টাইম ট্রাভেলের সত্যতাঃ মুভি নয়, এবার বাস্তবের কথাই শুনুন!
টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? অতীতে ফেরা বা ভবিষ্যতে যাওয়া কি শুধুই
কল্পনা, না বিজ্ঞানী ও এর কোন ভিত্তি আছে? বিজ্ঞান কি বলে টাইম ট্রাভেল নিয়ে,
বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং জানুন সময় ভ্রমণের আসল রহস্য এবং এই কল্পনার পিছনে
বাস্তবতা কতটা।
এই লেখায় আমরা কেবল টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? এই প্রশ্নেই থেমে থাকবো না আরও গভীরে
গিয়ে জানবো টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন? টাইম ট্রাভেল ঘটনা যা এখনো বিতর্কের
জন্ম দেয়। পাশাপাশি টাইম ট্রাভেল যদি একদিন বাস্তব হয় তবে টাইম ট্রাভেলের
সম্ভাব্য বিপদ তুলে ধরব যা আমাদের ভবিষ্যৎকে ভাবনাই ফেলে দিতে পারে।
টাইম ট্রাভেলের সত্যতাঃ মুভি নয়, এবার বাস্তবের কথাই শুনুন!
পোস্ট সূচীপত্রঃ টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব?
- টাইম ট্রাভেল কি?
- টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব/ টাইম ট্রাভেল কি সত্যি ?
- টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন জানুন আসল সত্য!
- বিজ্ঞানের আলোতে টাইম ট্রাভেল বিস্তারিত বিশ্লেষণ জানুন
- টাইম ট্রাভেল ঘটনা বাস্তবে কি কেউ টাইম ট্রাভেল করেছে?
- টাইম ট্রাভেল এর সম্ভাব্য বিপদ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ।
- টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
- টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব সে সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
টাইম ট্রাভেল কি
টাইম ট্রাভেল কি শুধুই সময়ের সীমানা ভাঙ্গার কল্পনা, নাকি বাস্তবতা? সময়
আমাদের জীবনের অদৃশ্য কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা সবাই সময়ের
সঙ্গে চলি ভবিষ্যতের দিকে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন যদি সময়কে উল্টো পথে ঘুরিয়ে
দেওয়া যেত বা সামনে গিয়ে ভবিষ্যতের দৃশ্য দেখা যেত তাহলে কেমন হতো? আর এটি হল
টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ।
টাইম ট্রাভেল কি? টাইম ট্রাভেল বা সময় ভ্রমণ হচ্ছে অতীতে অথবা ভবিষ্যতে ভ্রমণ
করার একটি কাল্পনিক কার্যকলাপ। মনে করেন আপনি ২০০০ সালে ফিরে গেছেন অথবা ২০৩০
সালে চলে গেছেন এটিকেই বলা হচ্ছে টাইম ট্রাভেল। সহজ ভাষায় বললে
টাইম ট্রাভেল হল এমন একটি ধারণা যেখানে মানুষ সময়ের সাধারণ প্রবাহকে
অতিক্রম করে অতীত বা ভবিষ্যতে যাত্রা করতে পারে।
টাইম ট্রাভেল মানে হল এক সময় থেকে অন্য সময়ের দিকে যাওয়া। সেটা হয়তো অতীতে
ফিরে যাওয়া আবার হয়তো ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা
সময়ের সঙ্গে চলি একদম সোজা পথে ভবিষ্যতের দিকে। কিন্তু টাইম ট্রাভেল বলতে বোঝায়
সেই নিয়ম ভেঙ্গে সময়কে পেছনে টেনে নেওয়া বা লাফিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে
যাওয়া।
এটি দীর্ঘদিন ধরে এই বৈজ্ঞানিক গল্প, কাহিনী, সিনেমা, বই ও গবেষণার বিষয়। এই
বিষয়টা শুনতে যতটা সহ্ বাস্তবে আসলে ততটাও সহজ নয়। আবার অসম্ভব কিছুও
না। এছাড়াও আপনাদের জানাবো টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? টাইম ট্রাভেল
সত্যিই কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাই সাথেই থাকুন।
টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব/ টাইম ট্রাভেল কি সত্যি
টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব আপনার ধারণা কি? আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা কৌতহল কাজ
করে ট্রাইম ট্রাভেল কি সত্যি? আমরা কি একদিন সত্যিই অতীতে ফিরে যেতে পারবো?
