চুল সিল্কি মসৃণ ঝলমলে করতে কলার অবিশ্বাস্য ম্যাজিকাল গোপন টিপস

কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়, এর উপকারিতা এবং ঔষধি গুণ ব্যাপক। চুলের যত্নে আমরা নানান ধরনের ঘরোয়া উপাদানকে কাজে লাগিয়ে থাকি তার সাথে বিভিন্ন নামি-দামি হেয়ার প্রোডাক্টও ব্যবহার করি। কলা এমন একটি উপাদান যা চুলের যত্নে ভীষণ কার্যকরী। শুধু চুলের যত্নে নয় কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করতেও আমরা সচ্ছন্দ্যবোধ করি।
কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়
তাই আজকের আর্টিকেলে কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার এমন কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব যা আপনার চোখে সিল্কি করার পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখবে এবং চুলকে ঝলমলে এবং লম্বা করবে।সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা, চুল পড়া ও ডগা ফাটা রোধে কলার ব্যবহার, কলার খোসার ব্যবহার, কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়/ কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা

কলা দিয়ে রুক্ষ চুলকে সিল্কি করার উপায়

কলা দিয়ে রুক্ষ চুলকে সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে জানেন কি। আপনি কি চুল পড়া সমস্যায় ভুগছেন? চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান? চুলের যত্নের জন্যস্বাস্থ্যজ্জল চুল পেতে বিভিন্ন পণ্য প্রসাধনীর ব্যবহার করছেন কিন্তু কোন রকম ফল পাচ্ছেন না? বরং আরো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে? তাই কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার হাতের নাগালে থাকা সহজলভ্য এই উপাদানটি দিয়ে আপনার চুলকে করে তুলুন ভেতর থেকে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং পান এক ঢাল লম্বা চুল।

আমরা অনেকেই রাসায়নিক বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে চুল সিল্কি করে থাকি বা স্ট্রেট করে থাকি। তবে এর বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ঘরোয়া কিছু যত্নেই আপনি পেতে পারেন চমৎকার সিল্কি চুল। আপনাদের আজকে কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে বলবো।

দীর্ঘস্থায়ীভাবে চুল হয়তো সিল্কি হবে না তবে আপনি যদি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ধীরে ধীরে চুলের ধরনের আপনি বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যুগিয়ে চুলের নিষ্প্রাণ ভাব দূর করতে কলা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কলার হেয়ার প্যাক বানিয়ে নিয়মিত ব্যবহারে পেতে পারেন নানান উপকারিতা। 

তাই শুধু ত্বকের জন্য নয় সুন্দর ও চকচকে উজ্জ্বল চুলের জন্য এবার কলার ব্যবহার করুন এইভাবে-চুলের যত্নের জন্য হাতের নাগালে থাকা এই সহজলভ্য উপাদানটি কিভাবে চমৎকার কাজ করে জেনে নিন এবং আপনিও আকর্ষণীয় চুলের অধিকারিনী হয়ে উঠুন।
কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়-
যা যা লাগবেঃ
    • পাকা কলা - একটি মাঝারি আকারের
    • দুধ - ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ
    • মধু - ১ টেবিল চামচ
    • অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল- এক টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমত পাকা কলাটিকে ভালোভাবে চটকে নিন। তারপর ব্লেন্ড করে নিন যাতে করে ভালো পেস্ট তৈরি হয় এবং যেন কোন ধরনের দানা না থাকে। এরপর এই পেস্টের সঙ্গে উপাদান গুলো অর্থাৎ দুধ, মধু ও তেল মিশিয়ে নিন। এরপর ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। মসৃণ হয়ে আসলে সেটা আপনার চুলে লাগানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

ব্যবহারের নিয়মঃ
    • প্রথমত চুল ভালোভাবে আচরে নিন যেন কোন জট না থাকে।
    • এরপর কলার তৈরি করা প্যাকটি স্কেলপ  থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগান।
    • আপনি চাইলে চুলে দেওয়ার ক্যাম বা পলিথিন দিয়ে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ঢেকে রাখতে পারেন।
    • এরপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনার চুল একদম ঝলমলেও সিল্কি হয়ে গিয়েছে। কলার ভিটামিন ও মিনারেল চুলের গোড়া মজবুত করে চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ফিরে আসবে।
    • এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আরো ভালো ফলাফলের জন্য পাকা কলা ব্যবহার করবেন কাঁচা বা আধা পাকা না।
    • প্যাক ধোয়ার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে তেল ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
    • হেয়ার প্যাক ভালোভাবে ব্লেন্ড না করা হলে চুলে আটকে যেতে পারে তাই মসৃন পেস্ট তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা

কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা কি? স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের দিনে ১০০টা চুল পড়াকে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু সমস্যাটা তখন হয়ে দাঁড়ায় যখন চুল গজানোর হার কমে যায়। তার পিছনে অবশ্য অনেক কিছুই দায়ী থাকে। তার মধ্যে বংশ পরম্পরাই আশা শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও হতে পারে অন্যতম একটি কারণ। 
কলা দিয়ে রুক্ষ চুলকে সিল্কি করার উপায়
এছাড়াও গর্ভধারণ, গর্ভপাত স্তন্যদান, মনপোজ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেও চুলের উপর পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। তবে এই সকল প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কলার সদ্ব্যবহার হতে পারে একটি দারুন উপায়। চুল সিল্কি ও নরম করার জন্য ভিটামিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা ব্যবহারে জুরি মেলা ভার। কলার মাঝে এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল রয়েছে যা আপনার কোকড়ানো চুলকে মসৃণ করতে সহায়তা করবে। 

চুলের যত্নে কলার ব্যবহার আপনি হয়তো শুনেছেন। কিন্তু আপনি জানেন কি কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহার আপনার চুলের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে। শুধু কলার হেয়ার প্যাক নয় কলার খোসাতেও রয়েছে ভীষণ পুষ্টিগুণ যা কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপায়েই আপনার চুলকে ঝলমলে, সিল্কি এবং লম্বা করে তুলতে ভীষণ কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে। কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনেছি তাহলে চলুন এখন জেনে নিয়ে যাক কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা-
  • চুলের প্রাকৃতিক সিল্কি ও মসৃণ ভাব আনেঃ কলা চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলে একটি কোমল ও মসৃণ টেক্সচার এনে দেয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন E চুলের কিউটিকলকে হাইড্রেট করে। ফলে চুল দেখতে ঝলমলেও নরম লাগে।
  • চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখেঃ কলা একটি প্রাকৃতিক হিউমেকপ্যান্ট যা চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ চুলে আদ্রতা যোগায় এবং তা দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে।
  • চুল পড়া রোধ করেঃ কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা অন্যতম একটি হলো এটি চুল পড়া রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কলায় আছে ভিটামিন A, C, E যা চুলের গোড়া মজবুত করতে ভীষণ কার্যকরী। নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
  • স্কেলপের খুশকি দূর করেঃ কলা এন্টি ইনফ্লেমেন্টরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের সমৃদ্ধ। এটি স্কেলপের মৃতকোষ দূর করে এবং খুশকির উপদ্রব্য কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে মধু বা দই এর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে।
  • চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেঃ কলায় থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং পটাশিয়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে যা চুলের গতি বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকরী।
  • চুলের আগা ফাটা রোধ করেঃ পাকা কলার হেয়ার প্যাক চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের ভাঙ্গাচড়া প্রান্ত মেরামত করে।
  • চুলে প্রোটিন যোগ করেঃ কলার সাথে ডিম বা দই মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলে প্রোটিন যোগ হয় যা চুলের গঠন ভালো রাখে।
  • রাসায়নিক মুক্ত ও নিরাপদ উপাদানঃ এটি একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি যার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কেমিক্যাল প্রোডাক্ট এর মত চুলের ক্ষতি করে না বরং দীর্ঘ মিয়াদে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • চুলের টেক্সটার উন্নত করেঃ চুল যদি কোঁকরা বা অসুন্দর টেক্সচারের হয় তাহলে কলা ব্যবহার করলে চুল আরও পরিপাটি সোজা ও কোমল হয়ে ওঠে।
  • স্টাইলিং হিট থেকে চুল রক্ষা করেঃ কলা চুলের একটি প্রাকৃতিক প্রটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করে যা চুল স্ট্রেইটনার ড্রায়ার বা রোদ থেকে আসা হিটের ক্ষতি থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়।

