গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়ার ভয়ংকর ফল- সন্তানের বিপদকি নিশ্চিত?

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় বিপদের আগেই জানুন। পানির অপর নাম জীবন। আর গর্ভাবস্থায এমন একটি সংবেদনশীল অবস্থা যে সময় শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে কি হতে পারে চলুন আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নেয়া যাক। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় দিকগুলো তুলে ধরব।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক মা এবং শিশুর সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম জানাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয় আরো জানাবো গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ সমূহ ।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়/ গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় তা জানা আমাদের সকলের জন্যই অত্যাবশ্যকীয়। কখনো কি ভেবে দেখেছেন গর্ভকালীন সময়ে যে সকল ভিটামিন গ্রহণ করা হয় এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান সেগুলো আপনার গর্ভে পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছে থাকে? এত সবকিছুর প্রক্রিয়া সাধারণত পানির মাধ্যমেই শুরু হয়। প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পুষ্টি শোষণ করে শরীরের কোষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পানি আপনার দেহকে সাহায্য করে। 

এছাড়াও সকল ধরনের ভিটামিন, মিনারেল, অন্যান্য হরমোন যেন রক্ত কণিকায় পৌঁছে সে ব্যাপারেও পানি আপনার শরীরকে অনেক বেশি সাহায্য করে। আর এই সকল সমৃদ্ধ রক্তকণিকা গুলো পরবর্তী সময়ে প্লাসেন্টাতে পৌঁছে যায় এবং সর্বোপরি গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটাই মূলত পানির সাহায্যেই হয়ে থাকে। 

তাই গর্ভকালীন সময় থেকে শুরু করে একেবারে শেষ সময় পর্যন্ত মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। পানির অপর নাম জীবন বলা হয় কেননা পানি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। শরীরে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে রক্ষা করতে পানির ভূমিকা অপরিহার্য। 

স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যদি সঠিক নিয়ম মেনে এবং সঠিক পরিমাণে পানি না খায় তাহলে শরীরে ডিহাইড্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পানি প্রতিনিয়ত এমন একটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় উপাদান যা আমরা প্রতিনিয়ত পান করে থাকি এছাড়াও অন্যান্য কাজে পানির অবদানের কথা আমাদের সকলেরই জানা। এই পানি ছাড়া আমরা অচল। 

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয়? পানি কম খেলে শরীরের ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা দেখা দিতে পারে যা আপনার প্রসবের সময় অনেক বড় কোন সমস্যার কারণ হতে পারে। আপনার শরীরের পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন হবে না, পানি কম খাওয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিবে, সেই সাথে খিচুনির সমস্যাও বাড়তে পারে। এতে করে আপনি এবং আপনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। 

গর্ভকালীন সময়ে শরীরের পানির ঘাটতি দেখা দিলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। গর্ভের পানি শিশুর জন্য একটা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শিশুর জন্য সহনশীল একটা পরিবেশ তৈরি করে দেয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভের এই তরল পরীক্ষা করলেই বোঝা যায় যে শিশুর কোন সমস্যা আছে কিনা। অ্যামিনিয়োটিক ফ্ইলুড হলো এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ। 

এটি সাধারনত গর্ভে শিশুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিশুর হাত-পা পেশি গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একসাথে বেশি করে পানি না খেয়ে সারা দিনে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করলে আপনার জন্য সহজ হতে পারে এবং অস্বস্তির কমতে পারে। কিন্তু একটা প্রশ্ন হচ্ছে যে আপনি কিভাবে বুঝবেন পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা বা প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি পান করছেন কিনা তাই না? 

