বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম- কিভাবে পাবেন সর্বোচ্চ উপকারিতা?

বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। সর্দি কাশি হলেই কি শুধুমাত্র বাসক পাতার পাচন খান? বাসক পাতার উপকারিতা, এবং বাসক গাছের ব্যবহার সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন।
বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
হঠাৎ ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে বুকে কফ জমেছে? কোনভাবেই নিরাময় হচ্ছে না? বাসক পাতাতেই লুকিয়ে আছে এর সমাধান। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম এবং বাসক পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পোস্ট সূচীপত্রঃ বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা/ বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

বাসক পাতা কি/বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন অজানা কিছু তথ্য

বাসক পাতা কি? বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানেন কি? বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, বাসক পাতার ঔষধি গুণ এবং বাসক গাছের ব্যবহার বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে এই বাসক পাতা কি, বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। নাহলে আপনি কিভাবে চিনবেন এই বাসক গাছ এবং ব্যবহারই বা করবেন কিভাবে তাই না। 

বাসুক হলো মাঝারি আকারের চিরসবুজ ঝোপাকৃতির গাছ। এই গাছের উচ্চতা সাধারণত ১ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর শাখা প্রশাখা ছড়ানো এবং ঘন পাতা বিশিষ্ট। বাসক গাছের পাতার ধরন কিছুটা লম্বাটে ডিম্বাকার আকৃতির। পাতার রং গাড়ো সবুজ মসৃণ এবং পাতার কিনারা কিছুটা খাজযুক্ত থাকে। পাতা থেকে তীব্র গন্ধ বের হয় এবং এর স্বাদ তেতো। 

বাসক গাছের ফুল সাধারণত সাদা এবং লাল রঙের হয় মাঝে মাঝে হালকা বেগুনি ঝোপ দেখা যায়। ফুলগুলো শীতের শেষে আর বসন্তকালে ফোটে। ফুলের আকৃতি টিউব আকৃতির হয় এবং এই বাসক গাছে ফলও হয়। এই ফল সরল ও লম্বাটে ক্যাপসুল আকারের। বাসক গাছের ফলের মধ্যে সাধারণত চারটি বীজ পাওয়া যায়। এই বীজের মাধ্যমে মূলত গাছের বংশবিস্তার ঘটে থাকে। 

উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ায় বাসক ভালো জন্মে। এছাড়াও দোয়াশ মাটিতে সব থেকে ভালো হয় এই বাসক গাছ। সাধারণত কাটিং বা বীজের মাধ্যমে রোপন করা হয় এবং কাজটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় বিশেষ যত্ন ছাড়াই। বাসক মূলত দুই প্রকার হয় যথা-
    • শ্বেত বাসক ( সাদা ফুল)
    • রক্ত বাসক ( গাড়ো লাল রঙের ফুল )
এই দুই ধরনের উদ্ভিদের মধ্যে শ্বেত বাসকের ঔষধি গুনাগুন প্রচুর। অনেকে একে সর্ব রোগের মহা ঔষধ বলেও আখ্যায়িত করে। শ্বেত বাসক অনেক ডালপালা যুক্ত হালকা হলুদ রঙের উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ মূলত ১-২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এবং এর বড় বড় পাতা হয় প্রায় সারা বছরই এর পাতা সবুজ রঙের থাকে। শ্বেত বাসকের ফুলের রং সাদা হয় এবং তার উপরে বেগুনি দাগ কাটা থাকে।

আর রক্ত বাশকের ফুলের রং লাল রঙের। এই শ্বেত বাসক বহু আদিকাল থেকেই ভারতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বর্তমানে এটি এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ভালোই কদর বাড়ছে। বাসক গাছ হল এক শক্তিশালী প্রাকৃতিক ওষুধের ভান্ডার বিশেষ করে কাশি ও শ্বাসকষ্টের জন্য। এটি খুব সহজে চাষযোগ্য এবং নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর।