চুল পড়া ও ডগা ফাটা রোধে কলার ব্যবহার

চুল পড়া ও ডগা ফাটা রোধে কলার ব্যবহার। বর্তমানে দেশে দূষণের মাত্রা যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে করে আমাদের চুলের অবস্থা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয় কি। যার ফলে আমাদের চুল প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে। সেইসাথে রয়েছে চুলের ডগা ফাটা এবং রুক্ষ শুষ্ক অবস্থা। আপনি যদি ভীষণ রকমের চুল পরা ও ডগা ফাটা সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে এই একটি মাত্র উপাদান ব্যবহার করে সহজেই পরিত্রাণ পেতে পারেন। 

আপনার মাথা ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি এবং খুশকি দূর করে আপনার নিষ্প্রাণ চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে ম্যাজিকের মত কাজ করবে কলা। চুল পড়া ও ডগা ফাটা সাধারণ এবং বিরক্তিকর সমস্যা। এগুলোর নিয়মিত যত্ন না নিলে চুল আরো দুর্বল, রুক্ষ ও নির্জীব হয়ে পড়ে। কলা একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপাদান যা এই সমস্যাগুলোর সমাধানে দারুন ভূমিকা রাখতে পারে। 

এতে পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক তেল থাকে যা চুলে ময়েশজার যোগায় ও চুলের আগা ফাটা প্রবণতা কমায়। কলা চুলে প্রোটিন ও কন্ডিশনিং এর কাজ করে। চুল পড়া রোধে কলার হেয়ার প্যাক একটি প্রাকৃতিক সাশ্রয়ী ও কার্যকরী সমাধান। চুল পড়া রোধে কলার হেয়ার প্যাক বানানোর নিয়মঃ-
উপকরণ-
    • পাকা কলা - একটি
    • আমলকি পেস্ট - তাজা অথবা শুকনো গুঁড়ো।
    • ডিম - একটি (শুধু কুসুম নিতে পারো যদি গন্ধ অপছন্দ হয়)
    • মধু - এক টেবিল চামচ
    • নারকেল তেল - এক টেবিল চামচ
    • এলোভেরা জেল - এক টেবিল চামচ (তাজা বা বাজারের প্রাকৃতিক জেল)
প্রস্তুত প্রণালীঃ
    • পাকা কলা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে যাতে কোন দলা না থাকে।
    • এরপর এই ব্লেন্ডের মধ্যে ডিম, মধু আর নারকেল তেল ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটা মসৃণ পেস্ট তৈরি করতে হবে।
    • এই হেয়ার প্যাকটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগাতে হবে।
    • হালকা ভাবে হাত দিয়ে পাঁচ মিনিট মেসেজ করুন যাতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
    • চুলে শাওয়ার ক্যাপ পড়ুন বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট।
    • এরপর হালকা কোন হারবাল বা সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং শেষে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
ব্যবহারবিধিঃ
    • এই হেয়ার প্যাকটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ করে যদি চুল খুব বেশি ঝরে পড়ে।
    • চুল ধোয়ার পর স্বাভাবিকভাবে শুকাতে দিন হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করাই উত্তম।

কলা মাথার ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় এবং চুলের গোড়া মজবুত করে এটা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের সঙ্গে মিশে খুশকির কারণ যেমন শুষ্ক ত্বক ও ফাংগাল ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। খুশকি দূর করার জন্য কলার হেয়ার প্যাক-
উপকরণঃ
    • পাকা কলা - একটি
    • লেবুর রস - এক টেবিল চামচ (লেবুর অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণ খুশকি দূর করতে সাহায্য করে)
    • এলোভেরা জেল - দুই টেবিল চামচ ( ত্বকে শীতলতা দেয় এবং মৃত কোষ পরিষ্কার করে)
    • মেথি বাটা বা গুঁড়ো -  এক টেবিল চামচ ( খুশকির বিরুদ্ধে অতি কার্যকরী)
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে কলা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে যাতে কোন দলা না থাকে। তারপর এতে লেবুর রস এলোভেরা জেল, মেথি বাটা মিশিয়ে ভালোভাবে মিক্স করতে হবে। এখন তৈরি হওয়া মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। চুলে লাগানো লাগবেনা লাগালেও কম লাগাবেন মূলত স্কেলপে ফোকাস করুন। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রেখে দিন এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন এবং শেষে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ২-৩ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করলে স্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পাবেন।

কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সর্তকতা

কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সর্তকতা মেনে চলা জরুরি। কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় তো দেখলেন এখন কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সতর্কতা জেনে নিন। খুবই সহজলভ্য একটি ফল হল কলা যা সারা বছরই প্রায় আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এটি যেমন স্বাস্থ্যকর একটি ফল, তেমনি ভীষণ উপকারী আমাদের চুলের জন্য। ত্বক ও চুলের যত্নেও কলার ভূমিকা ব্যাপক। এত উপকারিতার পরেও চুলের যত্নে কলা ব্যবহারের আগে কিছু সতর্কতা মেনে ব্যবহার করতে হবে। 

এত কিছুর পরেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভাসে এর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া জরুরী। কলার হেয়ার প্যাক প্রাকৃতিক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও এটি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনি সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারেন এবং কোন অসুবিধার সম্মুখীন না হন-
  • কলা ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন কেন সতর্ক হবেনঃ যদি কলা সঠিকভাবে ব্লেন্ড না করা হয় তবে চুলে দলা লেগে থাকতে পারে। যা পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলা কষ্টকর হয়। এর জন্য করণীয় ব্লেন্ডার বা ফুড প্রসেসর ব্যবহার করে কলাকে একেবারে পেস্ট এ পরিণত করুন।
  • মাথার ত্বকে এলার্জি আছে কিনা পরীক্ষা করুনঃ কিছু উপাদান যেমন লেবুর রস, টি ট্রি ওয়েল এবং ডিম ত্কেব এলার্জির সৃষ্টি করতে পারে। এইজন্য ব্যবহার করার আগেই হাতের পাতায় বা কানের পেছনে ছোট্ট একটি অংশে টেস্ট করুন। কোন র‍্যাশ, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হলে ব্যবহার করবেন না।
  • বেশি সময় ধরে রাখবেন নাঃ কলা শুকিয়ে গেলে তা চুলে আটকে যায় এবং পরিষ্কার করতে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের বেশি রাখবেন না। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • পরিষ্কার ও ধুলোমুক্ত চুলে প্যাক ব্যবহার করুনঃ ময়লা বা ধুলো মাখা চুলে প্যাক দিলে তা ভালোভাবে কাজ করে না প্রয়োজনে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে আগে মাথা ধুয়ে নিন।
  • মাস্ক ব্যবহারের পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুনঃ কলার অংশ মেথির দানা বা অন্য উপাদান যদি স্কেলপে লেগে থাকে তা চুলকানি বা খুশকির কারণ হতে পারে। তাই প্রথমে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এরপর হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
  • সংরক্ষণ না করে তাৎক্ষণিক ব্যবহার করুনঃ কলা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ফ্রেশ না থাকলে কার্যকারিতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই প্যাক তৈরি করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করাই উত্তম।
  • অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন নাঃ অতিরিক্ত ব্যবহার চুলে ওভার ময়েশ্চারাইজিং করতে পারে। ফলে চুল ভারি ও তেলতেলে হয়ে যেতে পারে। তাই সপ্তাহে এক থেকে দুইবারই যথেষ্ট।
প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার নিরাপদ হলেও প্রতিটি ত্বক এবং চুল আলাদা তাই নিজের ত্বকের ধরন চুলের অবস্থা ও পছন্দ অনুযায়ী প্যাক তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আশা করছি কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়, কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা এবং চুল পড়া ও ডগা ফাটা রোধে কলার ব্যবহার সেই সাথে কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সতর্কতা সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। 

চুলের রুক্ষতা দূর করতে করণীয়

চুলের রুক্ষতা দূর করতে করণীয় কি তা আমাদের অনেকের প্রশ্ন। স্বাস্থ্যজল ও ঝলমলে চুল আমাদের সৌন্দর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু অবহেলা, অনাহার, অযত্নের কারণে আপনার চুল যদি উস্কো এবং রুক্ষ হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে সৌন্দর্যকে ধরে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। বায়ু দূষণ বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা। 