এক্ষেত্রে আপনি প্রস্রাবের সময় খেয়াল করে দেখতে পারেন যদি প্রস্রাবের রং ধূসর অথবা রংবিহীন হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক আছে। গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়া মা ও গর্ভস্থ শিশুর জন্য বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • অ্যামিনিয়োটিক ফ্ইলুড পরিমাণ কমে যেতে পারেঃ  অ্যামিনিয়োটিক ফ্ইলুড হচ্ছে সেই তরল যা গর্ভস্থ শিশুকে ঘিরে রাখে। এটি শিশুকে নিরাপদ রাখে এবং তার বৃদ্ধি ও বিকাশের সহায়তা করে। মা যদি পর্যাপ্ত পানি না খান তাহলে এই তরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে যা শিশুর বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাবে। এবং প্রি-টার্ম ডেলিভারি বা জটিল প্রসবের আশঙ্কা বাড়ায়।
  • ডিহাইড্রশন( পানি শূন্যতা)ঃ পানি কম খাওয়ার ফলে মায়ের শরীরে ডিহাইড্রেশন হতে পারে এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা যেমন মাথা ঘোরা, দুর্বলতা অনুভব হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা এমনকি ইউরিন এর পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ইউরিন গারো হলুদ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভকালীন জটিলতাঃ ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন। পানি কম খেলে ইউরিন সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। গর্ভকালীন হাইপারটেনশন এধরনের সমস্যাকে তীব্র করতে পারে।
  • শিশুর কম ওজন বা জন্মগত সমস্যাঃ যথেষ্ট পানি না খাওয়ার কারণে শিশুর রক্ত সঞ্চালন ও পুষ্টির প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে। ফলে শিশুর ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে এবং কখনো কখনো জন্মগত সমস্যা ও দেখা দিতে পারে।
  • মায়ের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাতঃ গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোম পানি পান করলে গরমে সহজে ক্লান্তি বা হিট স্ট্রোক হতে পারে।
এতক্ষণ আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সেই সম্পর্কে। আশা করছি বিস্তর ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও আমরা জানব গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক এবং গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক

গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক। গর্ভাবস্থা কালীন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি গর্ভাবস্থায় শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে তা মা এবং শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর এই অবস্থাকে চিকিৎসকের ভাষায় অলিগোহাইড্রেমোনিওস বলে। 
গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক
সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন দু লিটার পানি পান করতে হয়। তাহলে ভাবুন তো একজন সাধারন মানুষ যদি দিনে ২ লিটার পানি খেয়ে থাকে তাহলে একজন গর্ভবতীর দৈনিক কত লিটার পানির প্রয়োজন। আর এই পানি যদি কোন গর্ভবতী মা খাওয়া কমিয়ে দেয় তাহলে কি হতে পারে? গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা সুস্থ থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত তান কি আপনার জানা আছে? গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশন কিন্তু অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর এই ক্ষতির মাত্রা শুধুমাত্র আপনার জন্য নয় বরং আপনার গর্ভস্থ শিশুরও ক্ষতি করতে পারে। আমাদের শরীরে সাধারণত ৬০ শতাংশই পানি দিয়ে পূর্ণ থাকে। 

এই পানি শরীরের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিনকে বের করে দিতে সাহায্য করে। শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের এত কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই পানির অপর নাম জীবন বলে আখ্যায়িত করা হয়। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরী কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গর্ভাবস্থায় এই পরিমাণ টা ঠিক কতখানি? 

এই সময়টাই গর্ভবতী মায়ের অত্যন্ত বেশি সাবধানে থাকতে হয় প্রেগনেন্সিতে নানারকম জটিলতার দেখা দিতে পারে। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ২ লিটার পানি পান করা জরুরী কিন্তু শরীরের ভেতরে যদি আরও একটি প্রাণ বেড়ে ওঠে তখন তার কথাও আমাদের ভাবতে হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার দৈনিক ২ লিটারের উপরে অতিরিক্ত ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করুন। 

তবে এই পরিমাণটা সবার জন্য কিন্তু এক নয়। কেননা আপনি যদি বেশি ওভারওয়েট হন, আবার আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খান তাহলে আপনার পানির পরিমাণও বাড়াতে হবে। অনেক সময় এমনও হতে দেখা যায় যে আমাদের মনে হচ্ছে যে আমরা অনেক বেশি পানি পান করছি কিন্তু ভেতরে ভেতরে ডিহাইডেট হয়ে যাচ্ছি। 

তাই শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করাও জরুরী। আবার শিশুর জন্মদানের পর মায়েদের ঘন ঘন অনেক বেশি পিপাসা পেয়ে থাকে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই পিপাসা মেটানোর জন্য পানির সাথে বিভিন্ন ফলের রস খেতে পারেন। কিন্তু শিশুর ব্রেস্ট ফিডিং এর জন্য বেশি পরিমাণে পানি খাওয়াই ভালো। 

তবে এটাও মনে রাখা জরুরী যে আপনার শারীরিক গঠন অনুযায়ী এবং শিশু কতটা পরিমাণ ব্রেস্টফিড করছে তার উপরে অনেক সময় অধিকাংশ সময় নির্ভর করে মায়ের পানি পান করার পরিমাণ।  গর্ভাবস্থায় শরীরে পানির পরিমাণ এবং গর্ভস্থ শিশুকে ঘিরে থাকা অ্যামিনোটিক ফ্লুইড পরিমাণ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক? 

গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ অর্থাৎ অ্যামিনোটিক ফ্লুইড এর পরিমাণ ৫ সেন্টিমিটার থেকে ২৫ সেন্টিমিটার থাকা স্বাভাবিক। অ্যামিনোটিক ফ্লুইড গর্ভকালীন সময়ে শিশুর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে। এর পরিমাণ মাপার জন্য সাধারণতঅ্যামিনোটিক ফ্লুইড ইনডেক্স ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক অ্যামোনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর মাত্রা-
    • গর্ভকালীন সময়ের ১৪ থেকে ১৮ সপ্তাহ পর্যন্ত এর স্বাভাবিক মাত্রা ৮ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার হওয়া স্বাভাবিক ধরা হয়।
    • 20 থেকে 35 সপ্তাহ পর্যন্ত এমন নিয়োগ ফ্লাইট ইনডেক্সের স্বাভাবিক মাত্রা ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
    • এবং ৩৬ সপ্তাহের পর এটি ধীরে ধীরে কমে গিয়ে ৫ থেকে ১৫ সেন্টিমিটারে চলে আসে।

গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম কি আপনার জানা আছে? গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়া শুধু মায়ের শরীরের জন্যই নয়, গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা ও বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, হরমোন, রক্ত প্রবাহ এবং প্লাসেন্টার কার্যক্রমকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন তাই চলুন গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-
    • দৈনিক পরিমাণঃ গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত? গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে 10 থেকে 12 ক্লাস পানি খাওয়া উচিত। গরম আবহাওয়া বেশি ঘাম হলে বা ব্যায়াম করলে পানির চাহিদা আরো বাড়ে।
    • নিয়মিত বিরতিতে পানি পানঃ একবারে অনেক পানি না খেয়ে সারা দিনে ছোট ছোট বিরতিতে পানি পান করা ভালো। প্রতি ঘন্টায় অন্তত একবার পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
    • খালি পেটে ও ঘুম থেকে উঠে পানি পান করুনঃ সকলে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করলে হজম ভালো হয় ও শরীর পরিষ্কার হয়। খাবার খাওয়ার আগে বা ৩০ মিনিট পরে পানি খেলে হজমে সহায়তা করে। খাবারের সময় অতিরিক্ত পানি হজম রস খেয়ে পাতলা করে দিতে পারে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পান করতে পারেন। তবে খুব বেশি না খাওয়াই ভালো যাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ না আসে।
কোন ধরনের পানি খাওয়া উচিত?
    • ফিল্টারকৃত বা ফুটানো পানিঃ পানি জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে।
    • গরমকালে হালকা ঠান্ডা পানিঃ একেবারে বরফ ঠান্ডা নয় হালকা ঠান্ডা পানি খাওয়া ভালো।
    • ফলের পানি বা ডাবের পানিঃ যে কোন ধরনের ফলমূলের পানি বা ডাবের পানি খেলে শরীরের পক্ষে উপকারে আসবে। বিশেষ করে যদি শরীরে পানির ঘাটতি থাকে।
পানি খাওয়ার কিছু অতিরিক্ত টিপসঃ
    • সাথে সবসময় একটি পানির বোতল রাখুন।
    • স্মার্টফোনে পানি খাওয়ার রিমাইন্ডার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
    • পানির সাথে লেবু, পুদিনা, শশা মিশিয়ে হালকা ফ্লেভার যুক্ত করে নিতে পারেন। এতে পুষ্টি ও রুচি দুটোই বাড়বে।
গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে মা সুস্থ থাকবে এমনকি শরীরে পানির পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকবে এবং গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত হবে। এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস।

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ

গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ। গর্ভাবস্থা কালীন একজন মা বিভিন্ন রকম জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। কখনো কখনো এসব জটিলতার কারণে মা ও শিশু উভয়েরই জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়া বা অ্যামিনিয়োটিক ফ্লুইড কমে যাওয়া তার একটি লক্ষণ। গর্ভধারণের যেকোনো সময়ই এটি হতে পারে তবে সাধারণভাবে দেখা যায় গর্ভাবস্থা কালীন শেষের দিকে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে যেমন জানা জরুরী তেমনি গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোও জানা প্রয়োজনীয়। তার আগে চলুন গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা দেখে নেয়া যাক। গর্ভাবস্থায় গর্ভ ফুলের পানি কমে যাওয়া বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো-