বাসক পাতার উপকারিতা

বাসক পাতার উপকারিতা কথা বলে শেষ করা যাবে না। একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য এটি ভীষণ পরিচিত। চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ হল বাসক প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি বিশেষত তার ঔষধি গুণের জন্য বিখ্যাত। বাসক পাতায় প্রধানত ভেসির নামক একটি অ্যালকালয়েড থাকে যা এর প্রধান ঔষধি শক্তি প্রদান করে।
বাসক পাতার উপকারিতা
শীতের শুরুতেই ঠান্ডা গরমের সমস্যায় সর্দি কাশির প্রকট বাড়ে। আর তা সাড়াতে বাঙালিদের মধ্যে পাচন খাবার রীতি বেশ প্রচলিত। কেননা এই পাঁচনের মধ্যে থাকা বাসক পাতাকে সর্দি কাশির জম বলে মনে করেন তারা। বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো তার আগে চলুন বাসক পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক- 
  • বাসক পাতা শুধু শরীরের পক্ষেই নয় বরং আমাদের ত্বকের পক্ষেও ভীষণ উপকারী। পেট অপরিষ্কার থাকার কারণে অনেকের ব্রণের সমস্যা হয় তারা এই বাসক পাতার রস খেলে উপকারিতা পাবেন। বাসক পাতা যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তেমনি ভাবেই রক্ত পরিষ্কার রাখার মত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • জ্বর, সর্দি কাশি দূর করতে বাসক পাতার উপকারিতাঃ সর্দি কাশির সমস্যা দূর করতে বাসক পাতার ব্যবহার বহু আদি কাল থেকে। আপনার যদি বহু পুরনো সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এক চামচ মধু বাসক পাতার সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি থেকে আরাম পাওয়া যায়। আশা করছি সপ্তাহ খানিকের মধ্যেই কমে যাবে। বাসক পাতা শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভাইরাল ফ্ল বা সাধারণ সর্দি জ্বরের সময় এটি কার্যকরী হতে পারে।
  • চুলকানি প্রতিরোধঃ চুলকানি প্রতিরোধ করতে কয়েকটি বাসক পাতার সাথে এক টুকরো কাঁচা হলুদ একসাথে পেটে চুলকানির জায়গাতে লাগিয়ে রাখলে কিছুদিনের মধ্যেই তা ভালো হয়ে যাবে।
  • কফ প্রতিরোধঃ ঠান্ডা জনিত সমস্যার কারণে বুকে কফ জমে এবং এর থেকে অতিরিক্ত কাশি শুরু হয়। যদি এই কাশি এবং কফের সমস্যা দূর করতে না পারেন তাহলে বাসক পাতার রসের সাথে মধুসহ খেলেই দীর্ঘদিন বুকে জমা থাকা কফ দূর হবে খুব সহজেই। বাসক পাতা কফ তরল করে সহজে ফুসফুস ও শ্বাসনালী থেকে বের করে দেয়।
  • প্রাকৃতিক কফ সিরাপের বিকল্পঃ বাসক পাতার রস বা নির্যাস দিয়ে প্রাকৃতিক কফ সিরাপ তৈরি করা হয়। এতে কৃত্রিম সিরাপ এর চেয়ে বেশি নিরাপদ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন।
  • যক্ষা রোগের চিকিৎসায়ঃ বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এটি যক্ষা রোগ সারাতে কার্যকরী। বাসক পাতাতে এন্টি মাইক্রোবাল উপাদান থাকে যা যক্ষা রোগ সরাতে ভীষণ কার্যকরী এছাড়াও এটি ব্রংকাইটিস কাশির সমস্যা সমাধানেও বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে।
  • প্রস্রাব যন্ত্রণা কমায়ঃ অনেক সময় দেখা যায় প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া অনুভব হয়। বাসক গাছের ফুল বেটে মিশ্রীর সাথে শরবত করে খেলে এই রোগ নিরাময় হবে।
  • ঋতুস্রাবের সমস্যায়ঃ যদি কারো ঋতুস্রাবে সমস্যা থেকে থাকে তাহলে বাসক পাতার রস খেলে এই সমস্যা দূর হবে। অনেকের ঋতুস্রাবের সময়ে অনেক বেশি পেট ব্যথা জনিত সমস্যায় ভুগেন এবং অতিরিক্ত রক্তপাত হয় নিয়মিত এই পাতা খেলে উপকার মিলবে।
  • পাইরিয়া প্রতিরোধঃ দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে অর্থাৎ পাইরিয়া হলে বাসক গাছের পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পানি দিয়ে সেদ্ধ করে সে পানি দিয়ে কুলি-কুচি করলেই এই সমস্যা থেকে উপশম মিলবে।
  • শরীরের নানা দোষ কাটাতেঃ আয়ুর্বেদিক মতে আমাদের দেহে নানা দোষ থাকে যার ফলে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যায় আমরা প্রতিনিয়ত জর্জরিত। আয়ুর্বেদিক মতে শরীরের সুস্থ থাকা নির্ভর করে বায়ু বৃত্ত এবং কফ এই তিনটা বিষয়ের ভারসাম্যের উপরে। এই তিনটার কোন একটি রোগী মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। আপনি যদি বাসক পাতার প্রতিনিয়ত সেবন করতে পারেন তাহলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে।
  • রক্ত পরিশোধনে সহায়কঃ বাসক পাতার নির্যাস রক্ত বিশুদ্ধ করে এবং শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকে এবং সুস্থ থাকে।
  • বাতের ব্যথা উপশমঃ বাতের ব্যথা রোধ করতেও কাজে আসে বাসুক পাতা। বাসক পাতা বাতের ব্যথা কমাতেও বেশ কার্যকরী।
  • মাংসপেশিতে টান ধরলেঃ বাসক পাতার উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটি হলো মাংসপেশিতে টান ধরলে দ্রুত নিরাময় পাওয়া যায়। ধরুন আপনি ব্যায়াম করতে গিয়ে অথবা কোন কারণবশত মাংসপেশীতে টান পড়েছে। তাহলে চুন হলুদ তার সাথে বাসক পাতা বেটে একসাথে মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ প্রাণকৃত জায়গায় মালিশ করুন ধীরে ধীরে কমে যাবে।
  • দাঁতের সমস্যা নিরাময়েঃ বাসক পাতা চিবালে বা এর রস দিয়ে কুলি করলে দাঁত ও মাড়ির রোগ দূর হতে পারে। মারি মজবুত করে এবং মুখে দুর্গন্ধ দূর হয়।
  • শ্বাসযন্ত্রের রোগে উপকারীঃ শ্বাসকষ্ট এবং হাঁপানির জন্য খুবই ভালো কাজে লাগে এই বাসক পাতা রোজ নিয়ম করে খেতে পারলে বহু উপকারিতা পাবেন। বাসক পাতা কাশি সর্দি হাঁপানি ব্রংকাইটিস ইত্যাদিতে দারুন কার্যকর। এটি প্রশমিত করে ও ক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। শ্বাসনালীর জড়তা দূর করতেও সহায়তা করে।
  • রক্তক্ষরণ বন্ধে কার্যকরঃ কোন কাটা বা ক্ষতের উপর বাসক পাতার রস লাগালে রক্তক্ষরণ কমে এবং ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।

বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন

বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন ব্যাপক। বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তো রয়েছেই কিন্তু জানেন কি এর ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে? বাসক গাছের ব্যবহার এবং বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব তবে তার আগে চলুন বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। বর্তমান সময়ে সবকিছুই ভেজাল যুক্ত। আর এই অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। যার ফলে মানুষের অসুস্থ হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ছুটতে হচ্ছে হাসপাতালে।

তবে কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোর প্রতিকার বিভিন্ন ভেষজ উপায়ে করা যায়। আমাদের চারপাশে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আমরা নিজে থেকেই করতে পারি। এরকমই একটি ওষুধি গুনে ভরপুর প্রাকৃতিক একটি উপাদান হচ্ছে বাসক পাতা। আদিকাল থেকেই কার্যকরী ঔষধ হিসেবে বাসক পাতা ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

এর পাতা শুধুমাত্র ঔষধ হিসেবেই নয় এর ফুল বাকল এবং শিকড়েও রয়েছে ঔষধি গুনাগুন। বাসক পাতায় প্রাকৃতিক জীবানু ধ্বংসকারী উপাদান থাকে যা সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। এছাড়াও বাসক পাতাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের কোষগুলিকে ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্য বিলম্বিত করে। বাসক পাতা শরীরকে ডিটক্সিফায় করে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার রাখে। 

বাসক পাতায় প্রধান সক্রিয় কয়েকটি রাসায়নিক উপাদান হলো VAsicine, Vasicinone, Essential Oils, Alkaloids & Flavonoids. এ সকল উপাদানের জন্য বাসক পাতা মূলত একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঔষধের মত কাজ করে। বাসক পাতা শুধু ঔষধি নয় বরং পুষ্টিগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বাসক পাতা হলো ক্ষারীয় যৌগের আঁধার। হ্যাভনয়ের ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। জীবাণু ও প্রদাহ প্রতিরোধকারী এবং শরীর পরিষ্কার ও শক্তিশালী রাখার এক প্রাকৃতিক উৎস।