আর এই দূষণের প্রভাব যে শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যের উপরেই পড়ে তা কিন্তু নয় বরং আমাদের ত্বক এবং চুলের উপরেও নীতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে মেয়েদের পাশাপাশি আজকাল ছেলেরাও অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে উভয়ই চুলের বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তাই আপনারা যারা চুলের রুক্ষতার সমস্যায় ভুগছেন তারা চুলের রুক্ষতা দূর করতে করণীয় এই বিষয়গুলো মেনে চলুন-
    • চুলে আদ্রতা যোগানোর জন্য এবং স্কেলপে রক্ত চলাচল বাড়ানোর জন্য চুলে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করুন।
    • সালফেট ও অ্যালকোহল মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন কেননা সালফেট চুলের প্রাকৃতিক তেল শুষে নেই যা রুক্ষতা বাড়ায়।
    • চুলের যত্নে প্রাকৃতিক হেয়ারমাক্স সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন। যা চুলে পুষ্টি জোগাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
    • কন্ডিশনার ব্যবহারে অবহেলা করবেন না। প্রতিবার চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন বিশেষ করে চুলের আগা অংশে।
    • অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং পরিহার করুন। হেয়ার ড্রায়ার, ট্রেইটনার বা কালারের অতিরিক্ত ব্যবহার চুলকে আরো রুক্ষ করে। যদি হিট ব্যবহার করেন তাহলে হিট প্রটেকশন সিরাম ব্যবহার করুন। সিল্ক সাটিনের বালিশের কভার ব্যবহার করুন। তুলোর বালিশ চুলের ঘর্ষণ বাড়ায় ফলে চুল রুক্ষ হয়ে যায়। সাটিন বা সিল্কের কভার চুলের রুক্ষতা ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
    • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করুন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করেন। ভেতর থেকে চুলকে হাইড্রেট রাখতে দিনে 8 থেকে 10 গ্লাস পানি পান করুন। 
    • ভেজা চুলে কখনো চিরুনি করবেন না। এতে চুল ভেঙে পড়ে এবং রুক্ষ হয়ে যায় এছাড়াও অতিরিক্ত চুলে হাত দিলে তেল ও ধুলা মিশে রুক্ষতা বাড়ে। 
    • সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলকে বিশ্রাম দিন সেই দিনে কোন স্টাইলিং, শ্যাম্পু কেমিক্যাল ব্যবহার না করে চুল খোলা ও বিশ্রাম দিতে দিন।

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপায়

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা। বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ফল হল কলা। এটি খেতে যেমন মজাদার, তেমনি রয়েছে নানান উপকারিতা। কলার নানান উপকারিতার কথা তো আমরা কম বেশি সকলেই জানি কিন্তু কলার খোসার কাজ কি তাই না? এই কারণেই তো আমরা কলাটাকে খেয়ে খোসাটা সহজেই ফেলে দেই। কিন্তু এই কলার খাওয়া খোসা আপনার রূপচর্চায় বিভিন্ন কাজে আসতে পারে। 

বিশেষ করে রূপচর্চা করার জন্য এই ফল বেশ প্রচলিত। রূপচর্চার জন্য কলাকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়। কলা নয় বরং খোসাতেই ফিরবে মুখের লাবণ্য। প্রচন্ড গরমের কারণে আমরা অনেক বেশি অস্থির হয়ে পড়ি। এই গরমকালের প্রভাব যেমন আমাদের জীবন যাপনে প্রভাব ফেলে, তেমনি পরে ত্বকেও। এই সময়টাই তখন ভীষণ নিস্তেজ ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। 
কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা
ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য কলার খোসার ফেসপ্যাক ব্যবহারে পেতে পারেন চমৎকার উপকারিতা। কলার খোসাতে থাকে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে পুনর্জীবিত করে তুলতে সাহায্য করে। কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনেছেন এখন কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা বা প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবেন কলার খোসা ব্যবহার করে তা জেনে নিন-
  • মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ কলার খোসা কাঁচা দুধ ও মধু এই তিনটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট রেখে দিন এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কলার এই প্যাকটি আপনার মুখে লাগানোর ফলে ত্বক উজ্জ্বল করবে ক্লান্তি ও কাল ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
  • ব্রণ ও দাগ কমাতেঃ কলার খোসার ভেতরের অংশ দিয়ে প্রতিদিন ব্রণের উপর ঘুসতে  থাকুন, পাঁচ থেকে দশ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে থাকা উপাদান ব্রনের জীবাণু ধ্বংস করে এবং লালচে ভাব কমায়।
  • চোখের নিচের কালি দূর করতেঃ কলার খোসা ছোট টুকরো করে কেটে ফ্রিজে ঠান্ডা করতে দিন এরপর তার সাথে অ্যালোভেরা জেল হালকা করে লাগাতে পারেন এবং চোখের নিচে লাগিয়ে আলতো করে মুছে ফেলুন। এটি ফোলা ভাব ও ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করতেঃ কলার খোসার পেস্ট বানিয়ে তাতে এক চা চামচ পরিমাণ চিনি এবং অলিভ অয়েলের কয়েক ফোঁটা দিয়ে একসাথে মিশিয়ে নিন। এই স্ক্রাবটি মুখে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি স্ক্রিন স্ক্রাব করে ডেড সেল তুলে ফেলতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের রিংকল বা বলিরেখা কমাতেঃ কলার খোসার পেস্ট এবং ডিমের সাদা অংশ এক চা চামচ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই দুই উপাদান মিশিয়ে মুখে লাগান 15 মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক টানটান করবে এবং বলিরেখা কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী।
সতর্কতাঃ
    • কলা ফরমালিন মুক্ত এবং ভালোভাবে ধোয়া উচিত ব্যবহারের আগে।
    • যাদের সংবেদনশীল ত্বক আছে তারা আগে প্যাঁচ টেস্ট করুন।
    • খোসা তাজা অবস্থায় ব্যবহার করাই উত্তম।