    • পানি শূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনঃ মা যদি যথেষ্ট পরিমাণে পানি না পান করেন তাহলে শরীরে তরলের পরিমাণ কমে যায় যা এমনিওটিক ফ্লোরিডের পরিমাণেও প্রভাব ফেলে।
    • গর্ভস্থ শিশুর কিডনির সমস্যাঃ শিশু গর্ভে থাকাকালীন অ্যামিনিয়োটিক ফ্লুইড এর একটি বড় অংশ তৈরি করে তার প্রস্রাবের মাধ্যমে। যদি শিশুর কিডনি গঠন বা কার্যক্ষমতা এই সমস্যা থাকে তাহলে সে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব করতে পারেনা ফলে পানি কমে যায়।
    • গর্ভকালীন দীর্ঘমেয়াদি রোগঃ যদি গর্ভকালীন দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, লুপাস এই রোগ গুলো প্লাসেন্টাই রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয় ফলে পানি উৎপাদন কমে যায়।
    • গর্ভফুলের সমস্যাঃ যদি প্লাসেন্টা ঠিকমতো কাজ না করে অর্থাৎ বাচ্চার দিকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বা পুষ্টি না যায় তাহলে শিশুর প্রস্রাব কমে যায় এবং পানি শূন্যতা হয়।
    • বহু গর্ভধারণঃ যেমন পেটে জমজ বা ত্রৈমাত্তিক সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে যদি একজন বেশি পানি গ্রহণ করে আর অন্যজন কম তাহলে এক শিশুর পানি কমে যেতে পারে।
    • ওষুধ বা চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ কিছু ঔষধ রয়েছে যেমন উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ দীর্ঘদিন ব্যবহারে পানি কমে যেতে পারে।
    • জেনেটিক বা জন্মগত ত্রুটিঃ কিছু শিশুর গঠনগত সমস্যা যেমন মূত্রনালী বন্ধ থাকা বা কিডনির অভাব থাকলে তারা প্রস্রাব করতে পারে না ফলে পানি তৈরি হয় না।
শিশুরা মাতৃগর্ভের মধ্যে সাধারণত একটি তরলের মধ্যে থাকে। এই তরলটিকে অ্যামিনোটিক ফ্লুইড বলে। গর্ভধারণ করার 12 দিনের মধ্যে এই অ্যামিনোটিক ফ্লুইড উৎপন্ন হয়। ৩৪ থেকে ৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে যায় প্রায় এক লিটার হতে পারে। এই সময়ের পর থেকে শুরু করে প্রসবের আগ পর্যন্ত পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। আর এই কমে যাওয়ার পেছনের কারণ সবসময় নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার কিছু প্রধান লক্ষণগুলো দেখে নেয়া যাক- 