বাসক গাছের ব্যবহার

বাসক গাছের ব্যবহার অনন্য। বসন্তঋতুতে নানান ফুলের মেলায় বাসক গাছেও যেন হেঁসে ওঠে। তখন বাসকের শুধু সাদা রঙের ফুলের দেখা মেলে না বরং লাল হলদে বা তা মাঠে রঙের হয়। একে তাম্রপুস্পি বাসক বলা হয়। আবার রাম বাসকও বলা হয়ে থাকে। সাথে সিংহপুচ্ছ এবং সিংহচহাস্য ও বলে। এ জাতের সবসময়ই দেখা মেলে না। বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও গুণের দিক থেকে বাসক একই রকম। 

বাসক ফুলের সৌন্দর্যে আমরা যেমন বিমোহিত হয় তার চেয়েও বেশি বিস্মিত করে এই গাছের উপকারিতাই এবং বহুমুখী ব্যবহারে। শুধুমাত্র বাসক পাতা নয় বরং এর মূল, ফুল ও ঔষধ হিসেবে হাজার হাজার বছর আগ থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এই গাছের সব থেকে বেশি ব্যবহৃত অংশ হচ্ছে বাসক পাতা। ছোটবেলায় দাদী-নানিরা সর্দি কাশি সমস্যা হলে বাসক পাতা থেঁতলে তার রস বের করে তার সাথে কিছু লবণের কণা এবং সামান্য গুড় বা মিশ্রী দানা মিশিয়ে খেতে দেখেছি। 

এতে খুব দ্রুতই নিরাময় পেতেন। বা এর সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে খেলে ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথিতে ভীষণই উপকারী একটি ঔষধ হলো এই বাসক। হাঁপানি সর্দি কাশি শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন চিকিৎসায় এর রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। এই বাসক ভারতীয় উপমহাদেশীয় এক ধরনের ভেষজ। কেননা উপমহাদেশে সব জায়গাতেই এটি সহজে পাওয়া যায়। 

এমনকি আফ্রিকাতেও এই গাছ জন্মে থাকে। বীজ এবং শাখা কাটিং করে এর বংশবিস্তার ঘটানো যায়। বাসকের পাতা শুকনো হোক অথবা তাজা হোক উভয় ভাবেই ঔষধের অনেক বেশি কাজে লাগে। এই পাতার নির্যাস সিরাপ বা রস বানিয়ে বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসায় অর্থাৎ সর্দি, কাশি, শ্বাসনালির প্রদাহ জনিত সমস্যাই বিশেষ উপকারী। 

এখন তো বাসকের সিরাপ জাতীয় ঔষধও পাওয়া যাচ্ছে। দুর্গন্ধ নাশক এবং চর্মশোধক হিসেবেও অনেক আগ থেকেই এর ব্যবহার দেখা যায়। এছাড়াও আপনি যদি গোসলের আগে এই বাসক পাতা নির্যাস গায়ে মাখেন মাথায়, মাখেন তাহলে চর্ম রোগের উপকারের সঙ্গে উকুনও দূর হবে। এছাড়া গায়ের ঘাম দূর করতে ভীষণ কার্যকরী এ বাসক পাতা। 

বাসক পাতাতে কিছু ক্ষারীয় উপাদান রয়েছে যার ফলে ছত্রাক হয় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে প্যাকিং এবং সংরক্ষণ এর কাজে ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। এই পাতাতে কিছুটা দুর্গন্ধ বের হয় বলে পশু প্রাণীরা খুব সহজে এতে মুখ দেয় না এর ফলে জমিতে বেড়ার কাজেও এই বাসক গাছের ব্যবহার হতে দেখা যায়। এছাড়াও ফসলি জমির জন্য বাসক পাতা দিয়ে তৈরিকৃত সবুজ সার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক হিসেবেও কাজ করে। 

শুধু তাই নয় বাসক গাছ ভূমিক্ষয় রোধ করতেও ভীষণ কার্যকরী। এত সব ভেষজ গুনে গুণান্বিত গুণের কারণে এই গাছ বিভিন্ন পুকুরপাড়, বাগান, ছোট বড় রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইল, বাঁধের ধার, পতিত জমিতে ও লাগাতে দেখা যায়। আজকাল তো চায়ের উপকরণ হিসেবে বাসক পাতা খাওয়া হচ্ছে। বাসক পাতা শুকিয়ে গুড়া করে হারবাল চা বানানো হয় যা শরীর ডিটক্সিফাই করে। 