কিংবা ভবিষ্যতে গিয়ে দেখতে পারবো পৃথিবীর চেহারা কেমন হবে? বর্তমানে আমাদের
কাছে এমন কোন প্রযুক্তি নেই যা সময় ভ্রমণকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। তবে
বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিছু তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী মনে করেন ভবিষ্যতে হয়তো টাইম ট্রাভেল
আংশিকভাবে সম্ভব হবে। যেমন সময়কে ধির করা বা নির্দিষ্ট সময়ের দিকে এগিয়ে
যাওয়া। টাইম ট্রাভেল মানে সময়ের মধ্য দিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়
যাওয়া। যেমনঃ আপনি যদি আজকের ২০২৫ সাল থেকে হঠাৎ করে 1947 সালে পৌঁছে যান তাহলে
আপনি টাইম ট্রাভেল করেছেন।
আবার যদি আপনি ভবিষ্যতের ৩০৫০ সালে গিয়ে আসেন সেটাও টাইম ট্রাভেল। এই ধারণা
আগে শুধু গল্প, উপন্যাসে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরাও এটা নিয়ে গবেষণা
করছেন আর এখানেই শুরু হয় আমাদের মূল প্রশ্ন টাইম ট্রাভেল কি সত্যি সম্ভব?
বিজ্ঞান কি বলে টাইম ট্রাভেল নিয়ে? টাইম ট্রাভেল নিয়ে সবচেয়ে বড় কথা বলেছেন
বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন।
তার জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি অনুযায়ী সময়টা একদম নির্দিষ্ট কিছু না এটা
বাঁকাতে বা পরিবর্তন করতেও পারা যায় যদি আপনি আলো বা তার চেয়েও বেশি গতিতে
চলতে পারেন।
- সময়ের সাথে গতি ও মহাকাশের সম্পর্কঃ আপনি যদি খুবই দ্রুত গতিতে চলেন প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি তাহলে আপনার সময় অন্যদের তুলনায় ধীরে যাবে। এটাকে বলে টাইম ডাইলেশন।
- শক্তিও সময় কে প্রভাবিত করে যেমন ব্ল্যাক হোলের কাছে সময় দেহের জলে। এই বিষয়গুলো প্রমাণিত হলেও এখনো কেউ অতীতে গিয়ে এসেছে বা ভবিষ্যতে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে এমন কোন বাস্তব উদাহরণ নেই।
তাহলে টাইম ট্রাভেল কি সত্যিই সম্ভব?