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপকারিতা

কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপকারিতা কি? কলা খেয়ে খোসা ফেলে দেওয়ার মত ভুল করছেন না তো? কলার খোসা ফেলনা জিনিস নয়। ছাদ বাগানের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই কলার খোসা এছাড়াও ব্রণের বিভিন্ন ডাকছোপ এবং ত্বকের হাজার রকমের সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে এই কলার খোসায়। কলার খোসা শুধু পুষ্টিকর নয় বরং এটি রূপচর্চার ক্ষেত্রেও একটি গোপন রত্ন।
    • ব্রণ ও দাগ দূর করতে সহায়কঃ কলার খোসায় আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান জাতকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে এবং ব্রণের প্রদাহ কমায়।
    • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ খোসার ভেতরের অংশে থাকা ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে স্কিনটোন আরো ফর্সা এবং প্রাণবন্ত হয়।
    • বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমায়ঃ কলার খোসার ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে ফলে ত্বক টানটান হয় এবং বয়সের ছাপ ও ফাইন লাইন কমে।
    • চোখের নিচের কালি ও ফোলা ভাব হ্রাস করেঃ খোসার ঠান্ডা ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ অংশ চোখের নিচে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ফলে ডার্ক সার্কেল ও ফোলা ভাব কমে যায় চোখ দেখাই সতেজ।
    • প্রাকৃতিক স্ক্রাব হিসেবে কাজ করেঃ কলার খোসার টেক্সচার ও এতে থাকা এনজাইম ত্বক থেকে মৃত কোষ সরিয়ে দেয়। যার ফলে ত্বক  হয় মসৃণ ও ঝলমলে।
    • সূর্যের পোড়া দাগ হালকা করেঃ কলায় থাকা এন্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের জ্বালাপোড়া প্রশমিত করে এবং চুলকানি কমে যায়।
    • স্কিন শুটিং বা আরামদায়ক অনুভূতির জন্য উপযোগীঃ গরমে বা চুলকানি হলে কলার খোসার ঠান্ডা দিক ত্বকে ঘষলে আরাম পাওয়া যায় এর ফলে রেস প্রশমিত হয়।
    • পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ীঃ কলার খোসা একেবারে প্রাকৃতিক কেমিক্যাল মুক্ত এবং সহজলভ্য। তাই বাজার থেকে দামি কেমিক্যাল পণ্য না কিনেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়। কম খরচে সুন্দর ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়।

কলার খোসার ব্যবহার

কলার খোসার ব্যবহার জেনে অবাক হবেন। স্বাস্থ্যের জন্য কলা ভীষণ উপকারী। আমরা হয়তো ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে প্রতিদিন কলা খেলে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়। তবে কলা খাওয়া ছাড়াও পাশাপাশি এর বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। রূপচর্চা করার পাশাপাশি আপনি প্রতিদিন একটি করে কলা খাবেন যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো কাজ করবে। 

