শামুক বা অন্যান্য সেলফিশের প্রতি এলার্জি থাকে। খাওয়ার পর চুলকানি চোখ ফুলে যাওয়া শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মত লক্ষণ দেখা দেয় যা জীবনঘাতি হতে পারে।
- যদি শামুক দূষিত পানি বা শিল্প বর্জ্যযুক্ত পরিবেশে বাস করে তারা সীসা পারদ ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি বিষাক্ত জমা করে।
- শামুকের মাংস কিছু মানুষের জন্য কঠিন হজম যোগ্য। অতিরিক্ত খাওয়া বা অপরিষ্কারভাবে রান্না করা হলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, অসস্তি বা বদহজম হতে পারে।
- শামুক যদি পর্যাপ্ত ভাবে সেদ্ধ না হয় তবে তাদের শরীরে থাকা জীবাণু সহজে মানুষের শরীরে ঢুকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
শামুক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে যদি তা সঠিকভাবে
রান্না ও প্রস্তুত না করা হয় তবে তা বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে
বন্য শামুক বা অজানা উৎস থেকে সংগৃহীত শামুক না খাওয়াই ভালো।
এখন সব রেস্টুরেন্ট গুলোতে অনেক সুন্দরভাবে শামুক রান্না করে পরিবেশন করছে যার
ফলে বোঝা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে যে, এটা আসলে শামুকের মাংস কিনা এবং তা খুব
সহজেই খেয়ে নেয়া যাচ্ছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।
শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ শামুকে কি কি পুষ্টি থাকে?
উত্তরঃ শামুকে প্রোটিন, আইরন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন B12,
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে, এগুলো শরীরের পুষ্টির জন্য উপকারী।
প্রশ্নঃ শামুকের কি ঠান্ডা রক্ত থাকে?
উত্তরঃ হ্যাঁ শামুক ঠান্ডা রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। তাদের শরীরের তাপমাত্রা
পরিবেশের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্নঃ শামুক কি মানুষকে কামড়াতে পারে?
উত্তরঃ না, সাধারণত শামুক মানুষকে কামড়াতে পারে না। তবে কিছু সামুদ্রিক
শামুকের ধারালো অঙ্গ থাকতে পারে যা দিয়ে তারা ক্ষতি করতে পারে কিন্তু তা
খুবই বিরল।
প্রশ্নঃ শামুক কি মানুষের জন্য বিষাক্ত?
উত্তরঃ না, শামুক সাধারণত মানুষের জন্য বিষাক্ত নয়। তবে কিছু সামুদ্রিক
শামুক রয়েছে যারা বিষাক্ত হতে পারে এবং ক্ষতি করতে পারে। সাধারণ জল বা স্থল
শামুক ক্ষতিকর নয়। তবে কাঁচা খেলে পরজীবী সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্রশ্নঃ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত শামুক কোনটি?
উত্তরঃ পৃথিবীর সব থেকে বিষাক্ত শামুক হল Cone snail (বিশেষ করে Geography
cone) এর বিষ এত শক্তিশালী যে এটি মানুষকেও মারতে পারে।
শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে শামুকের উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে শুরু করে, শামুক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য, শামুকের উপকারিতা, শামুক কি
খায় শামুকের বৈশিষ্ট্য, শামুক কি মানুষের জন্য ক্ষতিকর, ত্বক ও চোখের যত্নে
শামুকের ব্যবহার, শামুক এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব, শামুক খাওয়া কি জায়েজ,
শামুকের অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
শামুক একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাদ্য ও ঔষধি গুণের সমৃদ্ধ, তেমনি অন্যদিকে কিছু
প্রজাতি রোগ ছড়াতে পারে এবং কৃষিতে ক্ষতির কারণ হতে পারে। সঠিকভাবে ব্যবহার
করা হলে এটি মানুষের উপকারে আসে কিন্তু সচেতনতা ছাড়া শামুক থেকে স্বাস্থ্য
ঝুঁকি বা কৃষি ক্ষতি হতে পারে। তাই শামুক ব্যবহারে উপকার ও অপকার দুই
দিকে বিবেচনা করা জরুরী।
বর্তমান সময়ে বিদেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও শামুকের চাহিদা ব্যাপক হারে
বাড়ছে। এই শামুক চাষ করে অনেকে দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। শামুক
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নত করতে বেশ সাহায্য করছে। শামুক প্রকৃতির
জন্য উপকারী হলেও স্বাস্থ্য ও কৃষির দিক থেকে সতর্কতা অবলম্বন করায়
বুদ্ধিমানের কাজ।
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url