ভবিষ্যতের টাইম ট্রাভেল সম্ভব হবে না এটা পুরোপুরি অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞানের বর্তমান গতি দেখে অনেকে বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে হয়তো এমন প্রযুক্তি
আসবে যা আমাদের সময়ের গণ্ডি পার করাতে সাহায্য করবে। বর্তমানে আমাদের জ্ঞান ও
প্রযুক্তি অনুযায়ী টাইম ট্রাভেল ভবিষ্যতে যাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা রাখে।
কিন্তু অতীতে ফিরে যাওয়া এখনো অনেক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে আছে।
আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে হয়তো টাইম মেশিন হবে আর আমরা চলে যেতে পারবো
যে কোন সময়ের দিকে। বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে আর তাই বলা যায় অসম্ভব
আজ কিন্তু হয়তো সম্ভব হবে কাল। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও আছে নিচে এর
চ্যালেঞ্জ সমূহ বা টাইম ট্রাভেল এর সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন
টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন চলুন জানি আসল সত্য। বেশিরভাগ মানুষ টাইম ট্রাভেল
শুনলেই সাইন্স ফিকশন শব্দটা কল্পনা করে। সেই সাথে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কল্পনা
চোখে ভাসে। কারণ সিনেমা, গল্প, উপন্যাস সবখানেই টাইম ট্রাভেলকে এমন ভাবে দেখানো
হয় যেন সেটা জাদুর মত কিছু। কিন্তু সেটা কি শুধু গল্পের জন্য? প্রাচীন বিভিন্ন
মহাকাব্যে বা কল্পকাহিনী গুলোতে টাইম ট্রাভেলের অনেক ঘটনায় প্রচলিত ছিল।
এ সম্পর্কে জানা গেছে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের দিকে রচিত মহাভারতের রাজা
কাকুদমির কাহিনীতে। তাছাড়াও খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর দিকে জাপানের লোক কথার এক
ধরনের চরিত্র উরাসীমার সময় গমন করার গল্প অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। এক্ষেত্রে
বিজ্ঞান বলে ভবিষ্যতে ভ্রমণ করা সম্ভব। তবে সেটা সিনেমা বা সাইন্স ফিকশন এর নানা
ধরনের কমিকসের মত করে নয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রখ্যাত গণিতবিদ গরিল ম্যাথমেটিক্স এর
মাধ্যমে দেখিয়েছেন, কিছু বিশেষ শর্তে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কিছু থাকা সম্ভব যেটা
নির্দেশ করে সময় ভ্রমণ ও সম্ভব।
সময় এই ছোট্ট শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের জীবন ইতিহাস ভবিষ্যৎ আর অগণিত
কৌতুহল। মানুষ হাজার বছর ধরে সময়কে বুঝতে চেয়েছে, ধরে রাখতে চেয়েছে, এমনকি
পিছিয়ে বা এগিয়ে যেতে চেয়েছে। আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে টাইম ট্রাভেল বা
সময় ভ্রমণ নামক চমকপ্রদ ধারণাটি। কিন্তু প্রশ্ন হল টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন
নাকি এর পেছনে রয়েছে কোন বাস্তব ভিত্তি?
বর্তমানের টাইম ট্রাভেল প্রধানত একটি বৈজ্ঞানিক কল্পনা হিসেবে দেখা হয়। যদিও
আপনি আপেক্ষিকতার সূত্র অনুসারে কিছু নির্দিষ্ট শর্তে ভবিষ্যতের দিকে সময়
ভ্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে তবুও তার বাস্তব জীবনে প্রয়োগকারীর মত প্রযুক্তি আমাদের
নেই। টাইম ট্রাভেল এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে কিছুটা এগোনো সম্ভব হলেও অতীতে ফিরে
যাওয়া এখনও অসম্ভব।
তবে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে টাইম ট্রাভেলের আরো বাস্তব সম্ভাবনা
সৃষ্টি হতে পারে। টাইম ট্রাভেল নিয়ে কিছু জনপ্রিয় ফিকশন রয়েছে-
- Back to the Future ( মুভি )
- Intersteller ( মুভি )
- The Time Machine- H.G Wells এর বিখ্যাত উপন্যাস
- DArk ( নেটফ্লিক্স সিরিজ )
এসব ফিকশন টাইম ট্রাভেল এর ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে যদিও বাস্তবে এসবের অনেক
কিছুই অসম্ভব।
- টাইম ট্রাভেলঃ সিনেমা বই আর গল্পের নায়ক
আমরা সবাই কোন না কোন সময় ভ্রমণ এর মত সিনেমা বা বই দেখেছি বা পড়েছি। এসব
গল্পের সময়ের গর্ত দিয়ে নায়ক অতীতে ফিরে গিয়ে ভুল ঠিক করে অথবা ভবিষ্যতের
প্রযুক্তি নিয়ে আসে বর্তমান পৃথিবীতে। সেই ছোটবেলায় এসব দেখে আমি নিজের মনেই
ভাবতাম যদি আমি আমার ছোটবেলার নিজের কাছে গিয়ে কিছু কথা বলতে পারতাম! এই ইচ্ছা
থেকেই টাইম ট্রাভেলের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা জন্ম নেয়। কিন্তু এই ভালোবাসা কি
কেবলই স্বপ্ন? নাকি এতে সত্যের কিছু ছোঁয়া আছে?