  • পেটের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট মনে হওয়া। গর্ভকাল অনুযায়ী পেটের আকৃতি বা গঠন একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। যদি পানি কমে যায় তাহলে পেটের বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হতে পারে যা ডাক্তার মাপ যোগ করে বুঝতে পারবেন।
  • শিশুর নড়াচড়া অনুভব কম করা। গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে তা হতে পারে পানির অভাবের কারণে। কারণ এমনি শিশুর চলাফেরা সহজ করে তোলে। পানি কমে গেলে শিশু এক রকম সংকুচিত অবস্থায় থাকে।
  • যোনি পথ দিয়ে পানির মত তরল বের হওয়ার সম্ভবনা। গর্ভকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি পানি ভেঙ্গে যায় তবে এটি অ্যামিনিয়োটিক ফ্লুইড এর লক্ষণ হতে পারে।
  • আল্ট্রাসাউন্ডে অ্যামিনিয়োটিক ফ্লুইড ইনডেক্স কম পাওয়া। এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় সাধারণভাবে এএফআই যদি ৫ সেন্টিমিটারের নিচে হয় তাহলে বুঝতে হবে পানি কম। ৮ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার হলে স্বাভাবিক এবং ২৪ সেন্টিমিটারের বেশি হলে শরীরে পানির পরিমাণ বেশি।
  • তলপেটে চাপ বা ব্যথা অনুভব হওয়া। অনেক সময় তলপেটে চাপ বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। এটি পানি কমে যাওয়ার কারণে গর্ভাশয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • প্রস্তাবের পরিমাণ ও রঙে পরিবর্তন। ডিহাইড্রেশন এর ফলে প্রস্রাবের রং গাড়ো হতে পারে এবং পরিমাণ কমে যেতে পারে। এটি শরীরের পানি কমে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে যদিও এটি সরাসরি অ্যামেনিয়টিক ফ্লুইড কমার লক্ষণ নয় তবে ঝুঁকি নির্দেশ করতে পারে।
  • যে কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ বা গাইনোকলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে আল্ট্রা সাউন্ড করে পানি মাপা হয় এবং দরকার হলে স্যালাইন পানীয় তরল দেয়া হয় বা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ একটি সতর্ক বার্তা। এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা না করলে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে বা প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় কি? গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে তেমন কোন রোধ করার উপায় নেই তবে নিয়মিত চেকআপ করতে পারেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মত চললে এরকম দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যাবে।
গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়
    • গর্ভাবস্থায়ী পানি ভাঙার সমস্যা সাধারণত গর্ভাবস্থায় একটা পর্যায়ের উপর নির্ভর করে। ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পরে যদি এই পানি ভাঙ্গার সমস্যা শুরু হয় তাহলে শিশুর নিরাপত্তার জন্য ডক্টর অনেক সময় ডেলিভারি করিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন।
    • আর এই সমস্যা যদি ২৪ সপ্তাহের আগেই শুরু হয় তাহলে সেটি শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং ক্লোজ মনিটরিং এ রাখতে হবে।
    • ৩৪ সপ্তাহ পরে যদি এই সমস্যাটা শুরু হয়ে থাকে তাহলে গর্ভাবস্থার কথা বিবেচনা করে মাকে সম্পূর্ণভাবে বেড রেস্টে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এবং এ বেড রেস্টে রেখে ৩৭ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তারপরে ডেলিভারি করা নিরাপদ হবে ততদিনে শিশুটির পৃথিবীতে টিকে থাকার মত তার বিকাশ ঘটবে নয়তো শিশু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
    • গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। গর্ভাবস্থা কালীন দৈনিক অন্ততপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি যদি সাধারণ পানি না খেতে পারেন তাহলে নারিকেলের পানি, ফলের রস বা সুপ খেলেও পানি শূন্যতা অনেকটা কমে আসবে।
    • এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করতে পারেন। নিয়মিত ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকুন চেকআপ করান। ডাক্তার অ্যামনিওটিক ফ্লুইড বাড়ানোর জন্য কিছু ইনজেকশন বা ওষুধ দিতে পারেন এমনকি স্যালাইন দেওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।
    • এই সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এমন কিছু খাবার গ্রহণ করুন যেগুলো জলীয় অংশ বেশি। যেমন কমলা, তরমুজ, শসা ইত্যাদি ফলমূল। এছাড়াও প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খান। সুষম খাবার গ্রহণ করলে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকবে।
    • এই সময়টাই অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও অন্যতম একটি জরুরী কাজ। তাই এই মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন।
    • গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় হচ্ছে অতিরিক্ত দুশ্চিন্ত না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। তার তত্ত্বাবধানে থাকা তাহলে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। তাই ভয় না পেয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন নিরাপদে পৃথিবীর আলো দেখুক শিশু।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় এবং তা প্রতিরোধের কিছু উপায় মেনে চলতে পারেন। পানি শূন্যতা থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায় শুধু কেবল পানিই নয়। পানি সব থেকে ভালো হলেও যখন আপনার আশেপাশে পানি থাকবে না বা পানি সাধারণভাবে খেতে ইচ্ছা করবে না তখন কি করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক- অনেক পানি জাতীয় দ্রব্য রয়েছে যেটা আপনার শরীরের পানি শূন্য থাকে দূর করবে যেমনঃ-