এছাড়াও এই পাতা থেকে এক ধরনের রঙ তৈরি করা হচ্ছে। বাসক বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থাতেও নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম।  বাসক গাছের ছাল বা মন মূল সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ফোলা ভাব ও ব্যথা কমে। শুধু শরীরের পক্ষেই নয় ত্বকের যত্নেও বাসক পাতার ব্যবহার অনস্বীকার্য। যেমন কিছু হারবাল ফেসপ্যাক স্কিন ক্রিমে বাসক পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয় কারণ এটি ত্বক পরিষ্কার ও ব্রণ নিরাময়ে সহায়ক। 

বাসকের একটি মজার ব্যবহার হচ্ছে এটি টিউমার হয়েছে কিনা বোঝার জন্য প্রাচীনকালে বাসক পাতার ব্যবহার করা হতো। কারো টিউমার হলে বাসক পাতার রস খাইয়ে শরীরের আদৌ কোথাও টিউমার হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা হতো। আশা করছি নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং বাসক গাছের ব্যবহার সম্পর্কে। 

বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম যথাযথভাবে মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায় এবং কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি না করে। বাসক পাতার রস ম্যাজিক এর মত দূর করে সর্দি-কাশি, বুকে জমে থাকা কফ। এছাড়াও মিলবে হাজার উপকারিতা। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতেও অনেক বেশি সহায়ক। বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সাথে তাই জেনে নিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।
বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
যদি বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে এর কোন উপকারিতা পাবেন না। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বাসক পাতার রস অনেকে ফুটিয়ে সিরাপ করে খান। এটা একদমই ঠিক নয় কেননা বাসক পাতার রস গরম করে খেলে এর সব উপকারি গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায় ফলের যথাযথ ফলাফল মিলে না। তাই বাসক পাতা কোনভাবেই ফোটাবেন না।

বাসক পাতার রস প্রস্তুত করার পদ্ধতি
কিভাবে তৈরি করবেনঃ 
  • প্রথমত বাসক গাছের ৭ থেকে ১০ টি সতেজপাতা সংগ্রহ করুন। সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ডারে সামান্য পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছাকনা দিয়েছে কে রস বের করে নিতে হবে।
পরিমাণঃ 
  • দিনে ১ থেকে ২ চা চামচ 5 থেকে 10 মিলিমিটার খাওয়াই যথেষ্ট।
খাওয়ার সময়ঃ 
  • সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। অথবা বিকালে খাবারের এক থেকে দুই ঘন্টা পরে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে দিনে দুইবার খেতে পারেন।
কিভাবে খাবেনঃ 
  • কাঁচা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন তবে এটা একটু তিতা সাদযুক্ত। সরাসরি রস খেতে পারেন অথবা একটু সামান্য মধু আদা রস বা তুলসী পাতা মিশিয়ে খেলে ভালো স্বাদ পাবেন এবং কার্যকারিতা বাড়বে।
কতদিন খাবেনঃ 
  • সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন খাওয়ায় যথেষ্ট এক মাসের বেশি না খাওয়াই ভালো বিশেষ রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদি চলতে পারে।
বাসক পাতার রস খাওয়ার বিকল্প উপায়ঃ
    • বাসক পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করা যায়।
    • বাসক পাতার গুড়া বাজারে পাওয়া যায় সেটা হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
    • বাসক পাতার সিরাপও ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।