- তাহলে কি টাইম ট্রাভেল শুধু ফিকশন?
সোজা কথাই হ্যাঁ, এখনো এটি শুধুই কল্পনা, কারণ আমাদের হাতে এখনো এমন কোন
প্রযুক্তি নেই যা সময়কে উল্টাতে পারে বা টান দিয়ে সামনে নিতে পারে। কিন্তু
এটা একেবারেই অসম্ভব নয়, কারণ বিজ্ঞানের ইতিহাস প্রমাণ করেছে- যা একসময়
অসম্ভব মনে হতো তাই একদিন সত্যি হয়েছে। মানুষ যেমন চাঁদে পা রেখেছে, তেমন
হয়তো একদিন সময়ের ঘরে ঢুকে ভবিষ্যৎ বা অতীত দেখে ফিরে আসবে।
বিজ্ঞানের আলোতে টাইম ট্রাভেল
ইতিমধ্যে আমরা টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন সে সম্পর্কে জেনেছি চলুন এখন জেনে নেই
বিজ্ঞানের আলোতে টাইম ট্রাভেল চলুন টাইম ট্রাভেল সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে জেনে
আসি। আসুন একটু বাস্তবতার দিকে তাকাই। আইনস্টাইন বলেছিলেন সময় ও স্থান
(স্পেস-টাইম) আসলে একই জিনিসের অংশ। তার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী সময় ধ্রুবক
নয়। এটি বেঁকে যেতে পারে ধীর হতে পারে। যেমন-
- আপনি যদি আলোর গতির কাছাকাছি ঘুরে চলেন তাহলে আপনার জন্য সময় ধীরে চলবে।
- আর পৃথিবীতে থাকা কারো জন্য সেই সময় অনেক বেশি কাটে। এখান থেকেই আসে টাইম ডায়লেশন ধারণা।
- এছাড়া হোল বা স্পেস টাইম এর শর্টকাট রাস্তা ধারণা এসেছে। যা নাকি আমাদের সময়ের এক দিক থেকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে এসব এখনো শুধু তাত্ত্বিক পর্যায়ে আছে বাস্তবে তার কোন প্রমাণ এখনো মেলেনি।
কেন মানুষ টাইম টেবিল নিয়ে এত আকৃষ্ট?
কারণ আমরা ভুল করি। আমরা হেরে যাই। আমরা ভালো সময়কে ফিরে পেতে চাই, আর খারাপ
সময়ই এড়িয়ে যেতে চাই। টাইম ট্রাভেল আমাদের সেই অসম্ভব আসা জাগায়- যদি ফিরে
যেতে পারতাম...। যদি আগে থেকে জানতাম...। এটুকু ভাবনাই আমাদের কল্পনা জগতের টাইম
ট্রাভেলকে জীবন্ত করে তোলে।
আমার মতে টাইম ট্রাভেল হয়তো এখনো বাস্তব নই, কিন্তু এটি শুধু ঠিক ফিকশনও
নয়।
এর মাঝে আছে একরাশ কল্পনা কিছু বিজ্ঞান আর অসীম কৌতুহল। আমরা যেদিন সময়কে শুধু
মাপা নয় নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবো সেদিন হয়তো এই লেখার কথাগুলো আর কল্পনা থাকবে না
হয়ে উঠবে ইতিহাস। এছাড়াও আমরা টাইম ট্রাভেল ঘটনা এবং টাইম ট্রাভেল এর বিপদ
সম্পর্কে বিস্তার আলোচনা করব।
টাইম ট্রাভেল ঘটনা-বাস্তবে কি কেউ টাইম ট্রাভেল করেছে?
টাইম ট্রাভেল ঘটনা সম্পর্কে জানেন কি? টাইম ট্রাভেল শব্দটা শুনলেই একরাশ কৌতূহল
জন্মায়- আমরা কি ভবিষ্যতে যেতে পারি? কেউ কি সত্যিই অতীতে গিয়ে এসেছে? এসব
কল্পনার মাঝেও কিছু ঘটনা ও দাবি রয়েছে যেগুলো আমাদের ভাবিয়ে তোলে টাইম ট্রাভেল
কি? এটা কি শুধুই গল্প নাকি বাস্তব সত্য!
চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু চমকপ্রদ টাইম ট্রাভেল ঘটনা যেগুলো মানুষকে যুগ যুগ ধরে
অবাক করেছে। যদিও এগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই তবুও ইতিহাসে এমন কিছু অদ্ভুত ও
বিতর্কিত ঘটনা রয়েছে যা এখনো অনেকের মনে প্রশ্ন জাগায়। বাস্তব জীবনের টাইম
ট্রাভেলের কিছু ইঙ্গিত। আপনি জেনে অবাক হবেন টাইম ট্রাভেল নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানীরা
এই বিষয়ে কিছু পরীক্ষা করেছেন। যেমন-
- Twin paradox: যদি জমজ দুই ভাইয়ের একজনকে মহাকাশে পাঠানো হয় এবং সে আলোর কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করে তাহলে সে যখন ফিরে আসবে তখন তার চেহারা অনেক কম বয়সের হবে অন্য ভাইয়ের তুলনায় যে পৃথিবীতে ছিল।
- GPS Satellite: পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো কেউ টাইম ডেইলেশনের জন্য প্রতিনিয়ত সময়ের হিসাব ঠিক করে নিতে হয়।
টাইম ট্রাভেল ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিঃ টাইম ট্রাভেল নিয়ে অসংখ্য সিনেমা বই
সিরিজ তৈরি হয়েছে যেমন
Back to the future (1985)
Interstellar (2014)
Tenet (2020)
The Time Machine ( H.G. Wells)
এইসব গল্প আমাদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করেছে সবার মাঝে। টাইম ট্রাভেল
কি কেবলই সেকশন টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব তা নিয়ে ইতিমধ্যে জেনেছি এবং আরো জানা
বহুত টাইম ট্রাভেল এর বিপদ সম্পর্কে চলুন এখন টাইমটা ভুল ঘটনাগুলো জানা যাক-
- টাইম ট্রাভেলিং সূর্য চশমা- ১৯৪০ এর ছবিতে ২০০০ এর স্টাইল?
1941 সালের এক পুরনো ছবিতে দেখা যায় একটি ভিড়ের মাঝে এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে।
চোখে সানগ্লাস, গায়ে হুডি টাইপ জামা, আর হাতে আধুনিক ক্যামেরার মত কিছু। তার
পাশে থাকা অন্যদের পোশাক একদম ১৯৪০ এর কিন্তু সে যেন সময়ের বাইরে থেকে এসেছে। এই
ছবিটি নিয়ে ইন্টারনেটে তোলপাড় পড়ে যায় অনেকে বলেন ছবির যুবক আসলে ভবিষ্যৎ
থেকে আসা একজন টাইম ট্রাভেলার। যদিও কেউ প্রমাণ করতে পারেনি তবু বিষয়টি অনেকের
মনে জায়গা করে নেয়।
- জন টাইটর- ভবিষ্যৎ থেকে আসা এক ভদ্রলোক
টাইম ট্রাভেল ঘটনা নিয়ে অন্যতম জনপ্রিয়তা পেয়েছিল জন টাইটর। ২০০০ সালে এক ব্যক্তি ইন্টারনেটে হাজির হয়ে নিজেকে পরিচয় দেন জন টাইটর নামে।
তিনি দাবি করেন তিনি 2016 সাল থেকে এসেছেন এবং টাইম মেশিন ব্যবহার করে 2000 সালে
এসেছেন। তিনি কিছু ভবিষ্যৎ ভবিষ্যদবানী করেন যেমনঃ ওয়ার্ল্ডওনার, নতুন টেকনোলজি,
ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি যদিও তার অনেক ভবিষ্যদ্বানী পুরোপুরি সত্য হয়নি।
কিন্তু কিছু মিল খুঁজে পান অনেকেই। এই ঘটনার মাধ্যমে টাইম ট্রাভেল নিয়ে মানুষের
আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।
- রুডলফ ফিনোৎস - টাইম টেবিল না সময় বিভ্রান্তি?