  • পানীয়তে বৈচিত্র্যতা আনতে পারেনঃ অনেক সময় আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে স্বাভাবিক পানি পান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। তাই আপনি পানি খাওয়াতে একটু বৈচিত্র আনতে পারেন যেমনঃ স্বাভাবিক পানির পরিবর্তে লেবুর শরবত বানিয়ে খেতে পারেন অথবা নারিকেল পানি পান করতে পারেন যা শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়াও পানির মধ্যে পুদিনা পাতা এবং শসা যোগ করে ডিটক্স ওয়াটার বানিয়ে খেতে পারেন।
  • মনে রাখবেন আমাদের খাবার থেকেই শতকরা বেশিরভাগ পানি আমরা পেয়ে যাই। কেননা ফলফলাদের মধ্যেই অনেক বেশি পরিমাণে পানি থাকে। যেমন এক কাপ তরমুজের মধ্যে পাবেন ৫ আউন্স পরিমাণ পানি। এছাড়াও মাঝারি আকৃতির নাশপাতি স্ট্রবেরি এক কাপ সাড়ে আউন্স পরিমাণ পানি থাকে। এছাড়াও মাঝারি আকৃতির একটি কমলার মধ্যে ৪ আউন্স পরিমাণ পানি রয়েছে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম মেনে প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরী। যদি অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া থাকে এবং শরীর থেকে বেশি ঘাম ঝরে তাহলে আরো বেশি পানি পান করুন।
  • পানির বোতল সঙ্গে রাখুনঃ সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যে যদি পানি পান করার কথা মনে না থাকে তাই সাথে করে একটি পানির বোতল রাখতে পারেন। এতে করে আপনি একটু পরপর পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারবেন একেবারে বেশি পানি না খেয়ে ছোট ছোট চুমুকে পানি খেয়ে ফেলুন।
  • জলীয় খাবার খানঃ গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় হলো বিভিন্ন ধরনের জলীয় খাবার খেয়ে শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক রাখা। যেমন তরমুজ, কমলা, আনারস, স্ট্রবেরি, শসা এবং সুপের মতো বিভিন্ন ধরনের জলীয় খাবার আপনার শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
  • বিশ্রাম নিনঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন এ সময় বেশি পরিশ্রম না করাই ভালো। বাম দিকে শুয়ে বিশ্রাম নেওয়া শিশুর দিকে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় ফলে প্লাসেন্টা আরো ভালোভাবে কাজ করে এবং এমনইওটিক ফ্লরিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কফি এবং ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় কম পান করুনঃ অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইনযুক্ত সকল ধরনের পানীয় যেমন চা অথবা কফি কিংবা সফট ড্রিঙ্ক কম পান করার চেষ্টা করুন। কেননা এগুলো বেশি পরিমাণে পান করলে শরীরে পানি শূন্যতা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয় কি? প্রসবের সময়টা যত বেশি ঘনিয়ে আসে গর্ভবতী মায়েদের প্রসব প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন বিষয় এ চিন্তা যেন তত বাড়তে থাকে। শরীরের পানি কমে যাওয়া বা পানি বেশি পরিমাণে বেড়ে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম। গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয় দিকগুলো তো জানলেন, চলুন এখন গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেই-

গর্ভকালীন সময়ে প্রত্যেকটা নারীর খাওয়া দাওয়া ব্যাপারে অনেক বেশি নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ সময় গ্যাসের সমস্যা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। তাই এই সময়টাই অনেক বেশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল থাকলে তাকে পলিহাইড্রামনিওস বলে। 