এছাড়াও কলাতে থাকে টিপটপ ফ্যান নামক উপাদান যা আপনার ডিপ্রেশনকে কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করবে। পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে উপশম পাওয়ার জন্য আমাদের মাথায় প্রথম যে ফলের নাম আসে তা হলো কলা। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য কলার রয়েছে বিভিন্ন গুণ। কলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আইরন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। 

কলার খোসা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শুধু রূপচর্চায় নয় নানা কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া কাজের জন্য উপকারী। কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় যেমন রয়েছে চলুন কলার খোসার কিছু অন্য ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখা যাক-
  • গাছের সার হিসেবে ব্যবহারঃ কলার খোসায় থাকা পটাশিয়াম ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম গাছের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি গাছের রোটে পুষ্টি যোগায় এবং গাছের সজীবতা বৃদ্ধি করে। কলার খোশাকে ছোট টুকরো করে জমিতে গর্তে রাখতে পারেন বা মাটির সাথে মিশিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
  • কিচেনের স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহারঃ কলার খোসার অভ্যন্তরীণ অংশে থাকা ফাইবার ও টেক্সচার যা তেল পরিষ্কার করতে কার্যকর। কলার খোসার ভিতরের অংশ দিয়ে তেল গ্রিম বা ময়লা লাগানো চপস্টিক পাত্র ফ্রাইপ্যান বা থালা ধুয়ে ফেলুন। এতে জোরপূর্বক স্ক্রাবিং না করলেও পরিষ্কার হয়ে যায়।
  • পোকামাকড়ের কামড়ঃ পোকামাকড় বা মশা কামড়ানোর ফলে আমাদের ত্বকে জ্বলতে থাকে এবং চুলকানি হয়। কলার খোসা আপনি আক্রান্ত স্থানে ঘুষতে পারেন যাতে করে চুলকানি একদম কমে যাবে।
  • জুতা চকচকে করতেঃ সু পলিশের পরিবর্তে আপনি ব্যবহার করতে পারেন কলার খোসা। আপনার জুতায় যদি ময়লা লেগে থাকে তা আগে পরিষ্কার করে নিন এরপর পাকা করার একটি খোসা নিয়ে জুতার উপর অন্তত ৫ মিনিট ধরে ঘুষতে থাকুন। দেখবেন একেবারে চকচকে হয়ে গেছে আপনার জুতা। এরপর একটি পাতলা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে জুতা ভালোভাবে মুছে ফেলুন। কলার খোসার ভেতরের অংশে থাকা টেনিন গন্ধ শোষণ করতে সাহায্য করে এবং জুতার স্ক্র্যাচের দাগ কমিয়ে দেয়।
  • দাত সাদা করতে কলার খোসার ব্যবহারঃ দাঁত আমাদের হাসির সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলে। তাই আপনার এই হলদেটে দাঁতকে সাদা করতে কলার খোসা অন্ততপক্ষে দুই থেকে পাঁচ মিনিট ধরে টুথপেস্ট এর সাথে মিশিয়ে মেজে ফেলুন। মাত্র ৭ দিনেই আপনার দাঁত হয়ে উঠবে ঝকঝকে তক্তকে। কলার খোসায় থাকা পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ দাঁতের উপরে জমে থাকা দাগ ও হলদে ভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • ক্র্যাচ দূর করতে কলার খোসার ব্যবহারঃ সিডি বা ডিভিডি তে কিছুদিনের মধ্যে স্ক্র্যাচের চিহ্ন দেখা যায় এবং পরে তা নষ্ট হওয়া শুরু করে। সিডি চলেনা এবং ডিভিডির ভিডিও মাঝে মাঝে আটকে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি কলার খোসা সিডি বা ডিভিডির উপর ভালোভাবে ঘষতে থাকুন দেখবেন ক্র্যাচ একেবারে চলে গেছে।
  • পশুদের খাবারে পুষ্টি যোগানোঃ কলার খোসায় ফাইবার এবং পটাশিয়াম অনেক পশুর জন্য উপকারী। এটি তাদের হজম শক্তি বাড়ায় এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। কলার খোসা ছোট টুকরো করে কুকুর মুরগি বা অন্য কোন পশ্যকে দেওয়া যেতে পারে।
  • পোকামাকড় তাড়াতেঃ কলার খোসা গাছপালা বা জানালার কাছে রাখলে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় তাড়িয়ে রাখা যায়। এছাড়া গুদামে বা ঘরের কোণে রেখে এতে পোকামাকড় তাড়ানো যায়।
  • গার্বেজ ব্যাগের গন্ধ দূর করতেঃ কলার খোসায় থাকা টেনিন এবং পটাশিয়াম গন্ধ শোষণ করতে সাহায্য করে। গারবেজ ব্যাগে কিছু কলার খোসা রাখলে তাতে আর কোন দুর্গন্ধ আসবে না এটি গন্ধ দূর করতে সহায়ক। 
কলার খোসা একটি অত্যন্ত বহুমুখী উপাদান যা অনেক ধরনের কাজ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র রূপচর্চা নয় বরং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে একটি কাজে আসতে পারে। এটি প্রাকৃতিক হওয়ায় পরিবেশবান্ধব এবং কোন প্রকার কেমিক্যাল ছাড়া ব্যবহার করা যায়। আশা করছি কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় এবং কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা সেই সাথে কলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্নঃ দ্রুত চুল লম্বা করতে করণীয়?
উত্তরঃ দ্রুত চুল লম্বা করতে করণীয় কিছু বিষয় হলো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে, প্রাকৃতিক তেল ম্যাসাজ করতে হবে, চুলের জন্য গরম পানি এড়িয়ে চলতে হবে, সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, মানসিক চাপ চুলের বৃদ্ধি ধির করতে পারে তাই নিয়মিত বিশ্রাম ও শিথিলকরনে মনোযোগ দিন।