১৯৫০ সালে নিউইয়র্ক শহরের টাইমস স্কয়ারে একজন মানুষ হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে
দাঁড়িয়ে পড়েন। তার পরনে ছিল পুরাতন স্টাইলের পোশাক, গায়ে ছিল ভিক্টোরিয়ান
যুগের কোড, হাতে একটি পুরনো ঘড়ি, আর পকেটে ১৮৭৬ সালের কিছু কয়েন। কয়েক মিনিটের
মধ্যে একটি গাড়ির ধাক্কায় তিনি মারা যান। পুলিশ যখন তার পরিচয় খুঁজতে যায় তখন
জানা যায় রুডলফ ফিনোৎস নামে এক ব্যক্তি 1876 সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন আর
তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু 1950 এ এসে তিনি কিভাবে এলেন? এই
ঘটনাটি অনেকেই টাইম ট্রাভেলের সম্ভাব্য প্রমান হিসেবে বিবেচনা করেন যদিও অনেকে
বলে এটি একটি কাল্পনিক গল্প তবুও ঘটনা।
- তাহলে এসব কি সত্য?
সবগুলো ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক আছে কিছু ঘটনা সম্পন্ন গুজব বা গল্প হতে পারে।
আবার কিছু হয়তো মানুষের ভুল ধারণা কাকতালীয় বিভ্রান্তি। তবে একটা কথা মানতেই
হবে এই অদ্ভুত ঘটনাগুলো আমাদের কল্পনা শক্তিকে উসকে দেয় আর এখানে টাইম ট্রাভেলের
রোমাঞ্চ।
- বিজ্ঞান কি বলে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা?
টাইম ট্রাভেলের বিজ্ঞান এখনো অনেকটাই তথ্যভিত্তিক। আইনস্টাইনের থিওরি টাইম
ডায়ালেশন ব্ল্যাক ওয়ার্মহোল এসব দিয়ে আমরা বুঝি সময় কে বাঁকানো সম্ভব। তবে
এখনো আমরা এমন কোন প্রমাণ পাইনি যে কেউ সত্যি টাইম ট্রাভেল করে অন্য কোন সময় এ
গেছে।
- সময়ের সীমানা পেরিয়ে যাওয়া- বাস্তব না অলীক?
টাইম ট্রাভেলের ঘটনা গুলো হয়তো পুরোপুরি সত্য নয় কিন্তু এগুলো আমাদের চিন্তা
কল্পনা এবং ভবিষ্যতের দিশা দেখাই হয়তো একদিন বিজ্ঞান এতটাই উন্নত হবে যখন এসব
ঘটনাগুলোকে সত্য প্রমাণ করা যাবে অথবা জানা যাবে এগুলো শুধুই ভুল বোঝাবুঝি ছিল।
কিন্তু আজকের দিনে একটাই সত্য টাইম ট্রাভেলের ধারণা যতটা অদ্ভুত ততটাই রোমাঞ্চ
কর।
টাইম ট্রাভেল এর সম্ভাব্য বিপদ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ এক রোমাঞ্চকর সম্ভাবনার অন্ধকার দিক
টাইম ট্রাভেল শুধু শব্দটাই যেন আমাদের মাথার মধ্যে কল্পনার দুনিয়া খুলে দেয়।
ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দেখা, অতীতে ফিরে গিয়ে ভুল শুধরে দেওয়া কিংবা ইতিহাসের
সাক্ষী হয়ে ওঠা সবই দারুন রোমাঞ্চকর। কিন্তু আমরা একটা জিনিস প্রায়ই ভুলে যাই
যেখানেই অসাধারণ কিছু সম্ভব, সেখানেই লুকিয়ে থাকে বিপদের ছায়া। টাইম ট্রাভেলও
এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। টাইম ট্রাভেল যদি একদিন সম্ভব হয় তবে তার সাথে আমরা কি
কি ভয়াবহ ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারি ভাবতে পারছেন?