বাসক পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

বাসক পাতার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিলে আপনি সতর্কতা অবলম্বন করে এর ব্যবহার করতে পারবেন। বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনেছেন। যেহেতু আজকের আলোচনার বিষয় বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তাই এর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। বাসক পাতা প্রাকৃতিক ঔষধি হলেও ভুল মাত্রা বা অনুউপযুক্ত ব্যবহারে কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে যা জানা অত্যন্ত জরুরী।
    • হজমের সমস্যাঃ বাসক পাতা বেশি মাত্রায় খেলে পেটের সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা মত সমস্যার দেখা দিতে পারে। কেননা বাসক পাতার কিছু উপাদান অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়াতে পারে।
    • গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিঃ বাসক পাতা গর্ভাশয়ের সংকোচন ঘটাতে পারে। ফলে গর্ভপাত বা প্রি-ম্যাচিওর ডেলিভারি হতে পারে। তাই গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য বাসক পাতা সেবন না করাই উত্তম।
    • এলার্জি প্রতিক্রিয়াঃ কারো কারো শরীরে বাসক পাতার উপাদানের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে ফলে ত্বকের চুলকানি বা ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া চোখে পানি পড়া বা লাল হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। যারা আগেও কোন গাছ বা ভেষজ পণ্যে এলার্জিক ছিলেন তারা সাবধানে থাকবেন।
    • ওষুধের সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়াঃ আপনি যদি ইতিমধ্যে কোন ঔষধ সেবন করে থাকেন তাহলে বাসক পাতা নেওয়ার আগে ডাক্তারকে জানান। কেননা বাসক কিছু ওষুধের কার্যক্ষমতা কমাতে বা বাড়াতে পারে। বাসক পাতা কিছু মেডিকেল ওষুধের বিশেষ করে শ্বাসনালীর ঔষধ, অ্যান্টি হাইপারটে সিড ওষুধ ইত্যাদির সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারে। ফলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা প্রয়োজনের চেয়েঅতিরিক্ত কাজ করতে পারে।
    • রক্তচাপ কম থাকলে সাবধানতাঃ যাদের রক্তচাপ আগে থেকেই কম বাসক তাদের আরও প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে। তাই হাইপোটেনশনের রোগীরা সতর্ক থাকবেন বা চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
    • অতিরিক্ত ব্যবহারে শরীর অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়াঃ বাসক পাতার রস শরীরের ভেতরের মিউকাস শুকিয়ে দিতে পারে। ফলে গলা শুকিয়ে যাওয়া, শরীরে পানি শূন্যতা অনুভব হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ৫ থেকে 15 দিনের মধ্যে সাধারণত থেরাপি শেষ করা উচিত। বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তার দেখিয়ে সময় বাড়ানো পারেন।
    • শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা: পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বাসক পাতা বা রস নিজে থেকে দিবেন না। চিকিৎসকের নির্দিষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী অল্প মাত্রই ব্যবহার করতে হবে।
বাসক পাতা সেবন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবশ্যই মাথায় রাখতে হয় কারণ এটি ঔষধি গাছ- সঠিক নিয়ম না মানলে উপকারের বদলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন-
    • বাসক পাতার সীমিত পরিমাণে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
    • নিজে থেকে দীর্ঘদিন বাসক পাতা সেবন করবেন না।
    • গর্ভবতী, ছোট শিশু এবং গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে আগে চিকিৎসকের অনুমতি নেওয়া জরুরী।
বাসক পাতা ঔষধি শক্তি সম্পন্ন তাই এটিকে সাধারণ খাবারের মতো নয় বরং পরিমিতি উপযুক্ত সময় এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবহার করাই নিরাপদ।

বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ বাসক পাতার স্বাদ কেমন?
উত্তরঃ বাসক পাতার স্বাদ তেতো ধরনের হয় কখনো কখনো একটু কষা বাঝাঝালো অনুভূত হয়। মূলত ঔষধি গাছ হাওয়ায় এর স্বাদ তেমন ভালো নয়।

প্রশ্নঃ কাশির জন্য কোন পাতা সব থেকে ভালো?
উত্তরঃ কাশির জন্য তুলসীপাতা সব থেকে ভালো। এছাড়াও বাসক পাতা ও পুদিনা পাতা ও বেশ কার্যকর।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন কয়টি বাসক পাতা খাওয়া যাবে?
উত্তরঃ প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি বাসক পাতা খাওয়া নিরাপদ। তবে বেশি না খাওয়াই উত্তম। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমাণ ঠিক করা সবচেয়ে ভালো।

প্রশ্নঃ বাসক পাতার ইংরেজি এবং বৈজ্ঞানিক নাম কি?
উত্তরঃ বাসক পাতার ইংরেজি নাম হল Malabar Nut এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Justicia adhatoda।

প্রশ্নঃ বাসক পাতা কখন খাওয়া উচিত?
উত্তরঃ বাসক পাতা খাওয়া উচিত যখন কাশি, ঠান্ডা, হাঁপানি বা গলা ব্যথার মত সমস্যার দেখা দেয়। তবে সকালে খালি পেটে এবং রাত্রে খাওয়ার পরে বা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া সব থেকে ভালো। চাইলে বাসক পাতা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারবেন।

বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে বাসক পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে শুরু করে বাসক পাতা কি/বাসক গাছের বৈশিষ্ট্য, বাসক পাতার উপকারিতা, বাসক পাতার ঔষধি গুনাগুন, বাসক গাছের ব্যবহার, বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, বাসক পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

বাসক পাতা ব্যবহার করার আগে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। কেননা পরিবেশের নোংরা, ধুলাবালি পাতার উপরে পড়ার ফলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে। বিশেষত বাচ্চাদের বেলায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত বাসক পাতার সঠিক ব্যবহার এর মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। তাই এর সঠিক ব্যবহার করুন এবং সকল উপকারিতা উপভোগ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url