প্রশ্নঃ মুখে কলার খোসা দিলে কি হয়?
উত্তরঃ মুখে কলার খোসা দিলে ত্বকের নানা উপকারিতা পাওয়া যায়। কলার খোসার ভিটামিন সি ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল করে, ব্রণ কমায়, ডার্ক সার্কেল ও বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ করে তোলে। এছাড়াও এটি ত্বকের আদ্রতা রক্ষা করে এবং সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বকের রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্নঃ কলা খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে?
উত্তরঃ কলা খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো- এটি শক্তি বৃদ্ধি করে, পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে, হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এছাড়াও কলা খাওয়া ত্বক ও চুলের জন্য ভীষণ উপকারী।

প্রশ্নঃ কলার খোসা কি প্রতিদিন মুখে দেয়া যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ কলার খোসা প্রতিদিন মুখে দেয়া যায়। এটি ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে, ব্রণ কমায় এবং ত্বকের আদ্রতা রক্ষা করে। তবে যদি ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয় তাহলে প্রথমে প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিত।

প্রশ্নঃ রাতে কলা খেয়ে ঘুমোলে কি হয়?
উত্তরঃ রাতে কলা খেলে ঘুমে কিছু উপকারিতা পেতে পারেন। রাত্রে কলা খেলে শরীর রিল্যাক্স ফিল করে এবং ঘুমের উন্নতি ঘটে, কলায় থাকে ম্যাগনেসিয়াম করে যার ফলে ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে, কলার ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বিশেষ করে রাতে খেলে পরের দিন সকালের জন্য উপকারী হয়। তবে অতিরিক্ত কলা খাওয়া পরিহার করা উচিত কারণ এটি গ্যাস বা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায় সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত

আজকের আর্টিকেলে কলা দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়, কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের উপকারিতা, চুল পড়া ও ডগা ফাটা রোধে কলার ব্যবহার, কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সর্তকতা, চুলের রুক্ষতা দূর করতে করণীয়, কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা, কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করার উপকারিতা এবং কলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ও বিভিন্ন দূষণের জন্য দিন দিন আমাদের চুল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারিতা বয়ে আনবে কলার হেয়ার প্যাক। কলার হেয়ার প্যাক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত চুল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কেননা এতে ফলিক এসিড রয়েছে যা চুল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও সক্ষম। 

এছাড়াও আপনি চাইলে বাজারের বিভিন্ন কলার নির্যাস দিয়ে তৈরি করা প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো হবে যদি প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্নে কলার ব্যবহার করেন। একটি সাধারণ কলার কত অসাধারণ গুণ হতে পারে দেখলেন তো? তাই আপনি চাইলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা যুক্ত করতে পারেন এবং এর তৈরি হেয়ার প্যাক গুলো ব্যবহার করে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।

comment url