- টাইম প্যারাডক্স- সময়ের গলদঃ সবচেয়ে বড় বিপদের নাম হল টাইম প্যারাডক্স। সহজ ভাবে বললে আপনি যদি অতীতে গিয়ে এমন কিছু করেন যা ভবিষ্যতের অস্তিত্বই পাল্টে দেয় তখন সৃষ্টি হয় এই বিপদ। উদাহরণঃ ধরুন আপনি অতিতে গিয়ে আপনার দাদাকে বাঁচানোর বদলে দুর্ঘটনা বসত তার মৃত্যু ঘটিয়ে ফেললেন। তাহলে আপনি ভবিষ্যতে জন্মালেন কিভাবে? এই ধরনের লজিক্যাল গোলমালি টাইম প্যারাডক্স। এই ধরনের ঘটনা সময়ের নিয়মকেই ভেঙে দেয় যার ফলে হয়তো সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে
- বাটারফ্লাই ইফেক্ট- ছোট কাজ বড় বিপদঃ এই শব্দটা আপনি সিনেমা বা বইয়ের শুনে থাকবেন। এটা ভবিষ্যতে বিশাল পরিবর্তনের জন্ম দিতে পারে। উদাহরণঃ আপনি হয়তো অতিতে গিয়ে কারো হাতে একটা কলম ধরিয়ে দিলেন। হয়তো তিনি সেই কলম দিয়ে একটি চিঠি লেখেন যা কাউকে প্রভাবিত করে। যার ফলশ্রুতিতে বিশাল যুদ্ধ বা দুর্যোগ শুরু হয়। এই ধরনের অজানা প্রভাব গুলো নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। আর এখানেই লুকিয়ে আছে টাইম ট্রাভেলের বিপদজনক দিক।
- ইতিহাস বিকৃতি ও ভবিষ্যতের ধ্বংসঃ টাইম ট্রাভেল যদি সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় তাহলে কেউ চাইলে ইতিহাস পরিবর্তন করে ফেলতে পারে- যেমন ইচ্ছে মতো যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারে, এমনকি কোন প্রযুক্তির আবিষ্কার দ্রুত করে ফেলে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এতে একটা নতুন সমস্যা তৈরি হতে হবে কে ঠিক আর কে ভুল? ইতিহাস যদি বদলে যায় তাহলে মানুষের সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্মবিজ্ঞান, সবকিছু নিয়ে ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ভবিষ্যতের গোপনীয়তা হারিয়ে ফেলাঃ ধরুন আপনি ভবিষ্যতে গিয়ে জানলেন আপনার জীবনে কি ঘটবে, আপনি কবে মারা যাবেন বা আপনি সফল হবেন বা কবে আদৌ হবেন কিনা। এটা একদিকে যেমন আকর্ষণীয় অন্যদিকে মানসিকভাবে বিপদজনক। কারণ ভবিষ্যৎ জেনে ফেলার ফলে মানুষ হয় হতাশাগ্রস্থ নয়তো অলস হয়ে পড়তে পারে। অনেকেই আর চেষ্টা করবে না কারণ তার তো ভবিষ্যৎ জানাই হয়ে গেছে তাইনা।
- প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও দেহগত ঝুঁকিঃ টাইম ট্রাভেলের প্রযুক্তি যদি একদিন আসেও তখন প্রশ্ন উঠবে মানুষের শরীর কি সেই সময় ভ্রমণ সহ্য করতে পারবে? আলোর গতির কাছাকাছি চললে শরীরের কোষে কি প্রভাব পড়বে? টাইম লুপে আটকে গেলে কি চিরকাল বন্দী হয়ে যেতে পারেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।
- টাইম ট্রাভেলের অপব্যবহার ক্ষমতার খেলাঃ টাইম ট্রাভেল যদি সত্যি সম্ভব হয় তাহলে তা শুধুমাত্র ভালো কাজের ব্যবহার হবে এই নিশ্চয়তা কে দেবে? এই সব বিষয়গুলো টাইম ট্রাভেলকে এক ভয়ঙ্কর হাতিয়ারও পরিণত করতে পারে।
আমাদের এখনো এমন প্রযুক্তি নেই যা আলোর গতির কাছাকাছি গতি অর্জন করতে পারে। টাইম
ট্রাভেল যদি সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যৎ থেকে কেউ এখনো কেন আসেনি? অতীতে গিয়ে কিছু
পরিবর্তন করলে বর্তমানে তার প্রভাব কি হতে পারে? এসব প্রশ্ন এখনো
উত্তরবিহীন।
- টাইম ট্রাভেল স্বপ্ন না ভয়াবহ ভবিষ্যৎ?