গর্ভকালীন সময়ে চেকআপ করলে এই সমস্যা নির্ণয় করা সম্ভব। খুব জটিল কোন সমস্যা না হলেও এক্ষেত্রে চেকআপ করা প্রয়োজন। এই পলিহাইড্রামনিওস বা তরল যদি খুব অল্প পরিমাণে বাড়ে তাহলে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না তবে খুব বেশি পরিমাণে যদি বেড়ে যায় তাহলে নিচের লক্ষণ গুলো দেখা যেতে পারে-
    • শ্বাসকষ্ট
    • কোষ্ঠকাঠিন্য
    • বুক জ্বালাপোড়া
    • পেট ব্যথা
    • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব ত্যাগ করা
    • পা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া
  • এছাড়াও অতিরিক্ত তরলের ফলে জরায়ু বেশি বড় হয়ে আশেপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন পাকস্থলী ফুসফুস চাপ সৃষ্টি করতে পারে এ সকল বাড়তি চাপ থেকেই লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এ সময় বেশি চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
  • সাপ্তাহিক আল্টার সাউন্ড করে শিশুর অবস্থান, নারীর হার এবং পানির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এক্ষেত্রে Non Stress Test Biophysical Profile এর মাধ্যমে শিশুর সুস্থতা যাচাই করা হয়। 
  • অতিরিক্ত পানির কারণ নির্ণয় করাঃ মায়ের ডায়াবেটিস, জমজ গর্ভধারণ, শিশুর জন্মগত ত্রুটি এছাড়া অনেক অজানা কারণ রয়েছে যা অনেক সময় জানা যায় না। তাই ডাক্তারের নির্দেশে Blood sugar test, TORCH test, Rh incompatibility test করা হতে পারে।
  • খাদ্য ও পানি নিয়ন্ত্রণঃ যদি আপনি প্রচুর পানি পান করেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছুটা সীমিত করা যেতে পারে। ডায়াবেটিক মা হলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • প্রসবকালীন পরিকল্পনাঃ শরীরে অতিরিক্ত পানি থাকলে শিশুর পজিশন স্বাভাবিক নাও হতে পারে। তাই অনেক সময় সিজারিয়ান ডেলিভারি প্রয়োজন হয়। সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে তাই ৩৪ সপ্তাহের পর থেকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
  • জটিলতা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে যোগাযোগ করুনঃ নিচের উপসর্গ থাকলে দ্রুত হাসপাতালে যান যেমন- হঠাৎ পানি ভেঙ্গে যাওয়া বা অতিরিক্ত স্রাব, শ্বাসকষ্ট, পেটে প্রচন্ড টান অনুভব হওয়া, শিশু নড়াচড়া একেবারে কমে যাওয়া ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় পানি বেড়ে গেলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। নিয়মিত মনিটরিং, সঠিক পরীক্ষা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাটি নিরাপদ ভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি অর্থাৎ ১০-১২ গ্লাস পানি খাওয়া সব থেকে উত্তম। গরম আবহাওয়া ব্যায়াম বা অতিরিক্ত ঘাম হলে পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত। প্রস্রাব স্বচ্ছ ও হালকা হলুদ হলে বুঝবেন পানি ঠিকমতো খাচ্ছেন।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় কোন পানিও সবচেয়ে ভালো?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ পানীয় হলো পানি যা সর্বোত্তম শিশুর ও মায়ের শরীরের সব কার্যক্রমের সহায়ক। এছাড়াও ডাবের পানি ডিহাইড্রেশন রোধ করতে অনেক বেশি কার্যকরী। ঘরে বানানো বিভিন্ন রকমের ফলের রস, গরম দুধ, লেবু পানি, আদা চা উপকারী হতে পারে। তবে পানি সবচেয়ে ভালো আর অন্যান্য পানিও চিকিৎসকের পরামর্শ ও শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায়ী গরম চা খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় গরম চা খাওয়া যায়। তবে সীমিত পরিমাণে ও সতর্কতা সহকারে। হালকা গরম চা মাঝে মাঝে খাওয়া নিরাপদ হতে পারে। তবে মাত্রা ও উপাদান বুঝে খাওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে আপনি হালকা লিকার চা বা হারবাল চা খেতে পারেন।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় লেবু পানি কি প্রভাব ফেলে?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় লেবু পানি খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং বেশ কিছু উপকারী প্রভাব ফেলে। যেমন বমি ভাব ও মর্নিং সিকনেস কমায়, হজমে সাহায্য করে, শরীরে ভিটামিন সি সরবরাহ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ভালো রাখে। বেশি খেলে এসিডিটির সমস্যা বা দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে। লেবু পানিতে মিষ্টি না মিশিয়ে খাওয়াই ভালো চিনির বদলে সামান্য পরিমাণে মধু মিশে খেতে পারবেন।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়?
উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকা শরীর ও শিশুর জন্য কিছু উপকার এবং অপকারিতা তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত শুয়ে থাকা উচিত নয়। প্রতিদিন হালকা হাটা, অবস্থান পরিবর্তন ও ব্যায়াম মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় সে সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় পানি কম খেলে কি হয় থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ কত থাকা স্বাভাবিক, গর্ভাবস্থায় পানি খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় পানি কমে যাওয়ার লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে করণীয়, গর্ভাবস্থায় পেটে পানি বেড়ে গেলে করণীয় এবং গর্ভাবস্থায় কত লিটার পানি পান করা উচিত সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 

আশা করছি আপনি যদি এ সকল বিষয়গুলোর দিকে নজর রেখে মেনে চলতে পারেন তাহলে লাভবান হবেন। কেননা গর্ভাবস্থায় পানি কমে গেলে মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থায় শরীরে ডিহাইড্রেশনের কোন লক্ষণ পান তাহলে এই অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক যত্ন এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এই জটিলতা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url