টাইম ট্রাভেল আমাদের বহুদিনের স্বপ্ন কিন্তু এই স্বপ্ন যদি বাস্তব হয় তাহলে সেটি
শুধু স্বর্ণালী ভবিষ্যৎ নয় হতে পারে এক ভয়ানক জটিল সময়ের ফাঁদ। আমরা হয়তো
ভবিষ্যতে টাইম ট্রাভেল সম্ভব করতে পারবো কিন্তু তার আগে দরকার নৈতিকতার সতর্কতা
এবং নিয়ন্ত্রণ। কারণ সময় নিয়ে খেলা একদমই ছেলে খেলা নয়।
টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব সে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃ টাইম ট্রাভেল কি বাস্তব?
উত্তরঃ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যতের দিকে টাইম ট্রাভেলের কিছুটা
সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অতীতে যাওয়া এখনো অসম্ভব।
প্রশ্নঃ টাইম মেশিন কি সত্যিই তৈরি হয়েছে?
উত্তরঃ না এখনো কোন টাইম মেশিন তৈরি হয়নি।
প্রশ্নঃ টাইম ট্রাভেলের জন্য কি আলোর গতিতে চলা জরুরী?
উত্তরঃ হ্যাঁ আইনস্টাইনের সূত্র অনুযায়ী আলোর গতি টাইম ঘটাতে পারে!
প্রশ্নঃ টাইম ট্রাভেলের সবচেয়ে বড় বিপদ কি?
উত্তরঃ টাইম প্যারাডক্স, ইতিহাস, টাইম ট্রাভেলের সবচেয়ে বড় বিপদ।
প্রশ্নঃ টাইম মেশিনের কাজ কি?
উত্তরঃ টাইম মেশিন এমন এক ধরনের সময় ভ্রমণ যন্ত্র যা সময়কে বাঁকিয়ে বা ফোল্ড
করে আমাদের সময় অতিক্রম করতে সাহায্য করতে পারে। অনেকটাই ট্রেন বা গাড়ি যেমন এক
জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়, টাইম মেশিন তেমনি একসময় থেকে অন্য সময়ে
পৌঁছে দেয়।
টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব সে সম্পর্কে আমার নিজস্ব অভিমত
আজকের আর্টিকেলে টাইম ট্রাভেল কি? থেকে শুরু করে টাইম ট্রাভেল কি কেবলই ফিকশন
জানুন আসল সত্য! টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব/ টাইম ট্রাভেল কি সত্যি ? টাইম ট্রাভেল
ঘটনা, বাস্তবে কি কেউ টাইম ট্রাভেল করেছে? টাইম ট্রাভেল এর সম্ভাব্য বিপদ ঝুঁকি
ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
টাইম ট্রাভেল এখনো আমাদের কল্পনার বিষয়, তবে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত অজানা জগতের
দরজা খুলছে। হয়তো একদিন আমরা সত্যিই সময়ের সীমানা পেরিয়ে ভ্রমণ করতে পারব। আর
যদি না পারি তবুও টাইম ট্রাভেলের কল্পনা আমাদের জ্ঞান ও কৌতূহলকে এগিয়ে নিয়ে
যাবে বহুদূর। আপনি কি টাইম ট্রাভেলের ভবিষ্যতে বিশ্বাস করেন? আপনি কি টাইম
ট্রাভেল আশীর্বাদ মনে করেন না ভয়ংকর এক প্রযুক্তি? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
মাল্টিম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।
comment url